মেট্রোরেলে নারী যাত্রীদের স্বস্তি

সংরক্ষিত এই কোচ শুধু উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলাচলকারী নারীদের নিরাপত্তাই দিচ্ছে না, বরং আরও বেশি নারী যাত্রীকে এই সেবা নিতে উৎসাহিত করছে।
দ্রুত এবং নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ায় অনেক নারী যাত্রী মেট্রোরেলে ভ্রমণ করেন। ছবি: প্রবীর দাশ/ স্টার

একটা শহর যেখানে নারীবান্ধব গণপরিবহন খুব কমই দেখা যায় এবং যৌন হয়রানি নিত্যদিনের ঘটনা, সেখানে দেশের প্রথম মেট্রো রেলে নারী যাত্রীদের জন্য সংরক্ষিত একটি কোচ যেন আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।

সংরক্ষিত এই কোচ শুধু উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলাচলকারী নারীদের নিরাপত্তাই দিচ্ছে না, বরং আরও বেশি নারী যাত্রীকে এই সেবা নিতে উৎসাহিত করছে।

তিলোত্তমা জাহানের (৩০) কথাই ধরা যাক। পেশায় চাকরিজীবী এই নারীকে তার ৭ মাস বয়সী মেয়েকে নিয়ে প্রতিদিন কাজীপাড়া থেকে কারওয়ান বাজারে আসতে হয়।

'অফিস চলাকালীন একটি উবার বা সিএনজিচালিত অটোরিকশা পাওয়া প্রায় দুঃসাধ্য। অনেক সময় ঘণ্টা লেগে যায় এসব পেতে আর ভাড়াও ৩০০ টাকার কম হয় না,' বলছিলেন তিলোত্তমা।

যে কারণে অফিস শেষে বাসায় ফিরতে তার স্বামীর জন্য অপেক্ষা করতে হতো তাকে।

এখন একই যাত্রার জন্য মাত্র ৩৬ টাকা খরচ হয় এবং তার স্বামীকে আর গুলশানে তার কর্মস্থল থেকে আসতে হয় না তাকে নিতে, বলছিলেন তিলোত্তমা।

যে টাকা সাশ্রয় করতে পারছেন তাতে মেয়ের পুষ্টিকর খাবারের পেছনে ব্যয় করতে পারছেন বলে জানান।

'আমার সঙ্গে ছোট একটা শিশু থাকায় অন্যরা আমাকে বসার জন্য তাদের জায়গা ছেড়ে দিতে চান। ‌এটাই মেট্রোরেলে আমার সবচেয়ে সেরা অভিজ্ঞতা,' বলেন তিলোত্তমা।

৩০ বছর বয়সী চাকরিজীবী প্রিয়াঙ্কা রায় বলেন, যৌন হয়রানির ভয়ে বেশিরভাগ নারীই গণপরিবহন এড়িয়ে চলেন।

ব্র্যাকের ২০১৭ সালের এক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে গণপরিবহন ব্যবহারকারী ৯৪ শতাংশ নারী কোনো না কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার হন।

প্রিয়াঙ্কা আরও বলেন, 'তবে এখানে সবাই নারী। আমাকে বাসে বা গণপরিবহনে উঠতে সাহায্য করার আড়ালে কন্ডাক্টরদের পিঠ স্পর্শ করা বা ইচ্ছাকৃতভাবে আমার দিকে ঝুঁকে থাকা কারো অস্বস্তি সহ্য করার বিষয়ে আমাকে আর চিন্তা করতে হবে না।'

ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী নূরজাহান কবীরের পক্ষে আগে প্রতিদিন সকালে বাসে ওঠা প্রায় অসম্ভব ছিল।

'একটা আসন খুঁজে পেতে পুরুষ যাত্রীদের ভিড়ের মধ্যে ঠেলা, ধাক্কাধাক্কির দুশ্চিন্তা প্রতিদিনের জন্য ট্রমা ছিল। উত্তরা থেকে পুরান ঢাকায় আমার পোশাক নিয়ে মানুষজনের বাজে মন্তব্য, শিস দেওয়া এসব আর সহ্য করতে হয় না এখন।

একই কথা বলেন সাভার সিটি ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক মহসিনা আহমেদ।

তিনি বলেন, 'কারওয়ান বাজার থেকে আশুলিয়া যাতায়াতের সময় আমাকে প্রতিদিন তিনটি পরিবহন বদলাতে হতো যা আমাকে ক্লান্ত করে ফেলত। তবে এখন আমি মেট্রোতে যাই। এটা একইসাথে দ্রুততার সঙ্গে এবং নিরাপদে আমাকে পৌঁছে দেয়।'

অধিকাংশ অভিভাবক নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকায় কাজী তাজরিহা আলম সিমির মতো অনেককেই নিজের ইচ্ছামতো বাইরে যেতে দেওয়া হয় না।

তবে এখন আমি সহজেই মিরপুরে কেনাকেটার জন্য যেতে পারি, হেসে বলছিলেন সিমি।

৫০ বছর বয়সী রহিমা বেগমের জন্য যাতায়াত ছিল খুবই কষ্টকর। প্রায়শই, তিনি মতিঝিলে তার বৃদ্ধ বোনকে দেখতে যেতে পারতেন না, কারণ তার ছেলেরা গণপরিবহনে একা যেতে দিতে নিরাপদ বোধ করতেন না।

তিনি আরও বলেন, 'এখন আমার ছেলেরা আমাকে বোনের সঙ্গে দেখা করতে যেতে প্রায়ই বলে। কেবলমাত্র যদি আমি মেট্রোরেলে যাই তাহলেই।'

পুরুষ যাত্রীদের ঢুকতে বাধা দিতে নারী বগির সামনে পাহারায় আছেন এমআরটির দুই নারী পুলিশ সদস্য।

তাদের মতে, এখনও পর্যন্ত কোনো যৌন হেনস্থার ঘটনা তাদের নজরে আসেনি।

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

2h ago