ওজন স্কেলের টোল ফাঁকি দিতে ২০ কিলোমিটার ঘুরে বিকল্প রাস্তায় ট্রাক

পায়রা সেতু
পটুাখালী-ঢাকা মহাসড়কের পায়রা সেতুর টোল ফাঁকি দিতে বিকল্প পথে পণ্যবাহী ট্রাকগুলো পায়রাকুঞ্জ ফেরি পার হওয়ায় পটুয়াখালী-মির্জাগঞ্জ সড়কে বেহাল দশা। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

পটুয়াখালী-ঢাকা মহাসড়কের লেবুখালী এলাকায় পায়রা নদীর ওপর পায়রা সেতুতে ওজন স্কেল ফাঁকি দিতে পণ্যবোঝাই ভারী ট্রাকগুলো বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করছে।

ট্রাকগুলো বাকেরগঞ্জ থেকে মহাসড়কে না গিয়ে প্রায় ২০ কিলোমিটার ঘুরে মির্জাগঞ্জের পায়রাকুঞ্জ ফেরিঘাট ব্যবহার করে পটুয়াখালী যাচ্ছে।

এসব ভারী যানবাহন চলাচলে পটুয়াখালী-মির্জাগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক ও সড়কের অন্তত পাঁচটি জরাজীর্ণ বেইলি ব্রিজ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

এতে একদিকে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অপরদিকে পটুয়াখালী-মির্জাগঞ্জ সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

সম্প্রতি একদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পায়রাকুঞ্জ ফেরিঘাটে থেকে দেখা যায়, সারাদিনে সেখানে ১৯১টি ভারী ট্রাক পার হয়েছে।

ফেরির কর্মীরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, পায়রা সেতুর টোল ব্যবস্থা ডিজিটালাইজড হওয়ার আগে এ ফেরিঘাটে দিনে মাত্র ১০ থেকে ১২ ট্রাক পারাপার হতো।

তারা আরও জানান, সাধারণত পাঁচ টন ট্রাকে ২০-২৫ টন পণ্য থাকায় সেতুতে জরিমানা দিতে হয়। তাই অনেক ট্রাক এখন ফেরি পার হচ্ছে।

পায়রা সেতু
মির্জাগঞ্জের পায়রাকুঞ্জ ফেরিঘাট। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

বিকল্প সড়কে চলাচলকারী এক ট্রাকচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, বিভিন্ন সেতুর টোলসহ আনুষঙ্গিক খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। ট্রাকে কিছু বাড়তি পণ্য পরিবহন করে এই অতিরিক্ত খরচ মেটানোর চেষ্টা করি। পায়রা সেতু পার হওয়ার সময় জরিমানা দিলে আমাদের আরও ক্ষতি হয়। এ কারণে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করছি।'

পটুয়াখালী সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় এক হাজার ১১৮ কোটি টাকা খরচে পায়রা নদীর ওপর এক হাজার ১৭০ মিটার দীর্ঘ ও ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার প্রস্থের সেতু তৈরি করা হয়। ২০২১ সালের ২৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটি উদ্বোধন করেন।

পদ্মা সেতু চালুর পর এ সেতু দিয়ে সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ গড়ে উঠে। প্রথম দিন থেকেই সেতুটিতে টোল ব্যবস্থা চালু হলেও, টোল আদায় সিস্টেম সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড হয় গত বছরের আগস্টে।

এতে এখন সেতু পারাপারে ট্রাকগুলোকে ওজন স্কেলের ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। ওজন স্কেল পার হতে পারলেই সেতু পারাপারের অনুমতি পাচ্ছে ট্রাক।

এ ছাড়াও, ওজন স্কেল পারাপারের জন্য ছয় চাকার ট্রাকের স্বাভাবিক লোড ক্যাপাসিটি ২২ টন, ১০ চাকার ৩০ টন, ১৪ চাকার ৪০ টন, ১৮ চাকার ৪৭ টন, ২২ চাকার ৪৯ টন ও ২৬ চাকার ৫২ টন।

এ ওজন সীমার এক টন অতিরিক্ত ওজনের জন্য পাঁচ হাজার ও পরবর্তী প্রতি টনের জন্য ১০ হাজার টাকা করে জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। ট্রাকগুলো বেশি পণ্য বোঝাই করায় সেতুর ওজন স্কেলে তাদের জরিমানা দিতে হয়।

এ কারণে টোল ডিজিটালাইজড হওয়ার পর থেকেই এ সড়কের ট্রাকগুলোর বেশিরভাগই প্রায় ২০ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ ঘুরে পটুয়াখালী-মির্জাগঞ্জ সড়কের পায়রাকুঞ্জ ফেরি পার হয়ে পটুয়াখালী শহরের চৌরাস্তায় আসছে। সেখান থেকে কুয়াকাটাসহ জেলার অন্যান্য স্থানে পণ্য পরিবহন করছে।

পায়রা সেতুর টোল অপারেশন ম্যানেজার মো. মইনুল হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছরের আগস্টে টোল ব্যবস্থা ডিজিটালাইজড করার পর থেকে সব ধরনের ট্রাকের ওজন স্কেল দিয়ে যাতায়াত করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অতিরিক্ত পণ্য বহনের জন্য ট্রাককে জরিমানা দিতে হয়। জরিমানা এড়াতে বেশিরভাগ ট্রাক বিকল্প সড়ক ব্যবহার করছে। এতে প্রতিদিন কমপক্ষে তিন লাখ টাকার রাজস্ব কম আদায় হচ্ছে।'

'রাজস্ব ফাঁকির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'ডিজিটালাইজড সিস্টেম চালুর পর সেতু থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ছয় মাসে নয় কোটি ৯৩ লাখ টোল আদায় হয়েছে।'

পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পায়রা ব্রিজের টোল প্লাজা এড়িয়ে পটুয়াখালী-মির্জাগঞ্জ সড়কে ভারী ট্রাক চলাচলের কারণে সড়কের কিছু অংশ ধসে গিয়ে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ওই সড়কে পাঁচটি স্টিলের বেইলি ব্রিজ আছে। সেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। ১০ টনের বেশি পণ্যবাহী যানবাহন যেন ওইসব সেতু পার হতে না পারে, সে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।'

'নির্দেশনা অমান্য করে ভারী ট্রাক চলাচল করায় সড়কটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে,' যোগ করেন তিনি।

পটুয়াখালী সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী এ এম আতিক উল্লাহ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পটুয়াখালী-মির্জাগঞ্জ সড়কে ভারী যানবাহন চলাচল করায় সড়কের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। আর ওই সড়কটি কাঠামোগতভাবে দুর্বল। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Gaza rescuers say Israeli forces kill 60, half near aid centres

Civil defence spokesman Mahmud Bassal told AFP that five people were killed while waiting for aid in the southern Gaza Strip and 26 others near a central area known as the Netzarim corridor, an Israeli-controlled strip of land that bisects the Palestinian territory

31m ago