পাহাড়ে-সমতলে হত্যাকাণ্ড, সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের

পাহাড়ে-সমতলে হত্যাকাণ্ড ও সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

আজ শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানানো হয়। এতে সাক্ষর করেছেন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৮ জন শিক্ষক।

বিবৃতিতে বলা হয়, 'ডিসেম্বর মাস একদিকে যেমনি আমাদের দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের বিজয়ের মাস, তেমনি স্বাধীন চিন্তার ধারক শহীদ বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকাণ্ডের মাসও। এরকম একটা সময়ে পুরো রাষ্ট্র ব্যবস্থার উল্টো যাত্রা যেন এক পরিপূর্ণতার প্রকাশ আমরা দেখতে পাচ্ছি, কণ্ঠরোধ থেকে শুরু করে হত্যাকাণ্ড অথবা হত্যাপ্রচেষ্টার মতো বিভিন্ন মর্মান্তিক এবং অপরাধমূলক ঘটনার মধ্য দিয়ে- হোক সেটা পাহাড়ে, সমতলে অথবা রাজনৈতিক ময়দান বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে।'

বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১১ ডিসেম্বর খাগড়াছড়ির পানছড়িতে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি বিপুল চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা সহসভাপতি লিটন চাকমা, পিসিপির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সুনীল ত্রিপুরা ও ইউপিডিএফের সদস্য রুহিনসা ত্রিপুরাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। প্রকাশ ত্রিপুরা, কমল ত্রিপুরা, ও নীতিদত্ত চাকমা নামের তিন জন এখনো নিখোঁজ আছেন।'

'গত ১২ ডিসেম্বর আরেকটি সংবাদে দেখা যায়, রাজু ভাস্কর্যে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতাকর্মীদের ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী বেধড়ক মারধর করে।

একই কায়দায় ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন শেষে ফিরে যাওয়ার সময় ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে শারীরিকভাবে আক্রমণ করে। এতে ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি মেঘমল্লার বসু (২৭), সাধারণ সম্পাদক মাঈন আহমেদ (২৫), ঢাকা মহানগর সহসাধারণ সম্পাদক তাজমির তাজওয়ার শুভ্র (২৬) ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সদস্য শাহরিয়ার শিহাব (২৩) গুরুতর আহত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়নের বিভাগের শিক্ষার্থী মেঘমল্লার বসুর চোখ লক্ষ্য করে ধারালো কোনো কিছু দিয়ে নৃশংসভাবে আঘাত করা হয়। তার বাম চোখের অবস্থা বেশ আশঙ্কাজনক।'

বিবৃতিতে শিক্ষকেরা বলেন, 'এসব ঘটনা অনেক ক্ষেত্রে এটা নির্দেশ করছে যে, আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা, সরকার পাহাড় কিংবা সমতলের ভিন্ন পরিচয়, ভিন্ন চিন্তার নাগরিকদের কিংবা ক্ষমতাসীনদের তাবেদার নন, এরকম সকলকে শত্রু বা প্রতিপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করছে এবং তাদের স্বাধীন কণ্ঠস্বর, এমনকি প্রয়োজনে শারীরিক অস্তিত্ব বিপন্ন করতে সদা প্রস্তুত। এই বিরাজমান রাষ্ট্র ব্যবস্থা, সরকার ব্যবস্থা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং শহীদদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতার সাথে সাংঘর্ষিক তো বটেই, আমাদের সাংবিধানিক অধিকারকেও হরণ করছে প্রতিদিন। এরকম পরিস্থিতিতে সর্বজনের বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তিরাও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আগ্রহী নন। আর হলেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের চোখ নষ্ট করার মতো গুরুতর অপরাধকে বেমালুম নাই করে দেওয়ার ব্যাপারে সব সময় তৎপর! এটা পৃথিবীর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক এবং সুস্থ বৈশিষ্ট্যের সাথে একেবারেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এরকম শিক্ষা এবং শিক্ষার্থী-অবান্ধব প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেশ রক্ষাকারীরা যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাংকিং এর আলাপ তোলেন তখন তা জনপরিসরে হাস্যরসের জন্ম দেয়।'

