বহুতল ভবনে অগ্নিনিরাপত্তা: আইনের ফাঁকফোকরের সুযোগ নিচ্ছেন মালিকরা

রাজধানীর বেইলি রোডে গত সপ্তাহে একটি সাত তলা ভবনে অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৪৬ জন নিহত ও অনেকে গুরুতর আহত হয়েছেন। ছবি: আনিসুর রহমান/ স্টার

নগর বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক ভবন মালিক বহুতল ভবনের বিরোধপূর্ণ আইনি সংজ্ঞার সুযোগ নিয়ে অগ্নি নিরাপত্তা বিধিমালা মেনে চলেন না।

ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ১০ তলা বা ৩৩ মিটারের বেশি উঁচু ভবনকে বহুতল ভবন বলা হয়।

তবে অগ্নি প্রতিরোধ আইনে ছয় তলার বেশি ভবনের যে কোনো স্থাপনাকে বহুতল হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। ভবনটি ছয় তলার বেশি হলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স থেকে অনাপত্তিপত্র (এনওসি) নিতে হবে মালিকদের।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, 'কিন্তু অনেক মালিক এনওসি নিতে চান না, কারণ ভবন নির্মাণের নিয়ম অনুযায়ী ১০ তলার কম হলে এনওসি বাধ্যতামূলক নয়।

তিনি আরও বলেন, বহুতল ভবনের অভিন্ন সংজ্ঞা না থাকায় অনেক সাত থেকে ১০ তলা ভবন, বিশেষ করে আবাসিক ভবনগুলোতে দুটি সিঁড়ি ও অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম থাকে না।

মালিকরা শুধু রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদন নিয়ে থাকেন, যা এসব ভবনকে বহুতল ভবন হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। আদিল বলেন, এসব ভবনের জন্য একাধিক সিঁড়ি ও অন্যান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকাও বাধ্যতামূলক নয়।

গত সপ্তাহে বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জন নিহত হওয়ার পর অগ্নি নিরাপত্তা বহুল আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগুনে পুড়ে যাওয়া ভবনটিতে কেবল একটি সিঁড়ি ছিল এবং অগ্নি নিরাপত্তা সরঞ্জামেরও অভাব ছিল।

বহুতল ভবনের একটি অভিন্ন সংজ্ঞা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে এ থেকে বোঝা যায় কোনো ভবনের একাধিক সিঁড়ি, জরুরি লিফট, স্প্রিংকলার, অগ্নি প্রতিরোধক দরজা, পর্যাপ্ত অগ্নি নির্বাপক এবং জলাধার থাকতে হবে কিনা।

আদিল বলেন, নিয়ম-নীতি এবং নিয়মিত নজরদারি থাকলে অনেক প্রাণই বাঁচানো যেত।

রাজধানীর ধানমন্ডি, বনানী ও খিলগাঁও এলাকায় ছয় তলার বেশি ভবনের অনেক ভবনে অগ্নি প্রতিরোধ আইন লঙ্ঘন করে মাত্র একটি সিঁড়ি রয়েছে।

ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ প্রণয়নের আগে রাজউক ছয় তলার বেশি ভবনগুলোকে বহুতল ভবন হিসেবে স্বীকৃতি দিত।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, 'আমি মনে করি ৯০ শতাংশ আবাসিক বহুতল (ছয় তলার ওপরে) মালিকরা আমাদের নিরাপত্তা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মাথা ঘামান না।'

এছাড়া বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত যে কোনো ভবনের জন্য ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিতে হয়। ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক অকুপেন্সির ভিত্তিতে এনওসি জারি করেন।

তার মতে, বাণিজ্যিক ভবনের অনেক মালিক এনওসি পান। কিন্তু একবার পেয়ে গেলে তারা নিরাপত্তা পরিকল্পনার কথা ভুলে যান।

'তারা শুধু কিছু অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র এবং হোস রিল রাখে, কিন্তু পরিকল্পনার অন্যান্য বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করেন না।'

তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা অগ্নি নিরাপত্তায় বিনিয়োগ করতে চান না।

ঢাকার প্রায় ৮৪ শতাংশ বহুতল ভবন (ছয় তলার ওপরে) ঝুঁকিপূর্ণ।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সহ-সভাপতি ইকবাল হাবিব বলেন, সাত তলা বাণিজ্যিক কাম আবাসিক ভবনের মালিকরা আইনি অস্পষ্টতার সুযোগ নিয়েছে।

এ বিষয়ে রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে গতকাল যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় প্রাথমিকভাবে একমত হয়েছে, ছয় তলার ওপরের ভবনগুলোকে বহুতল ভবন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। কিন্তু অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের চাপের কারণে অগ্রগতি হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিরপুরের এক আটতলা ভবন মালিক বলেন, ফায়ার সার্ভিসের এনওসি দরকার আছে বলে তার জানা নেই।

অন্য এক ভবন মালিকের মতে, সরকারি অফিসে হয়রানির কারণে মানুষ এনওসি এড়াতে চেষ্টা করে।

Comments

The Daily Star  | English
US tariff cut helps Bangladesh garment industry

Will Bangladesh benefit from higher US tariffs on China, India?

The Trump administration’s imposition of higher reciprocal tariffs on India and China, two of Bangladesh’s main competitors in the global readymade garments sector, is definitely a boon for Bangladesh, according to local exporters.

11h ago