নারীদের জন্য আরও গণপরিবহন যে কারণে প্রয়োজন

যাতায়াতের জন্য প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা আমি আলাদা করে রাখি। কারণ, সীমিত টাকায় আমাকে মাস পার করতে হয়। আরামদায়ক হলেও রিকশায় চলাচল করা সম্ভব হয় না। কারণ, প্রতিদিন রিকশায় বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করার মতো টাকা আমার নেই। স্বাভাবিকভাবেই আমার যাতায়াতের মাধ্যম বাস। কারণ, এটি তুলনামূলক সুবিধাজনক এবং এর খরচ কম।
ঢাকার পাবলিক বাসে চলাচল করে আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এই শহরে বেশিরভাগ বাস কীভাবে চলে, সে সম্পর্কে ধারণা হয়ে গেছে। বেসরকারি বাসগুলো যাত্রীর আরামের চেয়ে তাদের লাভকে অগ্রাধিকার দেয়। তাদের বাস ভর্তি হয়ে গেলেও আরও যাত্রী তুলতেই থাকে। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপের সঙ্গে গরম আর যানজট—ফলাফল, বাসের যাত্রীরা ঘেমে-নেয়ে একাকার।
বাসে দাঁড়ানো, বিশেষ করে পুরুষ যাত্রীদের সঙ্গে, একটি ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। সবসময় দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় যে কেউ খারাপভাবে স্পর্শ করবে কি না বা বিরক্ত করবে কি না। কোনো পুরুষের পাশের সিটে বসলেও উদ্বেগ কমে না। কারণ, যাত্রীদের মধ্যে এমন মানুষও থাকেন, যাদের দৃষ্টি অস্বস্তি তৈরি করে। শুধু তাই নয়, সন্ধ্যার পর নিরাপত্তা নিয়েও দুশ্চিন্তা থেকেই যায়। যাদের অফিস শেষ করে বাসায় ফিরতে দেরি হয়, তাদের জন্য এ এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। অনেকের পক্ষে রাত হয়ে গেলেও সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা রিকশা নিয়ে বাড়ি ফেরার সামর্থ্য থাকে না।
নারী বাস যাত্রীদের সমস্যার এখানেই শেষ নয়। বাসে নারীদের জন্য সংরক্ষিত সিটে প্রায়শই পুরুষরা বসে যান। সিট ছাড়তে বলা হলেও তারা সেগুলো ছাড়তে চান না। তারা কোনো যুক্তিই মানতে নারাজ। ফলাফল, নারীদের এভাবেই দাঁড়িয়ে চলাচল করতে হয়, আর তা না হলে ব্যয়বহুল পরিবহন বেছে নিতে হয়।
গণপরিবহনে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের কাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সরকার নারীদের জন্য আলাদা বাস সেবা বাড়াতে পারে, যাতে নারীরা হয়রানি, লাঞ্ছনা বা অন্য কোনো ধরণের নির্যাতনের মুখে না পড়েন এবং অনিরাপদ বোধ না করেন।
নারীদের জন্য আলাদা বাস পরিষেবা চালু করা হলে তা নারীদের আরও আত্মবিশ্বাসী করবে এবং নারী ক্ষমতায়ন ত্বরান্বিত করবে। এটি নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগগুলোর মধ্যে একটি হতে পারে।
২০১৪ সালে সরকারি মালিকানাধীন বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশন (বিআরটিসি) ৭টি ডাবল ডেকারসহ মোট ১৭টি বাস চালু করে নারীদের জন্য, যেখানে কন্ডাক্টর নারী। এই বাসগুলো সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ঢাকার ১৩টি রুটে চলাচল করে। এ ছাড়া, সাভার, গাজীপুর ও চট্টগ্রামেও এই সেবা শুরু হয়েছে।
যে পরিমাণ বাস শুধুমাত্র নারীদের পরিবহনে চালু করা হয়েছে, তা পর্যাপ্ত নয়। সেইসঙ্গে যাত্রীদের অভিযোগ, বাসগুলো সময়মতো আসে না। এমনকি, পুরুষরাও মাঝে মাঝে এসব বাসে উঠে পড়েন। প্রাথমিক উদ্দেশ্য প্রশংসনীয় হলেও শুধুমাত্র নারীদের জন্য এই সেবা নিশ্চিত করার জন্য নিবিড় পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন এবং বাস সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন।
আজরা হুমায়রা; [email protected]
অনুবাদ করেছেন জান্নাতুল ফেরদৌস
Comments