হামলার বিচার-ক্ষতিপূরণ চায় পঞ্চগড়ের আহমদিয়া সম্প্রদায়

পঞ্চগড়ের আহম্মদনগরে গতকাল শুক্রবার থেকে আহমেদিয়া সম্প্রদায়ের ৩ দিনব্যাপী সালানা জলসার পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি বাতিলের দাবিতে ইসলামী আন্দোলনসহ বেশ কয়েকটি সমমনা ধর্মীয় সংগঠনের নেতাকর্মীরা জুম্মার নামাজের পর শহরে বের করা বিক্ষোভ মিছিলে বাধা দেওয়ায় পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।    
হামলার বিচার-ক্ষতিপূরণ চায় পঞ্চগড়ের আহমদিয়া সম্প্রদায়
অশীতিপর শহীদ আহমদের সারাজীবনে তিল তিল করে গড়ে তোলা সংসার, পাকা ঘরবাড়ি পুড়ে সব শেষ হয়ে গেছে। ছবি: স্টার

পঞ্চগড়ের আহম্মদ নগরে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে আহম্মদ নগর ও শালশেরীতে বসবাসরত এই সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ও হতাশা বিরাজ করছে।

আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসার মিডিয়াসেলে কর্মরত ও আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সদস্য মাহমুদ আহমাদ সুমন আজ সকালে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রায় একশত বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেছে আক্রমণকারীরা। এতে পরিবারগুলো নিঃস্ব, দিশেহারা হয়ে গেছে।'

সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, গতকালের অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া ঘরের সামনে বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছেন অশীতিপর শহীদ আহমদ। সারাজীবনে তিল তিল করে গড়ে তোলা সংসার, পাকা ঘরবাড়ি পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। শেষ বয়সে এসে এমন ঘটনা কল্পনাতেও ছিল না তার।  

গতকালের ঘটনায় কথা বলতে চাইলে শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে ছিলেন। তার মেয়ে আঁখি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, 'আমার বাবার সারা জীবনের তিল তিল করে গড়ে তোলা সংসার মুহূর্তেই তছনছ করে দিল উচ্ছৃঙ্খল কিছু মানুষ। আমরা সে সময় জলসায় ছিলাম বলে বেঁচে গেছি, তা না হলে আমাদেরও মেরে ফেলত।'

ছবি: স্টার

তানজিলা আক্তার (৩২) জানান, তাদের ৩টি ঘরসহ আয়ের একমাত্র অবলম্বন মুদি দোকানটি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন তারা পুরোপুরি নিঃস্ব।

নুসরাত জাহান কাকলি (৩২) ছেলেকে নিয়ে জলসায় ছিলেন। আক্রমণের সময় তার ১৬ বছর বয়সী মেয়ে বাড়িতে ছিল। আক্রমণ করা হচ্ছে দেখে দূরে এক বাড়িতে পালিয়ে প্রাণে বেঁচে যান। তাদেরও সহায়সম্বল সবকিছু শেষ হয়ে গেছে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায়।

জান্নাতুল ফেরদৌস লাবণী (৩৪) জানান, তাদেরও বাড়ি-ঘরের কিছুই রক্ষা পায়নি। এখন কি করে চলবে তা জানেন না। 

এমন আহাজারি ক্ষতিগ্রস্থ সব পরিবারের সদস্যদের।

জাহাঙ্গীর আলম (৪৫) নামে একজন বলেন, 'বাড়ি ঘর তো সব পুড়েছে। এখন স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকতে পারব কি না এই নিশ্চয়তাও তো নেই। আমরা চাই আক্রমণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা। আমাদের ক্ষতিপূরণসহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।'

পঞ্চগড়ের আহম্মদনগরে গতকাল শুক্রবার থেকে আহমেদিয়া সম্প্রদায়ের ৩ দিনব্যাপী সালানা জলসার পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি বাতিলের দাবিতে ইসলামী আন্দোলনসহ বেশ কয়েকটি সমমনা ধর্মীয় সংগঠনের নেতাকর্মীরা জুম্মার নামাজের পর শহরে বের করা বিক্ষোভ মিছিলে বাধা দেওয়ায় পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।    

ছবি: স্টার

এতে ২ জন মারা যান এবং ৭ পুলিশ সদস্যসহ প্রায় ৩০ জন আহত হন।

সংঘর্ষের এক পর্যায়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষদের বসতি আহম্মদ নগরে বিক্ষোভকারীরা আক্রমণ চালায় এবং অর্ধশত বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালায়।

পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা সকালে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখনো সেখানে উত্তেজনা বিরাজ করছে।'

পরিস্থিতি যাতে অবনতি না ঘটে সেজন্য শহরে এবং এর আশেপাশের এলাকায় ৪০০ পুলিশ, ৭ প্লাটুন বিজিবি ও ৫টি র‍্যাবের টহল দল মোতায়েন করা হয়েছে।
  

 

Comments

The Daily Star  | English
Rana Plaza Tragedy: Trade union scenario in garment sector of Bangladesh

Trade unions surge, but workers' rights still unprotected

The number of trade unions in the garment sector of Bangladesh has surged since the Rana Plaza building collapse though most of them are failing to live up to expectations when it comes to protecting workers’ rights.

4h ago