ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার জন্য কিছু করিনি: ড. ইউনূস

ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার জন্য কিছু করিনি: ড. ইউনূস
ড. মুহাম্মদ ইউনূস | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমি যে সমস্ত উদ্যোগ নিয়েছি, কোনোটা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার জন্য নেইনি। এটা গ্রামীণ ব্যাংক হোক, সেটা অন্যান্য বহু প্রতিষ্ঠান হোক।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে তৃতীয় শ্রম আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

আপনার মামলাটা একেবারে শেষ পর্যায়ে আছে। আজকে একটা লিখিত ব্যাখ্যা আপনি দিয়েছেন। আমরা আপনার মুখ থেকে জানতে চাই, কী বলেছেন কোর্টকে—গণমাধ্যমকর্মীদের এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, 'যা বলার তা লিখিতভাবে বলেছি, যাতে সবাই জানতে পারে পরিষ্কারভাবে। আইন বিষয়ক প্রশ্ন যা আছে আমার আইনজীবী বলতে পারবেন, আমি অত সুন্দর করে বলতে পারব না। আমি যেটা আপনাদের কাছে পরিষ্কার করতে চাই, তার পটভূমিটা; আমি যে সমস্ত উদ্যোগ নিয়েছি, কোনোটা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার জন্য নেইনি। এটা গ্রামীণ ব্যাংক হোক, সেটা অন্যান্য বহু প্রতিষ্ঠান হোক।'

তিনি বলেন, 'মানুষ প্রতিষ্ঠান করে, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান করে লাভ করবে, মুনাফা করবে, বড় করবে। আমরাও লাভ করেছি, বড় করেছি কিন্তু আমাদের যেটা মূল লক্ষ্য, যেটা বলি আমরা সামাজিক ব্যবসা। ব্যবসার মাধ্যমে মানুষের উপকার। যেখানে যিনি বিনিয়োগ করছেন, তিনি কোনো মুনাফা নেবেন না এর থেকে। কাজেই আমি এ বিষয়ের প্রবক্তা, সোশ্যাল বিজনেস যেটা বলি। বিশ্বব্যাপী এটাকে প্রচার করার চেষ্টা করছি। আমি নিজে যদি এর উল্টা করি, তাহলে তো আর হলো না। কাজে যা কিছু করেছি, এটাকে পটভূমিতে রেখে বাকি জিনিস বিচার করেন।'

ড. ইউনূস বলেন, 'আমার উদ্দেশ্যের মধ্যে কোথাও ব্যক্তিগতভাবে মুনাফা করার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। আমার সঙ্গী যারা আছে, তারাও এটার সঙ্গে মুনাফার জন্য; আমি ভাগ পাব এখানে—এটার জন্য করেনি। এটার লক্ষ্য ছিল মানুষের উপকার হবে। এটা করতে পেরেছি কি করিনি; এটা বিতর্ক হয়। গ্রামীণ ব্যাংক নিয়েও বিতর্ক হয়। সব কিছুর বিতর্ক হয় কিন্তু আমরা মনে করেছি যে, এটা ঠিক জিনিস, এটা করা দরকার। সে জন্য বিভিন্ন জিনিস আমরা চেষ্টা করেছি, সৌরশক্তি চেষ্টা করেছি, স্বাস্থ্যের চেষ্টা করেছি, বিভিন্ন হস্তশিল্পের চেষ্টা করেছি, বহু রকম। পঞ্চাশ রকম, পঞ্চাশের ঊর্ধ্বে কোম্পানি করেছি একটার পর একটা জিনিসের জন্য কষ্ট করেছি।

'কোনোটাই ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হবো এটার থেকে, সেটা কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। কাজেই যেটার উদ্দেশ্য লাভবান হওয়ার বিষয় না, সেখানে অন্যের থেকে কিছু ভাগ নিয়ে কাকে দেবো আমি? কোথায় যাবে সেটা? এই জিনিসটা পরীক্ষা করে করে দেখেন প্রত্যেকটা—উনি যদি শ্রমিককে কষ্ট দিয়ে থাকে, কী জন্য কষ্টটা দিলো? উনি কি লাভবান হওয়ার জন্য না অন্য কাউকে লাভবান করার জন্য নাকি আমার আত্মীয়-স্বজনকে লাভবান করার জন্য,' প্রশ্ন রাখেন তিনি।

ড. ইউনূস বলেন, 'আমি সোশ্যাল বিজনেস করেছি, কোনো আত্মীয়-স্বজনকে একটা ব্যবসা করিয়ে দিইনি তো। পারতাম তো! বহুভাবে ব্যবসা করছি, দিলাম তোমারে একটা সুযোগ। এটাও দেখবেন না, আশে পাশে কেউ নাই যে, ব্যক্তিগতভাবে তারা লাভবান হয়েছে। এই পটভূমিতে এ সমস্ত বিচারের বিষয় আসছে। তা আসছে, এটা কেন আসছে সেটা আপনারাই বিচার করবেন, আপনারা শুনছেন এগুলো।

'আমাদের জিনিসটা হলো যে, আমাদের উদ্দেশ্য-আদর্শ-কর্মসূচির কোথাও ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়া, মালিক হওয়া; যেমন আমি বারেবারে বলছি, আমার জীবনের উদ্দেশ্য ছিল যে আমি মালিকমুক্ত থাকব। কিছুর মালিক হবো না আমি। আমি সেটাই ফলো করে যাচ্ছি। যেখানে আমি মালিকমুক্ত হতে চাই, সেখানে আমার একজনের থেকে কেড়ে আনতে হবে কেন? কোনো কারণ নাই তো!' যোগ করেন তিনি।

আপনি সব সময় মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন, বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন, আমরা সম্মানিত হয়েছি, এমন কিছু কি ঘটেছে যেটা অসাবধানতাবশত হয়েছে বা ইচ্ছাকৃত নয়—জানতে চাইলে ড. ইউনূস গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, 'এটা তো হতেই পারে, মানুষের অসাবধানতাবশত হতেই পারে। ভুল করতেই পারে। মানুষ তো আর ফেরেশতা না! সেটা আমি স্বীকার করি। সেটা ধরিয়ে দেন। আমরা ভুল করি, আবার শুধরে নেই। আমি করেছি ভুল, সেটা সাজেশন...আমার সঙ্গে যারা আছে তারা ভুল করেছে, সাজেশন...এটা তো হবেই। যে কোনো একটা কাজ করতে গেলে ভুল-ভ্রান্তি হবে। ভুল-ভ্রান্তি এক জিনিস, অপরাধ আরেক জিনিস। এই দুটোকে আলাদা করা। একটা ভুল-ভ্রান্তি, আরেকটা অপরাধ।'

কোর্টের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী জানতে চাইলে গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি বলেন, 'মানুষ আদালতের কাছে কী জন্য আসে? ন্যায় বিচারের জন্য আসে। আমিও ন্যায় বিচার চাই।'

Comments

The Daily Star  | English
International Crimes Tribunal 2 formed

Govt issues gazette notification allowing ICT to try political parties

The new provisions, published in the Bangladesh Gazette, introduce key definitions and enforcement measures that could reshape judicial proceedings under the tribunals

4h ago