কাল থেকে ঢাকায় ৪ পণ্যের ট্রাক সেল শুরু, কিনতে পারবেন যে কেউ

আগামীকাল থেকে রাজধানী ঢাকায় চার পণ্যের ট্রাক সেল শুরু হচ্ছে। উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রাক থাকবে; যেখান থেকে কম দামে দুই কেজি মসুর ডাল, দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি আলু কেনা যাবে।
দুএক দিন পরে এই তিন পণ্যের সঙ্গে যোগ হবে দুই কেজি পেঁয়াজ। প্রথম দিনে ২৫ থেকে ৩০টি ট্রাকে পণ্য বিক্রি শুরু হবে। সরবরাহ বাড়লে ট্রাকের সংখ্যাও বাড়বে।
আজ সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষ এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, 'এক কোটি পরিবারের মধ্যে আমরা তিনটা পণ্য গত বছরের মার্চ মাস থেকে দিচ্ছিলাম। এ বছরের জুলাই থেকে আমরা এর সঙ্গে পাঁচ কেজি চালও যুক্ত করেছি। এক কোটি পরিবার তেল, চিনি ও ডালের সঙ্গে পাঁচ কেজি চাল প্রতি মাসে পাচ্ছে।'
জেলা পর্যায়ে প্রশাসন বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে জানিয়ে তপন বলেন, 'ঢাকা শহরে যেহেতু কোনো কোল্ড স্টোরেজ নেই এবং অনেক মানুষের চাপ, দ্রব্যমূল্য একটু বেশিই থাকে। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসে, পরিবহন ব্যয়টা যোগ হয়, সব মিলিয়ে দাম বেশি থাকে। ঢাকা শহরের দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় টিসিবির ১৩ লাখ ফ্যামিলি কার্ড আছে, এই পরিবারগুলো আমাদের পণ্য পাচ্ছে প্রতি মাসে। রমজান মাসে আমরা দুইবার দিয়ে থাকি। সে সময় খেজুর-ছোলা, অন্যান্য পণ্য যোগ হয়।
'আগামীকাল থেকে আমরা ট্রাক সেল শুরু করব। প্রথম দিন হিসেবে ২৫ থেকে ৩০টি ট্রাক বিভিন্ন জায়গায় থাকবে। এটা ট্রাক সেল, কার্ড ভিত্তিক না—যিনি আসবেন, তিনি পাবেন। দুই কেজি মসুরের ডাল, দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি আলু আর দুই কেজি পেঁয়াজ,' বলেন তিনি।
বাণিজ্য সচিব আরও বলেন, 'কাল থেকেই পেঁয়াজ পারব কি না...কারণ সোনা মসজিদ ও হিলি থেকে পেঁয়াজ আনতে হবে। সে জন্য দুএক দিন সময় লাগতে পারে। বাকি তিনটি পণ্যের আমরা কাল থেকেই ট্রাক সেল শুরু করব।'
তপণ বলেন, 'প্রত্যেক ট্রাকে ৩০০ জন পায়; এমন পণ্য থাকবে। সেই হিসাবে নয় হাজার পরিবার কাল থেকে আমরা যোগ করতে যাচ্ছি। আমরা যদি বেশি পণ্য সংগ্রহ করতে পারি তাহলে এই ট্রাকের সংখ্যা আরও বাড়বে। এটা ঢাকাবাসীর জন্য সুখবর।'
তিনি বলেন, 'বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার কিন্তু বিভিন্ন সময় পদক্ষেপ নিয়েছে। এক সময় আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন ও পামওয়েলের দাম অনেক বেড়ে যাওয়াতে গত বছর আমাদের এখানে সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ২০৫ টাকা হয়ে যায়। সেটা কিন্তু আমরা ধাপে ধাপে কমিয়ে, এখন সর্বশেষ আমাদের যে নির্ধারণ করা দাম (বোতলজাত), সেটা ১৬৯ টাকা। অর্থাৎ ৩৬ টাকা কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তেল-চিনির দাম সমন্বয় করা হয়।'
