ঈদের আগেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দি সবার মুক্তি দাবি

তারা সকল ক্ষতিগ্রস্থের জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, মিথ্যা মামলাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি এবং সরকারের এমন নিপীড়নমূলক আইন বানানোর একচ্ছত্র ক্ষমতার জবাবদিহিতা নিশ্চিতেরও দাবি জানান।
ডিএসএ ভিক্টিমস নেটওয়ার্কের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত

ঈদের আগেই খাদিজা, ইছমাইল, তারিকুলসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দি সকলের নিঃশর্ত মুক্তি এবং অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সকল নিপীড়নমূলক আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছে ডিএসএ ভিক্টিমস নেটওয়ার্ক।

তারা সকল ক্ষতিগ্রস্থের জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, মিথ্যা মামলাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি এবং সরকারের এমন নিপীড়নমূলক আইন বানানোর একচ্ছত্র ক্ষমতার জবাবদিহিতা নিশ্চিতেরও দাবি জানান।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আজ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ডিএসএ ভিক্টিমস নেটওয়ার্কের পক্ষে এর সদস্য সচিব প্রীতম দাশ লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।

অনুষ্ঠানে নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক গোলাম মাহফুজ জোয়ার্দার, সফটওয়্যার প্রকৌশলী দিদারুল আলম ভূঁইয়াসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কয়েকজন ভুক্তভোগী বক্তব্য রাখেন।

লিখিত বক্তব্যে প্রীতম দাশ বলেন, 'দেশের নাগরিকদের ডিজিটাল মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিতের তথাকথিত অজুহাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ তৈরি করা হয়। কিন্তু, দীর্ঘ ৫ বছর যাবৎ আমরা দেখতে পাচ্ছি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কোনো ধরনের নিরাপত্তা বিধান করছে না। বরং এই আইনের মাধ্যমে বিরুদ্ধ মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে মারাত্মকভাবে খর্ব করা হচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'এই আইন হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারের লুটপাট, পাচার ও জুলুমের নিরাপত্তার বর্ম। রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, শিক্ষার্থীসহ সাধারণ নারী-পুরুষ, এমনকি শিশুরাও এই আইনে আক্রান্ত হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাংলাদেশের সকল মানুষকে অনিরাপদ করে তুলেছে এবং সকল নাগরিকের মাঝে ভয়ের সংস্কৃতি জোরদার করেছে।'

সরকারি তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালের জানুযারি পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৭ হাজার ১টি মামলা করা হয়েছে। ডিএসএ ভিক্টিমস নেটওয়ার্ক সর্বশেষ ১ হাজার ৩৩১টি মামলার তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে দেখেছে, এই মামলাগুলোতে ৪ হাজার ১৬৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ মামলা হয়েছে রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে ৪৩১টি, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ৩৬৮টি এবং শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ১৬৪টি।

প্রীতম বলেন, 'এ থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক, সমাজকর্মী, এমনকি ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ নাগরিকদের ওপর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দমন পীড়নের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।'

'আজ তাই এটা সকলের কাছে প্রতীয়মান, এই আইনের প্রয়োগই ভয়াবহ অপপ্রয়োগ। সরকার ও তার সংস্থাগুলো এই আইনকে কেন্দ্র করে ক্রমাগত নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে,' যোগ করেন তিনি।

তিনি জানান, সরকার উপাত্ত সুরক্ষা আইনসহ নিপীড়নমূলক একাধিক নতুন আইন বানানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এর আগের তথ্য প্রযুক্তি আইনেও অনেকে এখনো জুলুমের শিকার হচ্ছেন।

সংবাদ সম্মেলনে আলোচকরা বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে আতংক তৈরি করা হয়েছে। গত বছর গুজব রটিয়ে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে প্রীতম দাশ ও ঝুমন দাশ আপনকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা ও গ্রেপ্তার করা হয়। একইভাবে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার তথাকথিত অভিযোগে মুসলমান সম্প্রদায়ের অনেকের ওপর এই আইনে মামলা ও গ্রেপ্তার করা হয়।

তাদের বলেন, এই আইনের মাধ্যমে সাংবাদিক, নারী ও শিক্ষার্থীদেরও নাজেহাল ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। র‍্যাব হেফাজতে মারা যাওয়া সুলতানা জেসমিনের ওপর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছিল। এ আইনে দীর্ঘ ১০ মাস বিনা বিচারে আটক থাকা অবস্থায় জেনে মারা গেছেন লেখক মুশতাক আহমেদ। সংবাদপত্রে মাছ, মাংস ও চালের স্বাধীনতা বিষয়ক প্রতিবেদন করার কারণে সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে ডিএসএ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

তারা আরও বলেন, এই আইনে দীর্ঘ ১০ মাস ধরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা কারাগারে আটক রয়েছেন। উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী মো. ইছমাইল, মো. তরিকুল ইসলামসহ অসংখ্য মানুষ দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতনের শিকার হয়ে কারাগারে আটক রয়েছেন।

তাদের ভাষ্য, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ফলে আন্তর্জাতিক মহলে চরম সমালোচনা ও চাপের মুখে পড়ায় সরকার এটিকে সংশোধনের কথা বলছেন।

তারা দাবি করেন, এই 'গণবিরোধী দমন পীড়নের আইন'টিকে সংশোধন নয়, পুরোপুরি বাতিল করতে হবে। যেকোনো মাত্রায় এই আইন থাকলে তা বাংলাদেশের নাগরিকদের নূন্যতম মত প্রকাশের অধিকারকে মারাত্মক হুমকিতে রাখবে।

তারা বলেন, গণমানুষের স্বার্থে ডিএসএ ভিক্টিমস নেটওয়ার্কের এসব দাবি মানা না হলে অবিলম্বে সারা দেশে এই আইনের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত সকলকে নিয়ে বৃহত্তর কর্মসূচির ডাক দেওয়া হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Govt to form commissions to reform 6 key sectors: Yunus

The commissions are expected to start their functions from October 1 and they are expected to complete their work within the next three months, said Chief Adviser Prof Muhammad Yunus in his televised address to the nation

2h ago