নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও কক্সবাজারে যেভাবে চলছে মাছ ধরা

কক্সবাজার
কক্সবাজারে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও চলছে মাছ ধরা। ছবি: মোকাম্মেল শুভ/স্টার

কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে নাজিরারটেক সমুদ্র সৈকত। স্থানটি শুটকিপল্লী নামে পরিচিত।

নাজিরারটেকের অপর পাড়ে মহেশখালী দ্বীপ। মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া মহেশখালী চ্যানেল মিশেছে বঙ্গোপসাগরে।

মূলত নাজিরারটেক থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত শুরু হয়ে শেষ হয়েছে টেকনাফের শাহ পরীর দ্বীপে।

গত রোববার নাজিরারটেক সমুদ্র সৈকতে গিয়ে দেখা যায় মহেশখালী চ্যানেলের মুখে অসংখ্য জাল পাতা। সেখানে একটি মাছ ধরার ট্রলার।

স্থানীয়রা জানান, ট্রলারটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। তারা জাল কেটে দিয়ে মাছ অবমুক্ত করে দিচ্ছেন। কিন্তু জাল জব্দ করা হচ্ছে না।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, যারা জাল পেতেছে তাদের ধরতে পারলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেন। টাকা না দিলে মারধরের শিকার হতে পারে।

তারা আরও জানান, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চলে গেলে যারা জাল পেতেছেন, তারা আবার ফিরে আসবেন, আবার শুরু করবেন অবৈধ মৎস্য শিকার।

মহেশখালী চ্যানেলের মুখে যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জালকাটা অভিযান চলছিল, তখনই সমুদ্রে সোনাদিয়ার দ্বীপের পাশে দূর থেকে দেখা যাচ্ছিল অসংখ্য নৌকা।

স্থানীয়রা জানান, অভিযানের কারণে নৌকাগুলো কিছুটা দূরে গিয়ে মাছ শিকার করছে। বিকেল হলেই তারা নাজিরহাটের সৈকতে এসে মাছ বিক্রি করবেন।

সমুদ্রে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলমান থাকলেও, কক্সবাজার সংলগ্ন সমুদ্রের বিভিন্ন স্থানে এভাবেই চলছে অবৈধ মৎস্য শিকার।

কক্সবাজার ফিশিং বোট ওনারস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলমান থাকলেও কক্সবাজার সদর, মহেশখালী উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন উপকূল সংলগ্ন সমুদ্রে অবাধে মাছ শিকার চলছে।

মৎস্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের আর্থিক সুবিধা দিয়ে এসব অবৈধ কাজ চলছে বলে দাবি করেন তিনি।

দেলোয়ার হোসেন বলেন, 'মাছ ধরার সময় অত্যন্ত ঘন ছিদ্রবিশিষ্ট পোনা ধরার জাল ব্যবহার করায় দেশের সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'ডিম ফুটে পোনা বের হওয়ার পর সেই পোনা কিছুটা বড় হওয়া পর্যন্ত উপকূলের আশেপাশে সমুদ্রে থাকে। পোনা ধরার জাল দিয়ে প্রতিনিয়ত মাছ ধরা হচ্ছে।'

গত বৃহস্পতিবার কোস্টগার্ড, উপজেলা প্রশাসন এবং উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি উখিয়ার সমুদ্র সৈকতে মাছ ধরার অভিযোগে বিপুল পরিমাণ কারেন্ট জাল জব্দ করে পুড়িয়ে দেয়।

কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ডেইলি স্টারকে জানান, এ পর্যন্ত ১৭টি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ২২৩টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এসব অভিযানে ১ হাজার ৩১১টি জাল জব্দ করা হয়েছে।

তাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে উল্লেখ করে এই মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, 'কক্সবাজার সদর থেকে টেকনাফ পর্যন্ত প্রায় ৯০ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকত পাহারা দেওয়া কিছুটা হলেও দুরূহ। মাছ ধরার ছোট নৌকায় জেলেরা সমুদ্রে নেমে পড়ছেন। তবে মাছ ধরার বড় নৌকাগুলোর সাগরে যাওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ আছে।'

Comments

The Daily Star  | English
National election

Political parties must support the election drive

The election in February 2026 is among the most important challenges that we are going to face.

11h ago