‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক স্থাপনে কায়সার মোর্শেদের অবদান তাকে স্মরণীয় করে রাখবে’

‘আমরা সব সময় তার অভাব অনুভব করব।’
‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক স্থাপনে আলী কায়সারের অবদান তাকে স্মরণীয় করে রাখবে’
সাবেক রাষ্ট্রদূত আলী কায়সার হাসান মোর্শেদ | ছবি: প্রথম আলোর সৌজন্যে

সাবেক রাষ্ট্রদূত আলী কায়সার হাসান মোর্শেদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

আজ শনিবার একটি বার্তায় তিনি বলেন, 'তার মৃত্যু আমার কাছে  ব্যক্তিগত আঘাতের সামিল।'

ড. ইউনূস বলেন, তার মেয়ে লামিয়া মোর্শেদ ইউনূস সেন্টারের জন্মলগ্ন থেকে নির্বাহী পরিচালক হিসেবে কাজ করে আসছে। এ সুবাদে রাষ্ট্রদূত মোর্শেদের সঙ্গে আমার গভীর ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। তিনি কূটনীতিবিদ হিসেবে বিভিন্ন দেশে কাজ করার কারণে লামিয়া ও তার ভাই-বোনরা বিভিন্ন দেশে থেকে বড় হয়েছে। বাবার কর্মস্থল ঘন ঘন পরিবর্তনের কারণে লামিয়ারা ভিন্ন ভিন্ন দেশ এবং ভিন্ন ভিন্ন স্কুল-কলেজ, ভাষা ও সংস্কৃতির ভেতর দিয়ে বড় হয়ে উঠেছে। এ কারণে তাদের পৃথিবী আবর্তিত হয়েছে তাদের পিতা-মাতাকে কেন্দ্র করেই। তারাই ছিলেন তাদের সত্যিকার পৃথিবী।

তিনি বলেন, লামিয়ার কারণে রাষ্ট্রদূত মোর্শেদের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পায় এবং আমরা পরস্পরের বন্ধু হয়ে উঠি। তিনি ছিলেন অসাধারণ চমৎকার একজন পিতা। তিনি তার সন্তানদের বিশ্ব নাগরিক হয়ে গড়ে ওঠার পাশাপাশি নিজের শেকড়ের কথা, নিজ দেশের সংস্কৃতিকে সম্মান করতে শেখা এবং নিজ দেশের সমস্যাগুলোর সমাধানে কাজ করার প্রত্যয় তাদের মধ্যে দৃঢ়ভাবে প্রোথিত করে দেন। বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আমরা দীর্ঘ আলোচনা করেছি। ইতিহাস ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে তার ছিল সুগভীর জ্ঞান। আইন বিষয়ে লেখাপড়া ও প্রশিক্ষণের কারণে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তাকে বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও হার্ভার্ড ল' কলেজের মতো সুবিখ্যাত প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করার সুযোগ তার পেশাগত জীবন ও কর্মে গভীর সাফল্য ও অসাধারণ উত্তরাধিকারের সুযোগ করে দেয়। বাংলাদেশের সমাজে তার অবস্থান এবং কূটনীতিবিদ হিসেবে পেশাগত দায়িত্বে তার নিবেদিত ও গভীর দূরদৃষ্টি সম্পন্ন অবদান দেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে তাকে স্মরণীয় করে রাখবে, বলেন ড. ইউনূস।

তিনি আরও বলেন, কূটনীতিবিদ হিসেবে তার দায়িত্ব শুরু থেকেই ছিল খুব চ্যালেঞ্জিং। একটি সদ্য জন্মলাভ করা এমন এক দেশের প্রতিনিধি হিসেবে তাকে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছিল—যে দেশের নামই তখন অনেকেই শোনেননি। এ অবস্থায় নিজেকে ও নিজের দেশকে পরিচিত করা এবং অন্যদের সঙ্গে একটি শক্তিশালী ও অর্থপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ ছিল। কূটনীতিবিদ হিসেবে যেখানে, যে পদেই তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধানের দায়িত্বসহ, দেশের নবীন ও ভবিষ্যত কূটনীতিবিদদের ওপর তিনি তার প্রজ্ঞা, অন্তদৃর্ষ্টি ও দূরদৃষ্টির গভীর প্রভাব রেখে গেছেন।

