আজ প্রধানমন্ত্রী আরও ১২ জেলাকে গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করবেন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বুধবার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে ২২ হাজার ১০১টি বাড়ি হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে আরও ১২ জেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করবেন।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ৪১ জেলার আরও ১২৩ উপজেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীন ঘোষণা করা হবে। এর মাধ্যমে মোট উপজেলার সংখ্যা হবে ৩৩৪ ও এই ১২ জেলাসহ সম্পূর্ণ গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত জেলার মোট সংখ্যা দাঁড়াবে ২১।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারগুলোর মধ্যে বাড়ি বিতরণের ঘোষণা দেবেন।
গত সোমবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের করবী হলে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোহাম্মদ তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্প বিশ্বে একটি অনন্য প্রকল্প, কারণ পৃথিবীর আর কোনো দেশে এতো বিপুল সংখ্যক ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বাড়ি বিতরণ করা হয়নি।
সে সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন ও আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পরিচালক আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান উপস্থিত ছিলেন।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের চতুর্থ ধাপের আওতায় এটি দ্বিতীয় পর্যায় এবং গত ২২ মার্চে দ্বিতীয় ধাপের অধীনে প্রথম দফায় ৩৯ হাজার ৩৬৫টি বাড়ি বিতরণ করা হয়।
২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি প্রথম পর্যায়ে ৬৩ হাজার ৯৯৯টি, সে বছর ২০ জুনে দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫৩ হাজার ৩৩০টি এবং মুজিববর্ষ-এর সময় তৃতীয় পর্যায়ে ২ ধাপে মোট ৫৯ হাজার ১৩৩টি বাড়ি বিতরণ করা হয়। আরও ২২ হাজার ১০১টি ঘর বিতরণের মাধ্যমে, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে মোট সংখ্যা দাঁড়াবে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৮৫১টি।
মুখ্য সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ৩ উপজেলায় ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সুবিধাগ্রহীতাদের মধ্যে বাড়িসহ জমি হস্তান্তর করবেন।
প্রধানমন্ত্রী খুলনা জেলার তেরখাদা উপজেলার বারাসত সোনার বাংলা পল্লী আশ্রয়ণ প্রকল্প, পাবনার বেড়া উপজেলার চাকলা আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প ও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আমানউল্লাহপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুবিধাগ্রহীতাদের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময় করবেন।
প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীনরা ২ দশমিক ২ শতাংশ জমিতে ভালো মানের টিনশেড আধা-পাকা বাড়ি পাবেন।
তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ময়মনসিংহ, শেরপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, কুষ্টিয়া, পিরোজপুর ও ঝালকাঠিকে গৃহহীন-ভূমিহীন মুক্ত জেলা হিসেবে ঘোষণা করবেন।
এর আগে তিনি পঞ্চগড় ও মাগুরাসহ আরও ৯ জেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত জেলা ঘোষণা করবেন।
মুখ্য সচিব বলেন, নদীভাঙন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোনো কারণে এসব এলাকায় কেউ গৃহহীন ও ভূমিহীন হলে তাদের জমিসহ বাড়ি দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, জমির মালিকানা স্বামী-স্ত্রী উভয়কে দেওয়া হয় এবং জমির রেজিস্ট্রেশন ও মিউটেশনও স্বামী-স্ত্রীর নামে দেওয়া হয়।
তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া বলেন, সরকার শুধু খাস জমিতে প্রকল্পের জন্য বাড়ি নির্মাণ করছে না, বাড়ি নির্মাণের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কাছ থেকে জমি কেনা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকেও অনুদান পাওয়া যায় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
যাদের বাড়ি নেই, জমি আছে, তাদের জন্য সরকার কবে থেকে বাড়ি নির্মাণ শুরু করবে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন সরকার এই প্রকল্পের আওতায় শুধু ভূমিহীন ও গৃহহীনদের বাড়ি দিচ্ছে এবং এই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর যাদের বাড়ি নেই বা যাদের বাড়ি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে তাদের জন্য বাড়ি নির্মাণ শুরু করবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে গৃহহীনদের পুনর্বাসন কর্মসূচি চালু করেন।
বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের বাড়ি ও জমির মালিকানা দেওয়ার উদ্যোগ নেন।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট ৮ লাখ ২৯ হাজার ৬০৭টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। পুনর্বাসিত মানুষের সংখ্যা ৪১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৫ জন (আনুমানিক এক পরিবারে ৫ ব্যক্তি হিসাবে)।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প ইতোমধ্যে ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৬১৭ পরিবারকে সরাসরি পুনর্বাসন করেছে এবং ভূমি মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের বেশকিছু কর্মসূচির অধীনে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৯৯০ পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
Comments