১টি ভাপা পিঠার দাম ২-৫ হাজার টাকা!

কখনো চা-পান বিক্রেতা, কখনো বা রিকশাচালক। যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসারে চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। অভাব তার নিত্য সঙ্গী। তবে, শীতকাল আসলে সংসারে কিছুটা পরিবর্তন আসে। শীত যেখানে প্রকৃতির রুক্ষতা ছড়ায়, সেখানে তার জীবনে বয়ে আনে উজ্জ্বল ঝলমলে আলো, সোনালী স্বপ্ন, খুলে দেয় সম্ভাবনার দুয়ার।
নরসিংদী সদর উপজেলার সেই পিঠার দোকান। ছবি: সংগৃহীত

কখনো চা-পান বিক্রেতা, কখনো বা রিকশাচালক। যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসারে চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। অভাব তার নিত্য সঙ্গী। তবে, শীতকাল আসলে সংসারে কিছুটা পরিবর্তন আসে। শীত যেখানে প্রকৃতির রুক্ষতা ছড়ায়, সেখানে তার জীবনে বয়ে আনে উজ্জ্বল ঝলমলে আলো, সোনালী স্বপ্ন, খুলে দেয় সম্ভাবনার দুয়ার।

বলছি নরসিংদীর সদর উপজেলার মালেক মিয়ার কথা।

শীতের মৌসুমে মালেক মিয়া চা-পান বিক্রি কিংবা রিকশা চালানো বাদ দিয়ে শুরু করেন ভাপা পিটা বিক্রি। গুণ ও মানের ভিত্তিতে প্রতিটি পিঠা ২০ টাকা থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন তিনি।

নরসিংদীর ভেলানগরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে জেলখানা মোড়ের ফুটওভারব্রিজের নিচেই মালেক মিয়ার দোকান।

সরেজমিনে দেখা যায়, মালেক মিয়া ৩ জন সহযোগীকে নিয়ে ৫টি চুলায় তৈরি করছেন পিঠা। ৫ বছর ধরে তিনি এই কাজ করছেন। মালেক মিয়ার দোকানের চারপাশে ক্রেতাদের ভিড়। স্থানীয়দের পাশাপাশি অন্য জেলার লোকজনও দেখা গেছে। যারা অধীর আগ্রহ নিয়ে পিঠা খাওয়ার জন্য বসে আছেন।

নরসিংদী সরকারী কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মো. শরীফ আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, অনেক দোকানদার শহরের মধ্যেই গ্রামীণ পিঠার আমেজ দিচ্ছেন। আমি মালেক মিয়ার পিঠা খেয়েছি যেটা এক কথায় অনন্য। তার পিঠার ভালো গুন হচ্ছে, আতপ চালের সঙ্গে অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে একটি রসায়ন তৈরি করেন। যা ভোজন রসিকদের মাতিয়ে তোলে।

এই দোকানে বানানো পিঠার দাম ২০ টাকা থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। ছবির পিঠাটির দাম ১ হাজার টাকা। ছবি: সংগৃহীত

মালেক মিয়া ডেইলি স্টার কে জানান, আতপ চালের গুঁড়া, খেজুরের গুড় ও নারিকেলের পাশাপাশি সুগন্ধি পোলাও চালের গুঁড়া, কিশমিশ, খেজুর, পেস্তাবাদাম, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, মোরব্বা, মাওয়া, মালাই, দুধের সরসহ নানা উপকরণ তিনি ব্যবহার করেন ভাপা পিঠায়। পিঠার দাম যত বেশি হয়, তাতে উপকরণের পরিমাণ ও বৈচিত্র্যও বাড়ে। ২ হাজার টাকা দামের একটি পিঠার ওজন সব মিলিয়ে হয় প্রায় ৩-৪ কেজি।

নরসিংদী আলোকবালী থেকে পিঠা খেতে আসা জামান সরকার বলেন, 'মালেক মিয়ার পিঠার খবর বন্ধুদের কাছে থেকে শুনে খেতে এসেছি। যা খেয়েছি, খুব ভালো লাগলো। পরিবারের জন্যও নিয়েছি।'

সিলেট থেকে আসা সৈয়দ সাইফুর রহমান সাদী বলেন, শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে এসেছিলাম। মালেক মিয়ার পিঠার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, তিনি অনেক ভালো পিঠা তৈরি করেন। তাই খেতে আসলাম এবং কিছু পিঠা শ্বশুর বাড়িতেও নিয়ে যাবো।

স্থানীয় শফিক ট্রেইলার্স অ্যান্ড ফেব্রিকের মালিক ফাহিম আহমেদ বলেন 'প্রতি শীতেই মালেক মিয়ার সুস্বাদু ভাপা পিঠা খেতে আসি। আজও এসেছি। ক্রেতাদের অনেক ভিড়। অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। ২০০ টাকার একটি পিঠা বাসায় নেওয়ার জন্য অর্ডার করেছি।'

মালেক মিয়া বলেন, 'ছোট-বড় সব ধরনের পিঠার বিক্রিই ভালো। বড় পিঠা হলে তো ১৫ থেকে ২০ জন মিলেও খাওয়া যায়। তাই অনেক মানুষ বাড়িতে পিঠা নেওয়ার জন্য আসে। বিকাল ৫টা থেকে শুরু করি। রাত ১০টার মধ্যে বিক্রি শেষ হয়ে যায়।'

তিনি বলেন, '১ হাজার টাকা দামের পিঠার কথা সবাই জানেন। প্রতিদিনই কয়েকটি বিক্রি হয়। এ বছর ৫ হাজার টাকা দামের ২টি পিঠাও বিক্রি করেছি। একদিন আগে অর্ডার করলেই ৫ হাজার টাকার পিঠা তৈরি হয়ে যাবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Deeper crisis feared as 219 factories shut

With 219 garment factories shut in Ashulia yesterday amid worker unrest along the industrial belts, Bangladesh’s apparel sector is feared to get into a deeper crisis if production does not resume on Saturday after the weekend.  

4h ago