৩ মাস ধরে পানিতে ডুবে আছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫৬ ঘর

স্থানীয়দের অভিযোগ, অপরিকল্পিতভাবে নিচু জায়গায় আশ্রয়ণ প্রকল্পটি নির্মাণ করা হয়েছে।
জলাবদ্ধতায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোতে পানি উঠেছে। পানিবন্দি মানুষেরা বলছেন, অনেকেই ঘর ছেড়ে অন্যত্র থাকছেন। ছবিগুলো গত শনিবার খুলনার ডুমুরিয়ার সদর ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে তোলা। ছবি: হাবিবুর রহমান/ স্টার

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫৬টি পাকা ঘর গত তিন মাস ধরে পানিতে ডুবে আছে। অনেকগুলো ঘর জানালা পর্যন্ত পানির নিচে ডুবে আছে। বাধ্য হয়ে এসব ঘরের শতাধিক মানুষ পাশের এলাকাতে চলে গেছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, অপরিকল্পিতভাবে নিচু জায়গায় আশ্রয়ণ প্রকল্পটি নির্মাণ করা হয়েছে। যে জায়গায় ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে সেখানে বছর দশেক আগে নদীর প্রবাহ ছিল।

স্থানীয় ইউপি মেম্বার আব্দুল গফফার গাজী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ২০২০ সালে নদীর পাড়ে নিচু জায়গাতে আশ্রয়ণ প্রকল্পটি করার কারণে পানি আটকে এই দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। সেসময় আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বারবার অনুরোধ করে বলেছিলাম, স্যার এ জায়গাতে ধান চাষ হয়। অনেক নিচু জায়গা এখানে আশ্রয়ণ প্রকল্প করলে অবশ্যই ডুবে যাবে।

তিন মাসের বেশি সময় ধরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোতে পানি রয়েছে বলে জানিয়েছেন খুলনার ডুমুরিয়ার সদর ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা। ছবি: হাবিবুর রহমান/ স্টার

ডুমুরিয়া উপজেলার প্রকল্প কর্মকর্তা আশরাফ হোসেন বলেন, দ্বিতীয় ফেজে যখন এই প্রকল্পটি নেওয়া হয় তখন শুকনো মৌসুম ছিল। তাছাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদীর উৎস মুখ শোলমারি নদী পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়ায় সুইচগেট থেকে পানি বের হতে পারছে না। তাই গত কয়েক মাসের বর্ষার পানিতে শেয়ারঘাটা মরা নদীতে পানি আটকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলি ডুবে গেছে।

'পানি সরানোর দায়িত্ব তো আমাদের না, এটি পানি উন্নয়ন বোর্ড করবে,' বলে জানান তিনি।

রাবেয়া বেগম, তার অসুস্থ স্বামী সিরাজুল ইসলাম ও ছেলে হিল্লোলকে নিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে বসবাস করতেন। কিন্তু তিন মাস ধরে তার ঘর ছেড়ে একটু কম ডুবে যাওয়া ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। ওই ঘরের দুই রুম ও এক বারান্দায় এখন তিন পরিবারসহ বসবাস করছেন।

তিনি ডেইলি স্টারকে বলছিলেন, গত তিন মাস যাবত আমিসহ এখানকার অনেকগুলো পরিবার খুবই অসুবিধার মধ্যে জীবনযাপন করছি। আমার ঘরটা প্রথম থেকেই ডুবে গিয়েছে। সেখানে বসবাস করার অবস্থায় নেই। পাশের উঁচু একটি ঘরের মালিকের কাছ থেকে রুমটি চেয়ে নিয়ে আমরা সেখানে বসবাস করছি।

ঘরে পানি থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা। ছবিটি গত শনিবার খুলনার ডুমুরিয়ার সদর ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে তোলা। ছবি: হাবিবুর রহমান/ স্টার

'আমরা তিনজন থাকি এক রুমে। আরেকজন তার তিন মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন পাশের একটি রুমে। আর ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে ওই ঘরের ছোট্ট বারান্দায় থাকতেন আরেকজন,' বলেন তিনি।

'এই ঘরটাও পুরো ডুবে গিয়েছে। খাটের নিচে ইট দিয়ে উঁচু করে আমরা কোনোমতে বসবাস করছি। রান্নার কাজে উঁচু চুলা করে সেখানে রান্না করছি,' বলেন রাবেয়া।

'আমাদের কোনো পরিবার বাথরুম ব্যবহার করতে পারছে না। বাথরুমের ময়লাগুলো সব ভেসে বেড়াচ্ছে। আমরা এলাকার অন্য কোনো বাড়ি গিয়ে বাথরুম করছি,' বলে জানান তিনি।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের আরেক বাসিন্দা আব্দুল বারিক ডেইলি স্টারকে বলেন, গত একমাস আগের বর্ষায় সবগুলো ঘর ডুবে গিয়েছে। কোনো কোনো ঘরের জানালা পর্যন্ত পানি উঠেছে। যে ঘরগুলো একটু উঁচুতে সেখানে কেউ কেউ বাস করছে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এই আশ্রয়ণের ঘর ছেড়ে পাশের গ্রামগুলোতে চলে গেছে। কেউ কেউ পাশের গ্রামে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকছে।

'আশ্রয়ণ প্রকল্পের নিচু ২৪ ঘরে কেউ বাস করতে পারছে না। ইউএনও একবার এসেছিলেন। কিন্তু বেশি ডুবে যাওয়ার পর আর আসেননি,' বলেন তিনি।

'আমাদের সরকার ঘর দিয়েছে ঠিকই কিন্তু যদি বাস করতে না পারি তাহলে আর কী হলো,' বলেন তিনি।

জলাবদ্ধতায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোতে গত ৩ মাস ধরে পানি। ছবিটি গত শনিবার খুলনার ডুমুরিয়ার সদর ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে তোলা। ছবি: হাবিবুর রহমান/ স্টার

ডুমুরিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, শরীফ আসিফ রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদসহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি গ্রাম এখনো ডুবে আছে। উপজেলার পানি নিষ্কাশনের অন্যতম নদী হরি, ভদ্রা, সালতা, বুড়িভদ্রা পলি জমে প্রায় ভরাট হয়ে গিয়েছে। এই নদীগুলো খনন করা না হলে শুধু আশ্রয়ণ প্রকল্প না, এর আশেপাশের গ্রামগুলোতে দীর্ঘস্থায়ী জলবদ্ধতা তৈরি হবে। তাই নদী খনন এবং সুইচগেটগুলো সংস্কার করার জন্য আমরা সব দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করছি।

খুলনা জেলায় মোট ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের সংখ্যা ৫ লাখ ৫২৯টি। ইতোমধ্যে প্রথম পর্যায়ে ৯২২টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৩৫১টি, তৃতীয় পর্যায়ে ৯০৬টি এবং চতুর্থ পর্যায়ে ১৮১৯টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে।

Comments