বাহা পরবে মাতল গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালপল্লী

গোবিন্দগঞ্জের আদমপুর গ্রামে সাঁওতালপল্লিতে বাহা পরব উপলক্ষে নৃত্য পরিবেশন করছেন সাঁওতাল নারীরা। ছবি: স্টার

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে নেচে-গেয়ে বাহা পরব পালন করলেন সাওঁতালরা। মাথায় ফুল গুঁজে সাঁওতাল পল্লীর নারী-পুরুষরা বরণ করলেন ঋতুরাজ বসন্তকে।

এবারের বাহা উৎসবের স্লোগান ছিল, 'সাঁওতালদের ভাষা-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য রক্ষায় চাই রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক উদ্যোগ'। সাঁওতালি ভাষায় বাহা শব্দের অর্থ ফুল।

আজ শনিবার দুপুরে গোবিন্দগঞ্জের কাটাবাড়ী ইউনিয়নের আদমপুর গ্রামে সাঁওতাল প্রাইমারী স্কুল মাঠে বাহা পরব অনুষ্ঠিত হয়। এতে গাইবান্ধা ও আশপাশের জেলা থেকে আসা সাঁওতাল সম্প্রদায়ের লোকজন অংশ নেন। ব্রিটিশ হাইকমিশন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও আইইডি সহযোগিতায় এই উৎসব আয়োজন করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা 'অবলম্বন' ও 'জনউদ্যোগ'।

বাহা পরব সাঁওতালদের দ্বিতীয় প্রধান উৎসব। সান্তালি নববর্ষ বা বসন্ত ঋতুকে বরণ করার জন্য এই উৎসব পালন করা হয়।

গোবিন্দগঞ্জের আদমপুর গ্রামে সাঁওতালপল্লিতে বাহা পরব উপলক্ষে নৃত্য পরিবেশন করছেন সাঁওতাল নারীরা। ছবি: স্টার

ঐতিহ্যগতভাবে সাঁওতাল নারীরা প্রকৃতি থেকে ফুল সংগ্রহ করে সাজতে ভালোবাসেন। বাহা উৎসব পালন না করা পর্যন্ত সাঁওতাল নারীরা নতুন ফুল খোঁপায় গোঁজেন না। মারঙ বুরু এবং জাহের এঁরা দেবতাকে প্রথমে ফুল উৎসর্গ করে ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও গয়না পরে নাচ-গান করেন সাঁওতাল নারীরা।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রয়োজনে সাঁওতালসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ভাষা-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য সংরক্ষণে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক উদ্যোগ নিতে হবে। তাদের ঐতিহ্য এ দেশের সংস্কৃতিরই অংশ। সাঁওতালসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর তাদের নিজস্ব ভাষায় শিক্ষাদানসহ সাংস্কৃতিক একাডেমি স্থাপন করার দাবি জানান তারা।

অনুষ্ঠানে অংশ নেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোহাম্মদ জাহেদ হাসান, পরিবেশ আন্দোলন-গাইবান্ধার সভাপতি ওয়াজিউর রহমান রাফেল, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক অধ্যাপক জহুরুল কাইয়ুম, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু, অবলম্বনের নির্বাহী পরিচালক প্রবীর চক্রবর্তী, রিপোর্টাস ইউনিটির সহসভাপতি গোলাম রব্বানী মুসা, সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক জাহাঙ্গীর কবীর তনু, মানবাধিকার কর্মী অঞ্জলী রানী দেবী, আদিবাসী নেত্রী প্রিসিলা মুরমু, সুচিত্রা মর্মু তৃষ্ণা, জাকব টুডু, থমাস হেমব্রম, মনির হোসেন সুইট প্রমুখ।

জাহেদ হাসান বলেন, আমরা বিদেশে বাংলাদেশকে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের দেশ হিসেবে উপস্থাপন করি। কিন্তু নিজেদের সংস্কৃতি ও ভাষা রক্ষায় সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতিগোষ্ঠীর লোকজন যে সুযোগ-সুবিধা পায় তা অন্যান্য জনগোষ্ঠীর সদস্যরা পায় না। তাদের ভাষা-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারি এবং বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে। আজকের এই বাহা উৎসবের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরার সুযোগ হয়েছে।'

অনুষ্ঠানের সভাপতি এবং সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্মের ভূমি উদ্ধার-সংগ্রাম-কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে বলেন, প্রাণ-প্রকৃতিকে ভালোবেসে সাঁওতাল জনগোষ্ঠী বাহা উৎসব পালন করে। এই উৎসবে পূজা-পার্বণ করলে আমাদের সমাজ ও পরিবারের উন্নয়ন হবে। বাহা পূজা না করা পর্যন্ত সাঁওতাল নারীরা ফুল ছিঁড়েও না, মাথাতেও পরে না। এই উৎসব ভবিষ্যতে যেন হারিয়ে না যায়, নতুন প্রজন্মকে সেই বার্তা দিতেই এই উৎসব আয়োজন করা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

No clear roadmap for investment

The budget for FY26 has drawn strong criticism from business leaders who say it lacks a clear roadmap for improving the investment climate, bolstering industrial competitiveness, and implementing overdue reforms in the banking sector.

15h ago