গুমের ঘটনা তদন্তে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের আহ্বান

আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ সপ্তাহ পালন উপলক্ষে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একটি মানববন্ধন কর্মসূচি আয়োজন করে বাংলাদেশে গুমের শিকারদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’।
আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ সপ্তাহ পালন উপলক্ষে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একটি মানববন্ধন কর্মসূচি আয়োজন করে বাংলাদেশে গুমের শিকারদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’। ছবি: মুনতাকিম সাদ/স্টার

গুমের ঘটনা তদন্ত ও দায়ীদের বিচারে সরকারকে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়েছে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজন ও মানবাধিকার কর্মীরা।

আজ শনিবার আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ সপ্তাহ পালন উপলক্ষে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একটি মানববন্ধন কর্মসূচি আয়োজন করে বাংলাদেশে গুমের শিকারদের স্বজনদের সংগঠন 'মায়ের ডাক'।

সমাবেশে মানবাধিকার কর্মীরা জানান, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এবং এর ৭ কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর দেশে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে বলপূর্বক গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অনেক ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে সেটিও এক্ষেত্রে কার্যকর হবে বলে আশা করছেন তারা।

বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক মো. নূর খান বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির কারণে পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে পারে।'

তিনি গুমের ঘটনায় জড়িত সংস্থা, কর্মকর্তা ও ব্যক্তিদের চিহ্নিত এবং তাদের কাজের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সরকারের কাছে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের দাবি জানান।

নূর খান বলেন, 'রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ বলছে যে এত গুমের ঘটনা নেই, অনেকেই স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে চলে গেছেন। যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেন তাদের কাছ থেকে এই ধরনের বিবৃতি, গুমের ঘটনায় জড়িতদের দায়মুক্তি দেয় এবং ন্যায়বিচার হুমকির মুখে ফেলে।'

তিনি জানান, প্রায় ৬০০ জন গুমের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে মাত্র ৩০০ জন ফিরে এসেছেন।

'আমরা নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে সতর্ক করতে চাই। অবিলম্বে নির্যাতিতদের মুক্তি দিন। তা না হলে বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ এবং দায়ী ব্যক্তিদের মারাত্মক পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে,' বলেন তিনি। 

'ফ‍্যাসিস্ট সরকার হিসেবে বিশ্বের কাছে বর্তমান সরকারের বদনাম হয়ে গেছে' দাবি করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, 'আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো নিখোঁজ ব্যক্তিদের তথ্য চেয়ে সরকারের কাছে একটি তালিকা দিয়েছে। এরপর থেকে সরকার র‌্যাবকে এ ধরনের কর্মকাণ্ড করতে নিষেধ করেছিল। তারপরও কিছু ঘটনা ঘটে চলছে।'

নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের ছোটবোন ও 'মায়ের ডাক' সংগঠনের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম জানান, গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবার থানায় সাধারণ ডায়েরি, মামলা ও অভিযোগ করেছে কিন্তু আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং সরকার থেকে কোনো সহায়তা পায়নি। তাই তারা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে সাহায্য চেয়েছে।

'আমার ভাইদের যেখানে রাখা হয়েছে সেই গোপন ডিটেনশন সেলের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা, আপনার শুনে রাখুন, আমরা আপনাদের চিনি। কাউকে রেহাই দেওয়া হবে না,' হুঁশিয়ারি করেন তিনি।

মানববন্ধনে ১০ বছর বয়সী সাফা কান্নার্ত কণ্ঠে জানায়, 'আমার বাবা কিছু ভুল করেননি। আমি জানি না তিনি এখন কোথায় আছেন। আমি শুধু আমার বাবাকে ফিরে পেতে চাই।'

সাফার বাবা বংশালের ছাত্রদল নেতা মাহফুজুর রহমান সোহেলকে ২০১৩ সালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে।

 

Comments