বাজার অস্থিতিশীল থাকলে ডিম-আলু আমদানি চলবে
ডিম আমদানি কোনো অঞ্চল যদি বার্ড ফ্লু মুক্ত থাকে, সেখান থেকে ডিম আনা যাবে—আইপিও সংশোধন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'এর পরে আমাদানি হচ্ছে, এলসি (ঋণপত্র) খোলা হয়েছে। আমরা ডিম ও আলু আমদানি উন্মুক্ত করার পরে এবং সরকার দাম বেঁধে দেওয়ার কারণে উল্লেখযোগ্য ফল আমি পেয়েছি। ডিমের দাম অনেক কমে গেছে। আলুর দামও কিন্তু একটু কমে গেছে।'
তপন বলেন, 'সরকার নির্ধারিত আলুর যে দাম ২৭ টাকা কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে এবং ৩৬ টাকা খুচরা; এটা বাস্তবায়নের জন্য জেলা প্রশাসকরা প্রত্যেকটা কোল্ড স্টোরেজে একজন করে কর্মকর্তা নিয়োগ করে দিয়েছেন। কেবল তাদের উপস্থিতিতে ২৭ টাকা দরে আলু বিক্রি হবে। এর বাইরে আলু কোল্ড স্টোরেজ থেকে বের হবে না।
'খুচরা পর্যায়ে যাতে ৩৬ টাকা দরে বিক্রি হয় সেটাও জেলা প্রশাসন দেখবে। ভোক্তা অধিকারও কাজ করবে। আমরা চেষ্টা করছি, ২৫ কোটি পিস ডিমের যে অনুমতি দেওয়া হয়েছে, আরও বেশি ডিম যাতে তারা আনতে পারে। অনেকেই পাইপ লাইনে আছে। হয়তো দুএক দিনের মধ্যে আসে,' বলেন তিনি।
বাণিজ্য সচিব বলেন, 'আমদানি কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দামের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের উদ্দেশ্য কিন্তু ডিম আমদানি না—ডিমের দাম কমানো। সে জন্য, যদি দেখা যায় আমদানি কম হচ্ছে, কেননা ডিমের দাম এমন পর্যায়ে কমে গেছে যে, আমদানিকারকরা হয়তো কম আনতে চাইবেন। উদ্দেশ্য যদি সাধন হয় যে, দাম কমে গেছে; তখন আমদানি কম হলেও ক্ষতি নেই। আমরা চাচ্ছি, কিছু আমদানি আরও হোক।'
আলু আমদানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'কৃষি মন্ত্রণালয় এ পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ টনের আইপি দিয়েছেন। এলসি খোলা হয়েছে আরও অনেক কম। আমদানি হয়েছে ১০ হাজার ৯৫ মেট্রিক টন। এটা চলমান প্রক্রিয়া, এটা চলতে থাকবে। যত দিন দাম স্থিতিশীল পর্যায়ে না থাকে, আলু-ডিম আমদানি হবে। অন্যান্য পণ্যের আমদানি কীভাগে বাড়ানো যায়; বাজারে যাতে চিনি-তেলের সরবরাহ বাড়ানো যায় সে জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।'
খাদ্যপণ্য আমদানির সমস্যা দূর করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'টিসিবির যে পণ্যগুলো এক কোটি পরিবারকে আমরা দিচ্ছি, সেই আমদানি মূলত সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে হয়ে থাকে। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংককে চিঠি দেওয়া হয়েছে, এসব পণ্যের এলসি খুলতে যাতে কোনো সমস্যা না হয়। অন্যান্য ব্যাংকেও নির্দেশনা গেছে, খাদ্যপণ্য তেল, চিনি, ডাল এবং এখন আলু, ডিম আমদানি করতে যাতে ডলারের কোনো সমস্যা না হয়।'
Comments