ঢাকায় আর্জেন্টিনার দূতাবাস: কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক তাৎপর্য কী

ঢাকায় আর্জেন্টিনার দূতাবাস: কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক তাৎপর্য কী
গতকাল সোমবার রাজধানীর বনানীতে ফিতা কেটে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় আর্জেন্টিনার দূতাবাস। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকায় ৪৫ বছর পর আবারো চালু হয়েছে আর্জেন্টিনার দূতাবাস। গতকাল সোমবার রাজধানীর বনানীতে আর্জেন্টিনা দূতাবাসের উদ্বোধন করা হয়। অর্থনীতিবিদ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই দূতাবাস চালুর মধ্য দিয়ে ২ দেশই অর্থনৈতিক দিক থেকে লাভবান হবে।

তারা বলছেন, ল্যাটিন আমেরিকায় বাংলাদেশ এখন বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করতে পারবে, আবার সেখান থেকে সুবিধা মতো পণ্য আমদানি করতে পারবে এবং বাড়বে সংস্কৃতির আদান-প্রদান।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর আজ মঙ্গলবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঢাকায় আর্জেন্টিনার দূতাবাস স্থাপনের বিষয়টি বাংলাদেশের দিক থেকে দেখতে গেলে, আমাদের উদ্দেশ্য রপ্তানি বাণিজ্যের বিস্তার ঘটানো। আমরা মূলত ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা কেন্দ্রিক। দক্ষিণ আমেরিকায় আমাদের তেমন উপস্থিতি নেই, রপ্তানি করতে পারি না। এসব দেশে যেতে চাইলে ভিসা পেতেও বেশ অসুবিধা হয়। আর্জেন্টিনা দূতাবাস খোলার একটি অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ আছে। এ ছাড়া, যেসব বাংলাদেশি আর্জেন্টিনায় থাকেন, তাদের আসা-যাওয়ায় সুবিধা হবে। সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে, অর্থনৈতিক বিস্তৃতির জন্য ২ দেশই এই সম্পর্কটা চেয়েছে।'

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, 'আর্জেন্টিনা থেকে আমরা গম, সয়াবিন তেল, গরুর মাংস আমদানি করতে পারি। তাছাড়া, বাংলাদেশের বাজার এখন অনেক বড়। অনেক দেশ এখানে দূতাবাস খুলবে, এটা আমরা আশা করতেই পারি। ২ দেশের সম্পর্ক মূলত অর্থনৈতিক। কূটনৈতিক বিষয়টি সেকেন্ডারি। অর্থনৈতিক সম্পর্ককে সাহায্য করার জন্য যতটুকু প্রয়োজন, কূটনৈতিক সম্পর্ক সেটাই করবে। এখানে অন্য কোনো বিষয় তেমন নেই।'

'ল্যাটিন আমেরিকাও কিন্তু একটি বড় বাজার। সেখানে পোশাকের বাজারে আমাদের উপস্থিতি কম। এখন পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে। আর্জেন্টিনার অর্থনৈতিক অবস্থা অনেকটা ভঙ্গুর হলেও তাদের একটা বড় বাজার আছে। সেটিকে অবজ্ঞা করার কোনো সুযোগ নেই। আমরা আর্জেন্টিনা থেকে আমদানি করতে পারবো, আবার রপ্তানিও করতে পারবো। এটাই মূলত সম্পর্ক স্থাপনের জন্য সবচেয়ে বড় জায়গা,' আহসান এইচ মনসুর যোগ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. আমেনা মহসিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের যত বেশি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক থাকবে, ততবেশি সুবিধা বাড়বে। ফুটবলের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার একটি বড় আবেদন আছে। দূতাবাস স্থাপনের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের সাংস্কৃতিক ও খেলাধুলার আদান-প্রদান বিষয়গুলোর একটি বড় জায়গা হবে।'

এই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক বলেন, 'অর্থনৈতিক বিষয়টি বললে, আমরা এখন বিভিন্ন দেশে নতুন বাজার খুঁজছি। আর্জেন্টিনায় শুধু পোশাক নয়, অন্যান্য পণ্যও রপ্তানি করা যাবে। আর্জেন্টিনার কাছ থেকেও অনেক কিছু নেওয়ার আছে। ২ দেশের সম্পর্কটি একটি নির্দিষ্ট জায়গায় না দেখে বহুমাত্রিকতার দিক থেকে দেখলে ভালো হয়। আমরা শুধু লাভবান হবো, এ কারণে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করি না। কোনো দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের বহুমাত্রিক উদ্দেশ্য থাকে। আমরা বিভিন্ন দিক থেকে অনেক উন্নয়ন করেছি। সেই বিষয়গুলো কীভাবে করলাম, এই জায়গায় হয়তো আর্জেন্টিনার আগ্রহ থাকতে পারে। এগুলো থেকে আর্জেন্টিনার অনেক কিছু নেওয়ার থাকতে পারে।'

এর আগে দূতাবাস উদ্বোধনকালে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, 'এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও আনন্দের মুহূর্ত। এটি শুধু একটি কূটনৈতিক বিষয় নয়, এটি আবেগপূর্ণ মুহূর্ত।'

আর্জেন্টিনার সামরিক সরকার ১৯৭৮ সালে ঢাকার দূতাবাস বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির কূটনৈতিক কার্যক্রম ও ভিসা সংক্রান্ত কার্যক্রম ভারতে দেশটির দূতাবাস থেকে পরিচালিত হচ্ছে।

Comments

The Daily Star  | English

Private investment sinks to five-year low

Private investment as a percentage of the gross domestic product has slumped to its lowest level in five years, stoking fears over waning business confidence and a slowdown in job creation.

10h ago