'মৃত্যুর কাছে হাঁটু গেড়ে ভিক্ষা চাওয়া' কবি সরোজ দেব গুরুতর অসুস্থ

কবি সরোজ দেব। ছবি: সংগৃহীত

'জীবন বড় প্রিয় উচ্চারণ, জীবন বড় প্রিয় আলিঙ্গন' উচ্চারণ করেছিলেন যে কবি আজ তিনি প্রায় মৃত্যু শয্যায়। ৬০ দশকে উত্তরাঞ্চলের লিটলম্যাগ আন্দোলনের পুরোধা কবি সরোজ দেব (৭৩)। তার দিন কাটছে দুঃখ-কষ্ট আর অনাহারে। এখন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে আছেন হাসপাতালের বিছানায়।

পরিবারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকায় বর্তমানে কবির চিকিৎসা চলছে শুভাকাঙ্ক্ষীদের টাকায়। তার কাছের মানুষজন বলছেন, কবির আরও উন্নত চিকিৎসা দরকার।

মৃত্যুর কাছে হাঁটু গেড়ে/যে মানুষ মৃত্যু ভিক্ষা চায়/তার মতো দুঃখী কে/তার মতো হাহাকার/কে আছে কোথায়/তার দুঃখে নিদারুণ দুঃখীও খানিকটা থমকে দাঁড়ায়/তার হাহাকারে/সাগরের লোনা জল/আরও লোনা হয়ে যায়/কেননা জীবন বড় প্রিয় উচ্চারণ/কেননা জীবন বড় প্রিয় আলিঙ্গন' (মৃত্যুর কাছে-সরোজ দেব)।

কবি সরোজ দেব বর্তমানে গাইবান্ধা শহরের ঐশী ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ জাহান আফরোজা লাকীর তত্ত্বাবধানে আছেন তিনি।

সরোজ দেব ১৯৪৮ সালের ২৬ মার্চ গাইবান্ধা শহরের পূর্বপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা প্রখ্যাত ধ্রুপদী সঙ্গীত শিল্পী ওস্তাদ উপেন্দ্র নাথ দেব ও মাতা সান্তু দেব।

গত ২৫ ডিসেম্বর গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় কবিকে বেসরকারি একটি ক্লিনিকে নিয়ে যান সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বিপ্লব। পরে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করেন গাইবান্ধা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক প্রমতোষ সাহা ও সাখাওয়াত হোসেন বিপ্লব। পরে ২৮ ডিসেম্বর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কবির মূত্রথলি থেকে টিউমার অপসারণ করা হয়। গাইবান্ধার একটি ক্লিনিকে এখন তার কেমোথেরাপি চলছে।

স্কুল জীবনেই সরোজ দেবের কাব্যিক প্রতিভার উন্মেষ ঘটে। পরে কবিতা লেখার পাশাপাশি তিনি গাইবান্ধাসহ উত্তরাঞ্চলে লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সূত্রপাত করেন। শুরু করেন 'শব্দ' সম্পাদনা। কলেজ জীবন থেকেই 'শব্দ' সম্পাদক হিসেবে নাম অর্জন করেন তিনি। একটানা ৫৬ বছর 'শব্দ' প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও স্বজন শব্দাবলী, প্রাণেশ্বরীর মাচান, বজ্রে বাজে বেণু, লাল গোলাপের জন্য, শতদল, মোহনা, সংশপ্তক, শতাব্দী, নান্দনিক ইত্যাদি বিভিন্ন নামে দেড় শতাধিক সাহিত্য পত্রিকা বা লিটলম্যাগ বিভিন্ন সময়ে সম্পাদনা করেছেন। ষাট দশক থেকে তার পদচারণায় মুখরিত ছিল গাইবান্ধার সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন। গাইবান্ধার সাংস্কৃতিক সংগঠন 'সূর্যকণা' তার হাতেই গড়া।

সরোজ দেব ১৯৬৯ সালে গাইবান্ধা কলেজ ছাত্র সংসদের ম্যাগাজিন সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার সরোজ দেব দেশমাতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। বিজয়ী হয়ে ফিরে এসে তিনি ১৯৭৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেও গড়েছেন একাধিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

সরোজ দেব স্কুল জীবন থেকে কবিতা লেখা শুরু করলেও তার কবিতার বই বেরিয়েছে অনেক পরে। তার রচিত কাব্যগ্রন্থগুলো হচ্ছে, ধবল মেঘের দিনগুলো (২০০৬), অনন্ত রোদ্দুরে এসো (২০০৯), স্বরচিত সুখের সৎকার (২০১০), স্বপ্ন শুয়েছিল কুয়াশায় (২০১১) ও সময় আমাকে হত্যার কথা বলে গ্যাছে (২০১৩)। তার লেখার তুলনায় বইয়ের সংখ্যা অনেক কম।

এছাড়া তিনি অনেকগুলো গ্রন্থও সম্পাদনা করেছেন। সেগুলো হলো, রবীন্দ্রনাথের ভালোবাসার গল্প (২০০৬), শরৎচন্দ্রের ভালোবাসার গল্প (২০০৬), কবিতার যৌথ খামার (২০০৯), নির্বাচিত কবিতা (২০১২) ও ছোটদের শরৎচন্দ্র (২০১২)।

সরদেবের শুভাকাঙ্ক্ষী ও সহচর স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী রজত কান্তি বর্মণ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কবির পরিবারে আয় করার মতো কেউ নেয়। এক ছেলে আছে সে-ও বেকার। বিবাহিত ছেলের পরিবারও কবির আয়ে চলত। আয় বলতে কবির তেমন কিছু ছিল না। অনেক অন্যের কাছে সাহায্য চেয়ে চলে কবির সংসার। এখন শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহযোগিতায় তার চিকিৎসা চলছে।

এ বিষয়ে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসূলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উনার অসুস্থতার বিষয়ে আমাদের তেমন কিছু জানা ছিল না। আমরা খোঁজ-খবর নিয়ে অবশ্যই তাকে প্রয়োজনীয় সাহায্য করব।'

(এই প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন স্থানীয় গণ্যমাধ্যমকর্মী রজত কান্তি বর্মণ)

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh asks India to halt border push-ins, cites security concerns

The move follows reports that BSF pushed in around 300 people into Bangladesh between May 7 and May 9

1h ago