৩০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে জমজমাট খেজুর গুড়ের হাট

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে জমে ওঠা দেশের সর্ববৃহৎ খেজুর গুড়ের হাটের চিত্র। ছবি: স্টার

বিস্তীর্ণ খেলার মাঠজুড়ে সারি সারি সাজানো গুড়ের ভাঁড়। সেইসঙ্গে ক্রেতা-বিক্রেতা ও শ্রমিকদের কর্মযজ্ঞ, হাঁকডাক।

এটি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে জমে ওঠা দেশের সর্ববৃহৎ খেজুর গুড়ের হাটের চিত্র।

গুড় বেচাকেনার জন্য এই হাটের ঐতিহ্য ৩০০ বছরের। সপ্তাহে শুক্রবার ও সোমবার বসে এ হাট। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা।

স্বাদে ও গন্ধে এখানকার গুড় অতুলনীয়। রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গুড় কিনতে আসেন বেপারিরা। প্রতি সপ্তাহে দুই কোটিরও বেশি টাকার গুড় কেনাবেচা হয় এ হাটে।

সরেজমিনে শুক্রবার সকালে এ হাট ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে মুখরিত। এখানকার খেজুর গুড়ের যেমন বেড়েছে চাহিদা, তেমন বেড়েছে দাম। মাটির হাড়ি বা ভাঁড়ের আকার ও ওজন ভেদে দাম ওঠানামা করে। প্রতি কেজি খেজুর গুড় বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। আর এক ভাঁড় গুড় বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায়।

হাটের একাধিক স্থানে দাঁড়িপাল্লায় গুড় মেপে হাটে ভেড়ানো ট্রাকগুলোতে গুড়ের ভাঁড় তুলে সাজানো হয়। দরদাম ঠিক হলে ওজন করে ভর্তি করা হয় ট্রাক। আবার কেউ কেউ নিজের জন্য বা আত্মীয়ের বাড়ি পাঠানোর জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী কিনে নেন গুড়।

শীত মৌসুমে ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এই হাটে চলে খেজুর গুড় বেচাকেনা। শীত মৌসুমে দেশের সবচেয়ে বেশি খেজুর গুড়ের বেচাকেনা হয় এ হাটে। মৌসুমের প্রায় পুরো সময়জুড়েই হাজারো ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়ে জমজমাট থাকে এ হাট।

সরোজগঞ্জ হাটে গুড় বিক্রি করতে আসা কৃষক আব্দুল আলিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা বাড়িতে খুব যত্নের সঙ্গে গুড় তৈরি করি। এতে চিনি বা কোনো রাসায়নিক মেশাই না। এসব গুড় পুরোটাই খাঁটি। তবে আগের তুলনায় গুড়ের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন ১২ থেকে ১৪ কেজি ওজনের এক ভাঁড় গুড় বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা দরে।'

ঢাকার কারওয়ান বাজার থেকে গুড় কিনতে আসা ব্যবসায়ী হাসান আলী বলেন, 'আমি ২০ বছর ধরে এ হাটে গুড় কিনতে আসি। এখান থেকে গুড় নিয়ে আমরা ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠাই। এ হাটে গুড়ের দাম বেশি হলেও গুণগত মান ভালো।'

খেজুর গুড় কিনতে আসা মিজানুর রহমান বলেন, 'শুধু দেশে নয়, বিদেশেও এই হাটের গুড়ের সুখ্যাতি রয়েছে। তাই প্রতি বছর মালয়েশিয়ায় আমার এক আত্মীয়ের কাছে এখানকার গুড় পাঠাতে হয়।'

সরোজগঞ্জ বাজার কমিটির সভাপতি আলী আহম্মেদ হাসানুজ্জামান বলেন, '৩০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই গুড়ের হাট বসে। প্রতি হাটে গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ টন খেজুর গুড় বিক্রি হয়।'

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা জেলায় ২ লাখ ৭২ হাজার খেজুর গাছ রয়েছে। চলতি মৌসুমে ৩ হাজার মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মৌসুমে প্রতিটি গাছ থেকে অন্তত ১০ কেজি গুড় পাওয়া যায়। সে হিসাবে প্রতি বছর গড়ে ৩ হাজার মেট্রিক টন গুড় উৎপাদিত হয়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতি বছর খেজুর গাছ প্রস্ততে কর্মসংস্থান হয় ৩০ হাজার কৃষকের। বিশুদ্ধ গুড় উৎপাদনে তাদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ মৌসুমে ৪০ কোটি টাকার গুড় বেচাকেনার সম্ভাবনা রয়েছে।'

Comments