নরসিংদীতে ব্যাংক কর্মকর্তার আত্মহত্যা

ছবি: স্টার

নরসিংদীতে আত্মহত্যা চেষ্টা করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ডাচ-বাংলা ব্যাংকের রায়পুরা থানা সেলস ম্যানেজার আব্দুল কাইউম।

গত শনিবার তিনি আত্মহত্যা চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে তাকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সোমবার রাতে তিনি মারা যান।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গ সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে ময়নাতদন্ত শেষে তার মরদেহ নিজ বাড়িতে যাওয়া হয়েছে। বিষপানে আত্মহত্যার অভিযোগ হিসেবে এ ঘটনা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।

আব্দুল কাইউমের বড় মেয়ে কানিজ হালিমা কনক জানান, তার বাবার অধীনে মোট ৩০টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট ছিল। এর মধ্যে আলগী বাজার এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটের উদ্যোক্তা 'আনুমানিক ৫০ লাখ' টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পর ব্যাংকের রিজিওনাল ম্যানেজার তার বাবার ওপর এর পুরো দায় চাপিয়ে দেন এবং তাকে মানসিকভাবে প্রচুর চাপ দেন।

কনক বলেন, 'বাবা খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন। শনিবার সারা রাত কান্না করেছেন। রাতে কোনো এক সময়ে তিনি বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।'

গ্রাহকদের টাকা নিয়ে পলাতক ডাচ-বাংলা ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের উদ্যোক্তা

নরসিংদীতে গ্রাহকদের কোটি টাকা নিয়ে পালানোর অভিযোগ উঠেছে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এক এজেন্ট ব্যাংকিং উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে।

রায়পুরা উপজেলার আলগী বাজারে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আউটলেট পরিচালনাকারী শহিদুল ইসলাম লিটন গ্রাহকদের টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছেন—এমন খবর পেয়ে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা ভিড় করছেন ওই এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যালয়ে।

ভুক্তভোগী গ্রাহকদের দাবি, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের সুনাম থাকায় তারা এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটে টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করেছিলেন। তাদেরকে টাকা জমার রশিদও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এজেন্ট ব্যাংকের উদ্যোক্তা শহিদুল ইসলাম লিটন এই টাকা মূল শাখায় জমা না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করে পালিয়েছেন। গ্রাহকদের যে রশিদ দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো ভুয়া।

এ ছাড়া, যাদের টাকা জমা করা হয়েছিল, তাদের কাছ থেকে কৌশলে ফিঙ্গারপ্রিন্ট রেখে তা ব্যবহার করে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে টাকা।

গত বৃহস্পতিবার থেকে শহিদুল ইসলাম লিটন পলাতক রয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর রোববার থেকেই টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় আলগী বাজারে ওই এজেন্ট ব্যাংক আউটলেটে ভিড় করছেন গ্রাহকরা। তাদের কেউ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কেউ প্রবাসীদের স্বজন, কেউ প্রবাসফেরত, কেউবা শ্রমিক।

২০১৬ সাল থেকে আলগী বাজারের সততা এন্টারপ্রাইজ এই এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটটি পরিচালনা করতো।

চাঁনপুর এলাকার বাসিন্দা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, 'আমি জমি বিক্রি করে ও বিদেশ থেকে দুই ছেলের পাঠানো ৪০ লাখ টাকা জমা রেখেছি। রোববার সন্ধ্যায় এক আত্মীয়র কাছে জানতে পারি যে তাদের ৮ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে লোপাট হয়ে গেছে। আজ সকালে এজেন্ট ব্যাংকের অফিস বন্ধ পাওয়ায় তারা ভৈরব বাজার শাখায় অ্যাকাউন্টের টাকার খোঁজ নিয়ে জানতে পারে যে সেখানে মাত্র ৫৯৪ টাকা অবশিষ্ট আছে। বাকি পুরো টাকা অ্যাকাউন্ট থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।'

রায়পুরার বেগমাবাদ হুগলাকান্দি গ্রামের লিপি বেগম বলেন, '১৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা রেখেছিলাম এজেন্ট ব্যাংকটিতে। হঠাৎ খবর পেলাম এজেন্ট টাকা নিয়ে পালিয়েছে। এখানে এসেও তাই দেখছি। এখন কী করবো ভেবে পাচ্ছি না। নরসিংদী শাখাতেও যোগাযোগ করেছি। কিন্তু তারা দায় নিচ্ছে না।'

রায়পুরা উপজেলার চাঁনপুর ইউনিয়নের মাঝেরচর গ্রামের হিরন মিয়া বলেন, '৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা ডিপোজিট করেছিলাম। এখন দেখছি ডিপোজিটের পর যে রশিদ দিয়েছিল, সেগুলো ভুয়া। পুলিশের কাছে গিয়েছিলাম, তারা অভিযোগ জমা নেয়নি।'

তাদের মতো কয়েকশ গ্রাহকের পরিস্থিতি একই।

উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য রশিদ মিয়া এজেন্ট ব্যাংক কর্মচারীদের পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'অনেকে আইনের আশ্রয় নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আমরা ধারণা করছি টাকার পরিমাণ অন্তত ১০ কোটি হবে।'

বিশ্বস্ত কোনো সূত্র থেকে টাকার পরিমাণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি দ্য ডেইলি স্টার।

গ্রাহকের টাকা নিয়ে এজেন্ট পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ভেলানগর শাখার ম্যানেজার মো. অলিউল্লাহ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটা আমি দেখি না। এটা নরসিংদী রিজিওনাল অফিসের অধীনে।'

অলিউল্লাহ এ বিষয়ে কথা বলতে নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের রিজিওনাল ম্যানেজার দেওয়ান তৌহিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন এবং তার মোবাইল নম্বর দেন। কিন্তু ওই মোবাইল নম্বরটি বন্ধ রয়েছে।

নরসিংদীর সহকারী পুলিশ সুপার (রায়পুরা-বেলাব সার্কেল) আফসান আল আলম বলেন, 'আমরা ঘটনাটি শুনেছি। এখন পর্যন্ত ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বা কোনো গ্রাহক থানায় লিখিত অভিযোগ নিয়ে আসেনি। অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে, পুলিশ ছায়া তদন্ত শুরু করেছে।'

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোজলিন শহিদ চৌধুরী বলেন, 'অভিযোগ পেলে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভুক্তভোগীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে চেষ্টা করবো।'

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

45m ago