সবার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিতে মনের বন্ধুর ‘টপ-আপ কার্ড’ এর যাত্রা
মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান মনের বন্ধু উন্মোচিত করলো 'টপ আপ কার্ড'। গত মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে পোশাক শ্রমিকদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে আরও সাশ্রয়ী ও সুলভ করার লক্ষ্যে নতুন পরিষেবা 'টপ-আপ কার্ড' নিয়ে এসেছে মনের বন্ধু। একই অনুষ্ঠানে মনের বন্ধুর ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম 'নেক্সট মনের বন্ধু - আমিই সমাধান' এর প্রথম ব্যাচের প্রতিনিধিদের সম্মাননাও প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের ভাইস-চ্যান্সেলর ড. রুবানা হক। তিনি বক্তব্যের শুরুতেই বলেন লন্ডন শহরে দেখা এক ভাস্কর্যের কথা। প্রজেক্ট ৮৪ নামের এই ভাস্কর্যটি আত্মহত্যা প্রতিরোধে সচেতনতামূলক এক ভাস্কর্য। ভাস্কর্যটি দেখার পর নিজের ভেতর যে হাহাকার ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি আরও সচেতন হওয়ার যে তাড়না তিনি উপলব্ধি করেছিলেন তা-ও অকপটে জানালেন রুবানা হক। মানুষের আশঙ্কা, উদ্বেগ, সমস্যা ও ভীতি দূরীকরণে একজন কাউন্সেলরের ভূমিকা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিজের অনুভূতির ব্যাপারে আমাদের আরও সচেতন হওয়া উচিত। কেননা অনুভূতি লুকানোর প্রবণতা অনেক সময় পারিপার্শ্বিক আরও অনেক সমস্যাকে পুঞ্জীভূত করে ফেলে। বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্যখাত নিয়ে উল্লেখযোগ্য পরিসংখ্যান ও গবেষণার অপ্রতুলতা নিয়েও তিনি আক্ষেপ করেন এবং এই খাতে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ও চাইল্ড অ্যাডোলেসেন্ট অ্যান্ড ফ্যামিলি সাইকিয়াট্রি ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য খাত বিষয়ক পরিসংখ্যান নিয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি জানান, বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার প্রেক্ষাপট শারীরিক স্বাস্থ্যসেবা খাতের চেয়ে আলাদা। মানসিক স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে এখনো জড়িয়ে আছে নানারকম কুসংস্কার ও লজ্জাবোধ, যা মানুষকে নিজের সমস্যা খুলে বলতে বাধাগ্রস্ত করে। সেখানে মনের বন্ধু প্রথাগত ব্যবস্থায় না গিয়ে অভিনব উদ্ভাবন নিয়ে এসেছে, সেটি আসলে আরও বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে নিয়ে যাবে।
জাপানের প্রতিষ্ঠান জেটরো বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ইউজি আন্দো মনের বন্ধু নিয়ে তার মুগ্ধতার কথা জানান। তিনি নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন, জাপানের কর্মক্ষেত্রে মানুষ অনেকরকম মানসিক চাপের সম্মুখীন হয়। সেসব মোকাবিলায় মনের বন্ধুর মতো প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম 'নেক্সট মনের বন্ধু - আমিই সমাধান' নিয়ে কথা বলবার সময় এটুআই প্রজেক্টের সংস্কৃতি ও যোগাযোগ বিষয়ের প্রধান পূরবী মতিনও ভবিষ্যতে এ উদ্যোগটি আরও বড় আকারে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে দেয়ার গুরুত্ব তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে মনের বন্ধুর প্রতিষ্ঠাতা তৌহিদা শিরোপা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠানটির এ পর্যন্ত পথচলা এবং ভবিষ্যৎ লক্ষ্যের উপর আলোকপাত করেন। সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, মনের বন্ধুর এই পথচলায় আজকে উপস্থিত সকলের অসামান্য অবদান রয়েছে। মনের বন্ধু যখন একদম শুরুর দিকে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার মতো একটি চ্যালেঞ্জিং সেক্টরে কাজ করা শুরু করেছে, তখন আপনাদের সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা আমাকে সামনে এগিয়ে দেয়ার সাহসও শক্তি যুগিয়েছে।
নতুন উদ্ভাবন
পোশাক শ্রমিকদের জন্য 'টপ-আপ কার্ড' প্রবর্তনের মাধ্যমে একটি নতুন মাইলফলক অর্জন করল মনের বন্ধু। এই টপ-আপ কার্ডগুলোর মূল্য ১ ডলারের কম হওয়ায় এটি দেশের অন্যতম পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে আরও সহজলভ্য করবে।
তারুণ্যের শক্তি উদযাপন
এ অনুষ্ঠানে মনের বন্ধুর ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম 'নেক্সট মনের বন্ধু - আমিই সমাধান' এর প্রথম ব্যাচের প্রতিনিধিদেরকে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। মনের বন্ধু ও এটুআই এর হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট মিডিয়ার যৌথ এই উদ্যোগের আওতায় প্রথম ব্যাচে ১৩ জন তরূণকে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মনের বন্ধু'র প্রতিষ্ঠাতা তৌহিদা শিরোপা গত ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সাশ্রয়ী এবং সুলভ মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ভোগ বিজনেসের ১০০ উদ্ভাবকদের তালিকায় 'সাস্টেইনবিলিটি থট লিডার' ক্যাটাগরিতে সম্মাননা পেয়েছেন। উল্লেখ্য, এই বছরের শুরুর দিকে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানুষদের উন্নয়নে অবদান রাখার মাধ্যমে 'মনের বন্ধু' মর্যাদাপূর্ণ টমি হিলফিগার ফ্যাশন ফ্রন্টিয়ার চ্যালেঞ্জ ২০২২ জিতেছিল।
Comments