ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার নামে হয়রানি অব্যাহত রয়েছে: এমএসএফ

স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার উদ্বেগ সত্ত্বেও গত মাসেও 'বিতর্কিত' ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যা মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করেছে বলে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে মানবাধিকার সংস্থা মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গত মাসে ২ জনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

আজ শুক্রবার প্রকাশিত এমএসএফ প্রতিষ্ঠাতা সুলতানা কামালের সই করা প্রতিবেদনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে।

১৮টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ যাচাই করে করে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে এমএসএফ।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রবলভাবে সমালোচিত হওয়া সত্ত্বেও এ আইনে মামলার নামে হয়রানি অব্যাহত রয়েছে ও এর যথেচ্ছ অপব্যবহারের বিষয়টি ক্ষোভ ও উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

গত মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যে মামলাগুলো করা হয়েছে, তার মধ্যে ২টি হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী ও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, এ ধরনের সমালোচনামূলক পোস্ট, শেয়ার বা কমেন্ট করার কারণে।

এ ছাড়া, চট্টগ্রামে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে 'ভুয়া, ভিত্তিহীন ও মানহানিকর' তথ্য প্রচারের অভিযোগ এনে 'নাগরিক টিভি' নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল ও এর ফেসবুক পেজ পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ৭ জনের বিরুদ্ধে ২টি মামলা করা হয়েছে।

আর ধর্ম ও ধর্মীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সমালোচনামূলক পোস্ট, শেয়ার বা কমেন্ট করার কারণে ২টি এবং ফেসবুকে মিথ্যা তথ্য প্রচারের অভিযোগে আরও ১টি মামলা হয়েছে।

এমএসএফ বলছে, এসব অভিযোগের সুষ্ঠু বিচার ও প্রমাণ হওয়ার আগেই গ্রেপ্তার করা হয় এই আইনে, যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।

এই মানবাধিকার সংস্থাটির ভাষ্য, এ আইনের যথেচ্ছ অপব্যবহারের মাধ্যমে মানুষকে তার মতামত প্রকাশে বাধাগ্রস্ত করা ও ভয় দেখানো এবং সবার মুখ বন্ধ করে দেওয়ার একটি ভয়ংকর তৎপরতা চালানো হচ্ছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার এবং এই আইনের মাধ্যমে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে উল্লেখ করে আইনটি অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানিয়েছে এমএসএফ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে যেভাবে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে এবং তাদের যেভাবে শারীরিকভাবে আক্রমণ, হয়রানি, হুমকি ও লাঞ্ছিত করা হচ্ছে, তা শুধুমাত্র অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়, বরং বস্তুনিষ্ঠ ও সৎ সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধ করার সামিল। স্বাধীন সাংবাদিকতা ও পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকেরা নানাভাবে হুমকি, হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, যা উদ্বেগজনক।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, জুনে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় অন্তত ১১ জন সাংবাদিক নানাভাবে নিপীড়ন, হয়রানি, নির্যাতন, হত্যা ও হত্যার হুমকির শিকার হয়েছেন। জামালপুরের সাংবাদিক গোলাম রব্বানি নাদিম হত্যাকাণ্ডের কথাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

'সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করছে, যা শুধুমাত্র অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়, বরং এভাবে বাধার সৃষ্টি করে সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকারকে সংকুচিত করা হচ্ছে। একইসঙ্গে জনগণের তথ্য পাওয়ার অধিকারও খর্ব করা হচ্ছে', বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু, নির্যাতন, হয়রানি ও কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এমএসএফ।

প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত মাসে কারাগারে হেফাজতে থাকা অবস্থায় ১৬ জন মারা যান এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে আরও ২ জনের মৃত্যু হয়। আর মে মাসে কারাগারে থাকা অবস্থায় ১১ জন কয়েদিও মারা যান।

Comments

The Daily Star  | English

NBR activities disrupted as officials continue work abstention

This marks the ninth day of protests since the interim government issued the ordinance on May 12

1h ago