ড. ইউনূস বলেন, একজন ভীষণ কৌতূহলী মানুষ হিসেবে রাষ্ট্রদূত মোর্শেদ আমাদের কার্জ-কর্ম সম্বন্ধে সব সময় খোঁজ-খবর নিতেন। তার সঙ্গে আমার পরিচয়; তিনি লামিয়ার পিতা ছিলেন এ কারণে হয়নি, বরং লামিয়ার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে সে তার সন্তান ছিল এ কারণে। লামিয়ার সঙ্গে আমাদের পরিচয়ের আগে থেকেই তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের বিভিন্ন প্রকাশনা, পুস্তিকা, নিবন্ধ, নিউজলেটার, প্রতিবেদন ইত্যাদি সংগ্রহ করতেন এবং এগুলো লামিয়াকে পাঠাতেন—লামিয়া লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সে ভর্তির আগে থেকেই এবং সেখানে অধ্যয়নের সময়েও। গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকাণ্ড নিয়ে তিনি বিশেষ গর্ব বোধ করতেন এবং এই গর্ব তিনি তার মেয়ে লামিয়ার মধ্যেও সঞ্চারিত করতে চেয়েছিলেন।

লামিয়া লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর পরই তাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন গ্রামীণ ব্যাংকে ইন্টার্নশিপ করার জন্য। তারা পিতা-কন্যা দু'জনেই গ্রামীণ ব্যাংকের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এত ব্যস্ত হয়ে গেলেন যে, লামিয়া গ্রামীণ ব্যাংক পরিবার ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা আর কখনো ভাবতেই পারল না, যোগ করেন তিনি।

ড. ইউনূস বলেন, রাষ্ট্রদূত মোর্শেদ আমাদের কর্মকাণ্ড সম্বন্ধে প্রতিনিয়ত খোঁজ-খবর নেওয়ার কারণে লামিয়ার একটি দৈনন্দিন কাজ হয়ে দাঁড়াল আমাদের কাজ-কর্ম সম্বন্ধে তাকে ব্রিফ করা এবং তার বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া। এতে তিনি আনন্দ পেতেন। আমাদের কাজ-কর্ম তার আনন্দের অন্যতম উৎসে পরিণত হলো। তিনি এই ভেবে গর্ব অনুভব করতেন যে, তার মেয়ে এই অগ্রযাত্রায় চালকের ভূমিকায় আছে।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রদূত মোর্শেদের এই মৃত্যুতে আমি অত্যন্ত শোকাহত। তার মৃত্যুতে জাতি এক দেশপ্রেমিক, এক সফল কূটনীতিবিদ এবং দেশ ও মানুষের সেবায় নিয়োজিত এক মহান কর্মবীরকে হারাল। যারা তাকে চেনেন ও তার সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য যাদের হয়েছে তাদের কাছে তিনি তার বিনয়, আন্তরিকতা, সহজ-সরল জীবনাচার এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীতে তার সুগভীর প্রজ্ঞার জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

ড. ইউনূস বলেন, তার মৃত্যুতে আমরা হারালাম এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে, একজন প্রাজ্ঞ দার্শনিককে এবং দেশের দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের উন্নয়নে গৃহীত কর্মকাণ্ডের এক নিবেদিতপ্রাণ কর্মীকে। তাঁকে জানার সৌভাগ্য যাদের হয়েছে, তাদের কাছে রাষ্ট্রদূত মোর্শেদের দেশপ্রেম, প্রজ্ঞা ও মহানুভবতা সব সময় দেশ ও সমাজের উন্নয়নে কাজ করে যেতে অনুপ্রেরণা জোগাবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা সব সময় তার অভাব অনুভব করব। মহান আল্লাহ তাকে চির শান্তিতে রাখুন।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ও রাষ্ট্রদূত আলী কায়সার হাসান মোরশেদ ইন্তেকাল করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

4h ago