'এরকম নাগরিক স্বার্থবিরোধী নৃশংস রাষ্ট্র ব্যবস্থা, সরকার ব্যবস্থা, সর্বজনের শিক্ষাব্যবস্থাপনা যেখানে সচল এবং সর্বগ্রাসী, সেখানে ন্যায়-বিচার চাওয়া বা ন্যায্যতা দাবি করাটাও বর্তমান সময়ে অরণ্যরোদন অথবা বোধহীন শক্ত অনড় পাথরে মাথা ঠোকার মতোই। তাই আমরা এরকম পরিস্থিতিতে শুধুই নিন্দা জ্ঞাপণ করতে পারছি এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি৷ একই সাথে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছি, আমরা আমাদের স্বাধীন চিন্তা এবং মতপ্রকাশের লড়াইটা ধারাবাহিকভাবে জারি রাখব, সত্যিকারের স্বাধীন এবং ন্যায্য বাংলাদেশ বিকাশের স্বপ্ন নিয়ে।'

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন-- মিম আরাফাত মানব, প্রভাষক, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়; তাসনীম সিরাজ মাহবুব, সহযোগী অধ্যাপক, ইংরেজি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; সুবর্ণা মজুমদার, সহকারী অধ্যাপক, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; কাজী মারুফুল ইসলাম, অধ্যাপক, উন্নয়ন অধ্যয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ফাহমিদুল হক, ভিজিটিং অধ্যাপক, সেন্টার ফর এক্সপেরিমেন্টাল হিউম্যানিটিজ, বার্ড কলেজ; সৌভিক রেজা, অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়; কামরুল হাসান মামুন, অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; আর রাজী, সহকারী অধ্যাপক, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; সাঈদ ফেরদৌস, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; কাজলী সেহরীন ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; মনিরা শরমিন, সহকারী অধ্যাপক, জার্নালিজম ত্যান্ড মিডিয়া কম্যুনিকেশন, গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ; মোশাহিদা সুলতানা, সহযোগী অধ্যাপক, আকাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; সামিনা লুৎফা, সহযোগী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; আনু মুহাম্মদ, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, অর্থনীতি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; আরাফাত রহমান, সহকারী অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; আরিফুজ্জামান রাজীব, সহযোগী অধ্যাপক, ইইই, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক, সাংবাদিকতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; আ-আল মামুন, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়; কাজী শুসমিন আফসানা, সহযোগী অধ্যাপক, নাট্যকলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়; মানস চৌধুরী, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; তাসমিয়াহ তাবাসসুম সাদিয়া, সহকারী অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস; নাসির আহমেদ, সহযোগী অধ্যাপক, ইংরেজি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়; মাইদুল ইসলাম, পিএইচডি গবেষক, সমাজতত্ত্ব বিভাগ, পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র; সুস্মিতা চক্রবর্তী, অধ্যাপক, ফোকলোর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়; আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী, অধ্যাপক, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়; কনক আমিরুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক, ফোকলোর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়; মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; গৌতম রায়, সহযোগী অধ্যাপক, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়; সৌম্য সরকার, সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়; নির্ণয় ইসলাম, প্রভাষক, স্কুল অব জেনারেল এডুকেশন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়; মোহাম্মদ আজম, অধ্যাপক, বাংলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; মাহবুব মুর্শিদ, অধ্যাপক, বাংলা, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া; হাবিব জাকারিয়া, অধ্যাপক, নাট্যকলা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়; কাজী মামুন হায়দার, সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়; গীতি আরা নাসরীন, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; রুশাদ ফরিদী, সহকারী অধ্যাপক, অর্থনীতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সায়েমা খাতুন, প্রাক্তন সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

Comments

The Daily Star  | English

Private airlines caught in a bind

Bangladesh’s private airline industry is struggling to stay afloat, hobbled by soaring fuel prices, punitive surcharges, and what operators describe as unfavourable policies. Of the 10 private carriers that have entered the market over the past three decades, only two -- US-Bangla Airlines and A

8h ago