কুকি-চিনের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক

বেশ কয়েকবার যোগাযোগ ও চিঠি আদান-প্রদান করার পর আজ প্রায় ২ ঘণ্টাব্যাপী অত্যন্ত ফলপ্রসূ এবং আন্তরিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
Bandarban Map
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠিত শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি। বৈঠকে অপহরণ ও হত্যার মতো কার্যক্রম থেকে কেএনএফ 'বিরত থাকার' বিষয়ে অঙ্গীকার করেছে বলে জানিয়েছেন শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির মুখপাত্র।

আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ সভা কক্ষ থেকে ১২ সদস্য বিশিষ্ট শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি বৈঠকে অংশ নেয়।

গত ২২ জুন কেএনএফ সমস্যা সমাধানের জন্য বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা কে আহ্বায়ক ও লালজার বমকে সদস্য সচিব করে ১৮ সদস্য বিশিষ্ট শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির ঘোষণা দেওয়া হয়। কমিটির মুখপাত্র করা হয় এর সদস্য কাঞ্চন জয় তঞ্চঙ্গ্যাকে।

শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির মুখপাত্র ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য কাঞ্চন জয় তঞ্চঙ্গ্যা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির ১২ সদস্য এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুইয়াম বমের নেতৃত্বে কেএনএফের ৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি বৈঠকে অংশ নেয়।

সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এই বৈঠকে কেএনএফ তাদের দাবি নিয়ে আলোচনা করে।

কেএনএফ কি কি দাবি জানিয়েছে সে বিষয়ে প্রশ্ন করলে কাঞ্চন জয় তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, 'তারা তাদের ফেসবুক পেজে যে দাবিনামা পেশ করেছে, সেগুলোই বৈঠকে তুলে ধরেছে।'

কেএনএফ তাদের ফেসবুক পেজে গত ১৬ জুলাই হুমকি দেয় যে, নিরাপত্তা বাহিনীর পাহাড়ায় পর্যটন স্পটে কেউ বেড়াতে গেলে সেখানে ঘটে যাওয়া অঘটনের দায় কুকি-চিন নেবে না। আলোচনা চলাকালে পর্যটন স্পটগুলো খুলে না দেওয়া জন্য সরকারের কাছে দাবি জানায় তারা।

গত ১৯ মে কেএনএফ বাংলাদেশ সরকারের কাছে যেসব দাবি জানায় সেগুলো হচ্ছে:

১. প্রান্তিক অঞ্চলের অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত কুকি-চিন জনগোষ্ঠীর বিলীয়মান সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য রক্ষাসহ পশ্চাৎপদ অঞ্চলে পাহাড়ি-বাঙালি জনগোষ্ঠীর মধ্যকার শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সার্বিক উন্নতি সাধনের লক্ষ্যে এবং কুকি-চিন জনগোষ্ঠীর পূর্ব পুরুষদের আদিভূমি সংরক্ষণার্থে পার্বত্য চট্টগ্রামের পূর্বাঞ্চলের ৯টি উপজেলা (বাঘাইছড়ি, জুরাইছড়ি, বরকল, বিলাইছড়ি, রোয়াংছড়ি, রুমা, থানছি, লামা ও আলিকদম) নিয়ে একটি পৃথক প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রণয়নসহ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল প্রদান করতে হবে।

২. দাবিকৃত অঞ্চলাধীন এলাকাকে দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা থেকে আলাদা হিসেবে চিহ্নিতকরণ এবং জেলা ও আঞ্চলিক প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যবস্থা থেকে পৃথকীকরণসহ অত্রাঞ্চলের পাহাড় ও বনাঞ্চল সংরক্ষণার্থে 'ইনার লাইন পারমিট' (আইএলপি) প্রণয়ন করতে হবে। যার সকল ক্ষমতা বর্তাবে কুকি-চিন জনগোষ্ঠীর স্বায়ত্তশাসিত প্রশাসনের উপর। যার সকল প্রশাসনিক কার্যক্রম প্রত্যক্ষভাবে পরিচালনা করবে রাষ্ট্র, এতে কোনো স্থানীয় সরকার, জেলা বা আঞ্চলিক প্রশাসনিক ব্যবস্থার আওতাধীন থাকবে না।

৩. পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন সময় বাস্তুচ্যুত হয়ে ভারতের মিজোরাম ও মিয়ানমারের পালেতুয়া অঞ্চলে যাওয়া কুকি-চিন জনগোষ্ঠীকে শরণার্থী কমিটির মাধ্যমে প্রত্যাবাসনের সুযোগ এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।

কেএনএফের এসব দাবির বিষয়ে কাঞ্চন জয় তঞ্চঙ্গ্যা জানান, সরকারের ঊর্ব্ধতন কর্তৃপক্ষকে এসব দাবির বিষয়ে অবহিত করা হবে।

তিনি জানান, বেশ কয়েকবার যোগাযোগ ও চিঠি আদান-প্রদান করার পর আজ প্রায় ২ ঘণ্টাব্যাপী অত্যন্ত ফলপ্রসূ এবং আন্তরিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির এই মুখপাত্র বলেন, 'আমরা বৈঠক কেএনএফের কাছে অনুরোধ জানিয়েছি, অপহরণ বা হত্যার মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে তারা যেন বিরত থাকে। তাদের কাছে আমাদের চাওয়া ছিল, পার্বত্য এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে জনজীবনে যেন সমস্যার তৈরি না করা হয়। আমাদের এই অনুরোধ তারা রাখবেন বলে কথা দিয়েছেন। তারা কাউকে অপহরণ বা হত্যার মতো অপরাধ থেকে বিরত থাকার বিষয়ে এক মত হয়েছেন।'

আগামীতে আরও আলোচনা হবে এবং এই প্রক্রিয়া চলমান থাকবে বলেও জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago