ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক: পাকুল্লায় প্রতিশ্রুত পদচারী সেতু আজও হলো না

এবারের ঈদযাত্রাতেও একই জায়গায় একই ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। পাশাপাশি পদচারী সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি না পূরণ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
পাকুল্লা বাজার ও আশপাশের এলাকার পথচারীরা এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হন। ছবি: মির্জা শাকিল/স্টার

গত বছর ঈদুল আজহার ছুটিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাকুল্লা বাজার এলাকায় রাস্তা পার হতে গিয়ে এক নারী তার ২ শিশুসন্তানসহ নিহত হওয়ার পর বিক্ষোভের মুখে জায়গাটিতে একটি পদচারী সেতু নির্মাণের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসন ও সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা, তা আজও পূরণ হয়নি।

এ অবস্থায় এবারের ঈদযাত্রাতেও একই জায়গায় একই ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। পাশাপাশি পদচারী সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি না পূরণ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।

উত্তরের ২০টি জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ উন্নত করার জন্য ইতোমধ্যে ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কটি ৪ লেনে উন্নীত করা হয়েছে। এটি এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক, সার্ক হাইওয়ে করিডোর এবং দক্ষিণ এশিয়া উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা (সাসেক) সড়ক সংযোগ উদ্যোগের একটি অংশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পের শুরু থেকেই দুর্ঘটনা রোধে পাকুল্লা বাজারে একটি আন্ডারপাস নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন স্থানীয়রা। কিন্তু আন্ডারপাসটি নির্মিত হয় কাছের জামুর্কি এলাকায়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে পাকুল্লা বাজারের ব্যবসায়ী, পরিবহন শ্রমিক এবং ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশের সদস্যদের ভাষ্য, গত কয়েক বছরে পাকুল্লা বাজার ও আশপাশের এলাকায় সড়ক পার হতে গিয়ে অনেকগুলো দুর্ঘটনায় বহু প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছেন অনেকজন। উদাহরণ হিসেবে তারা গত বছর ঈদুল আজহার ছুটিতে ২ সন্তানসহ এক নারী নিহত হওয়ার ঘটনার কথা বলেন।

তাদের কাছ থেকে জানা যায়, ওই দুর্ঘটনার পর স্থানীয়রা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এতে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। দুর্ভোগে পড়েন হাজার হাজার যাত্রী।

খবর পেয়ে টাঙ্গাইলের তৎকালীন জেলা প্রশাসক (ডিসি) আতাউল গণি, বর্তমান পুলিশ সুপার (এসপি) সরকার মোহাম্মদ কায়সার ও সড়ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। তারা বিক্ষোভকারীদের অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানান। তবে বিক্ষোভকারীরা পাকুল্লা বাজারে একটি আন্ডারপাস নির্মাণের দাবি পূরণ না হওয়ার কথা জানিয়ে অবরোধ চালিয়ে যেতে থাকেন।

পরে ডিসি-এসপির উপস্থিতিতে সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা পাকুল্লা বাজারে ১ মাসের মধ্যে প্রাথমিকভাবে একটি পদচারী সেতু নির্মাণ ও পরবর্তীতে আন্ডারপাস নির্মাণের বিষয়টি বিবেচনা করার প্রতিশ্রুতি দিলে বিক্ষোভকারীরা অবরোধ তুলে নেন।

টাঙ্গাইল ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেনের মতে, মহাসড়কের পাকুল্লা বাজার জায়গাটি একটি দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থান। এখানে ২টি আঞ্চলিক সড়ক এসে মিলিত হওয়ার কারণে প্রচুর জনসমাগম ঘটে। রাস্তা পার হওয়ার ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও থাকে বেশি।

ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী একটি বাসের চালক সুমন মিয়া বলেন, 'পাকুল্লা বাজার পার হওয়ার সময় খুব সাবধানে গাড়ি চালাতে হয়। কারণ সবসময় জায়গাটি দিয়ে লোকজন পার হয়।'

পাকুল্লা বাজার সমিতির সভাপতি চাঁন চৌধুরী ভাষ্য, 'এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় বাজার পাকুল্লা। এখানে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। মহাসড়কটি ৪ লেনে উন্নীত করার সময় আমরা এখানে একটি আন্ডারপাস নির্মাণের দাবি তুলেছিলাম। কিন্তু আমাদের সেই দাবি পূরণ করা হয়নি। পরে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা রাখা হয়নি।'

টাঙ্গাইলের সহকারি পুলিশ সুপার (মির্জাপুর সার্কেল) এস এম মনসুর মুছা পাকুল্লায় অফিস করেন। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি জানান, পাকুল্লা বাজার এলাকাটি দুর্ঘটনাপ্রবণ হওয়ায়  আপতত সেখানে ৩ জন করে পুলিশ সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে। জায়গাটিতে পদচারী সেতু নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মাপজোক করে গেছে।

জানতে চাইলে টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আলিউল হোসেন বলেন, 'পাকুল্লা বাজারে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। তবে শ্রমিক সংকটের কারণে ঈদের আগে কাজটি করা সম্ভব হচ্ছে না।'

Comments