মায়ের চেষ্টায় মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন পূরণ হলো বগুড়ার ত্রৈত ভাইয়ের

মায়ের চেষ্টায় মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন পূরণ হলো বগুড়ার যমজ ৩ ভাইয়ের
আর্জিনা বেগম এবং তার ৩ ছেলে রাফিউল ইসলাম, সফিউল ইসলাম ও মাফিউল ইসলাম | ছবি: সংগৃহীত

রাফিউল ইসলাম, সফিউল ইসলাম ও মাফিউল ইসলামের জন্ম একইসঙ্গে। তাদের তিনজনের বয়স ২১ বছর। ত্রৈত ট্রিপলেট ভাইয়ের সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির স্বপ্ন পূরণ হয়েছে মায়ের প্রচেষ্টায়।

এই সাফল্যের ঘটনা ঘটেছে বগুড়ার ধুনট উপজেলার বথুয়াবাড়ী গ্রামে। গত বছর মাফিউল চান্স পেয়েছিলেন সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটে।

দ্বিতীয়বারের প্রচেষ্টায় এবার রাফিউল নোয়াখালীর মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ ও তার ভাই সাফিউল দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।

গতকাল রোববার মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা ফলাফল প্রকাশিত হয়।

এর আগে তিন ভাই একইসঙ্গে ধুনট মাঠপাড়া হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক ও বগুড়া সরকারি শাহ সুলতান কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন।

রাফি, সাফি ও মাফি (সংক্ষিপ্ত নাম) যখন প্রথম শ্রেণির ছাত্র, তখন তাদের স্কুলশিক্ষক বাবা গোলাম মোস্তফার হার্ট অ্যাটাক হয়। বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুই দিন চিকিৎসাধীন নেওয়ার পরে তৃতীয় দিন তার মৃত্যু হয়।

মোস্তফার স্ত্রী আর্জিনা বেগম তখন একেবারেই অসহায় হয়ে পড়েন কিন্তু ভেঙে পড়েননি।

'মাত্র দুইদিন চিকিৎসার সুযোগ পেয়েছিলাম। আমরা চিকিৎসার কোনো ত্রুটি রাখিনি। টাকারও কোনো অভাব হয়নি কিন্তু বাঁচাতে পারিনি,' দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন আর্জিনা।

তিনি বলেন, 'আস্তে আস্তে সন্তানদের মানুষ করতে থাকি। আমার স্বামী প্রায় ১০ বিঘা আবাদি জমি রেখে গেছেন, সেই জমি বর্গা রেখেই চলে সন্তানদের পড়াশোনার খরচ।'

রাফিউল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রথমবার মাত্র দুই মাস ১০ দিন সময় ছিল। তার মধ্যে আমার জ্বর হয়েছিল, সেই কারণে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারিনি। শুধু মাফিউল চান্স পেয়েছিল। আমাদের বিশ্বাস ছিল আমরাও চান্স পাব, তাই পরের বছর আবার প্রস্তুতি নেই। আত্মবিশ্বাস ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পেতে আমাদের সাহায্য করেছে।'

ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা কীভাবে হলো জানতে চাইলে রাফিউল বলেন, 'এটা একটা সেবামূলক পেশা, সেই কারণেই আমাদের তিন ভাইয়ের ডাক্তারি পড়ার ইচ্ছা হয়। তাছাড়া ২০১৯ সালে আমার ভাই সাফিউল একবার অসুস্থ হয়ে পড়ে। তীব্র মাথাব্যথা নিয়ে একটি ক্লিনিকে যায় ডাক্তার দেখতে। গিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলে তার খুব ভালো লাগে। ডাক্তারকে দেখেই তার মাথাব্যথা অনেকটা সেরে যায়। সেই থেকে আমাদের ডাক্তার হওয়ার বাসনা আরও বাড়ে।

'তাছাড়া ডাক্তার হতে পারলে নিজেদের উন্নয়নের সাথে সাথে অনেক মানুষের সেবা করা যায়, সেই জন্যই আসলে আমরা ডাক্তার হতে চেয়েছি,' যোগ করেন রাফি।

তিন ভাইয়ের এই সাফল্যের পেছনে কার অবদান বেশি জানতে চাইলে রাফি বলেন, 'আমাদের বয়স যখন ছয় বছর, তখন বাবা মারা যান। এর পরে মা আমাদের বড় করেছেন, পড়াশোনা করিয়েছেন। সুতরাং আল্লাহর পরে আমার মায়ের অবদানই বেশি।'

ডাক্তার হয়ে নিজ এলাকায় দায়িত্ব নিয়ে মানুষের সেবা করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন এই শিক্ষার্থী।

ছেলেরা ভালো ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করবে, সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন আর্জিনা।

Comments

The Daily Star  | English

Police, Bida launch special security measures for foreign investors

Held meeting with officials of foreign companies, introduced dedicated emergency contact line

1h ago