বাংলাদেশ

‘১৪ বছরে দুর্নীতি-পাচারের কিছু অংশ উদ্ধার করলে আইএমএফের লোন দরকার হয় না’

সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী ২৫ জানুয়ারি ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গনতন্ত্র মঞ্চের সমাবেশ। ছবি: এমরান হোসেন/স্টার

সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী ২৫ জানুয়ারি ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ।

আজ সোমবার দুপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, 'আপনারা জানেন, ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় দিন। ৩ মিনিটে সেদিন বাংলাদেশের গণতন্ত্র, বাংলাদেশের সংবাদপত্র, বাংলাদেশের ভোটাধিকার সবকিছু হরণ করে বাকশাল কায়েম করা হয়েছিল।'

তিনি আরও বলেন, 'সেই ২৫ তারিখ ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা, এই অবৈধ সরকারের পদত্যাগ এবং গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা তৈরি, দ্রব্যমূল্য ও মানুষকে বাঁচাবার লক্ষ্যে আমরা গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সকাল ১১টায় এবং জেলায় জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ পালন করবো।'

এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের ধারা আরও শক্তিশালী হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন জেএসডি সাধারণ সম্পাদক।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।

গণতন্ত্র মঞ্চের ৭টি দলের কয়েকশ নেতাকর্মী এই সমাবেশ ও গণমিছিলে অংশ নেন। কর্মীরা 'ভোট চোর সরকার, আর নাই দরকার', 'শেখ হাসিনার সরকার, আর নাই দরকার', 'আগুন জ্বালাও আগুন জ্বালাও, ভোট চোরের আস্তানায়' ইত্যাদি শ্লোগান দেন।

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, 'এ বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আগামী ১০-১৫ বছরের রাজনীতি এই বছর ঠিক হবে। গোটা দেশের দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক সকল মানুষ যুগপৎভাবে রাজপথে দাঁড়িয়ে আজকে। আমি আমার দেশকে রক্ষা করব, গণতান্ত্রিক অধিকারকে রক্ষা করবো, ভোটাধিকারকে প্রতিষ্ঠা করবো।'

তিনি বলেন, 'সেই লড়াই গণতন্ত্র মঞ্চ শেষ পর্যন্ত এগিয়ে নেবে। এই লড়াইয়ে আপনারা সকলে অংশ নেবেন, এই প্রত্যাশা আমরা করি।'

তিনি অভিযোগ করে বলেন, 'দেশটা কোথায় যাবে জানি না? আইএমএফের লোক আপনারা (সরকার) গ্রহণ করছেন। শুধুমাত্র গত ১৪ বছরে যে দুর্নীতি হয়েছে, যে টাকা পাচার হয়েছে, তার কিছু অংশ যদি উদ্ধার করা যায় তাহলে আইএমএফের লোন নেওয়ার দরকার হয় না, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর দরকার হয় না, গ্যাসের দাম বাড়ানোর দরকার হয় না, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করবার প্রয়োজন হয় না।'

তিনি আরও বলেন, 'কিন্তু চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী। সরকার সেই পথে হাঁটছে না। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, এই সরকার বিদায় নেবে, কিন্তু আইএমএফের লোন মানুষের গলায় ফাঁস হিসেবে থেকে যাবে। দেশের জনগণকে এই টাকা পরিশোধ করতে হবে।'

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, 'এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। ১৪ বছরে এই সরকার এতো অপরাধ করেছে, এতো লুট করেছে, ভোটের মুখোমুখি হওয়ার সাহস তাদের নেই।'

তিনি বলেন, 'জামানত হারানোর যুগে প্রবেশ করেছেন। মঞ্চ-টঞ্চ আজকাল ভেঙে পড়ছে। কাজেই ক্ষমতার মসনদটাও খুব দ্রুতই ভেঙে পড়বে। দমন-পীড়ন আর মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা আপনাদেরকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে পারবে না।'

তিনি আরও বলেন, 'উনারা (সরকার) বলেন, অতি বাম, অতি ডান সব নাকি একসঙ্গে হয়েছে। আমরা বলি, প্রধানমন্ত্রী আপনি ভোট চুরি করে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষকে এক কাতারে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। ১৮ কোটি মানুষের মর্যাদা কেড়ে নিয়েছেন। তারা এখন এক কাতারে আছে।'

'ইতোমধ্যে বিএনপি রাজপথে, অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলো রাজপথে। আমরা যুগপৎ আন্দোলনের ধারায় আছি। আমরা অবিলম্বে একটা ন্যুনতম দফা দাবিনামা তৈরি করে এই আন্দোলনকে আরও বৃহত্তর রূপ দেবো এবং গণআন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটিয়ে বাংলাদেশে সত্যিকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করব', যোগ করেন তিনি।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বাংলাদেশ ভাসানী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, মীর মোফাজ্জল হোসেন, হাবিবুর রহমান হাবিব, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, মোমিনুল ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, জেএসডির একেএম জামির প্রমুখ নেতারা বক্তব্য রাখেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সকালে বিক্ষোভ সমাবেশের একই কর্মসূচি পালন করে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য।

বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের (মার্কসবাদী-লেলিনবাদী) সাধারণ সম্পাদক গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের হারুন চৌধুরী, সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক কমরেড আবুল কালাম আজাদ, সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম ও প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের হারুন আল রশিদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

পরে বিক্ষোভ মিছিল করে জোটের নেতাকর্মীরা পুরানো পল্টনে নিজেদের কার্যালয়ে যান।

Comments

The Daily Star  | English
Awami League didn't nominate anyone in 2 seats

Seat-sharing for JS polls: AL keeps its allies hanging

A crucial meeting between the Awami League and its 14-party allies ended last night without any concrete decisions on seat sharing.

11h ago