সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে বাংলাদেশি জাহাজ, ২৩ ক্রু জিম্মি

জাহাজটি চট্টগ্রামভিত্তিক কেএসআরএমের সহযোগী সংস্থা এসআর শিপিং লাইনসের।
জলদস্যুদের কবলে পড়া গোল্ডেন হক নামে পরিচিত জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়েছে পণ্যবাহী বাংলাদেশি জাহাজ। আজ মঙ্গলবার দুপুরে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে হামলার পরে জাহাজের ২৩ বাংলাদেশি ক্রুকে জিম্মি করেছে দস্যুরা।

সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জাহাজটি চট্টগ্রামভিত্তিক কবির স্টিল অ্যান্ড রি-রোলিং মিলের (কেএসআরএম) সহযোগী সংস্থা এসআর শিপিং লাইনসের।

ম্যাপে জাহাজটির বর্তমান অবস্থান। ছবি: সংগৃহীত

কর্মকর্তারা জানান, জাহাজটি আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় জলদস্যুরা জাহাজের দখল নেয়। 

কেএসআরএমের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা জানতে পেরেছি আমাদের জাহাজটি ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়েছে। দস্যুরা জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। তবে ২৩ ক্রু জাহাজের কেবিনের ভেতরে নিরাপদে আছেন বলে জানতে পেরেছি।'

'আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি,' বলেন তিনি।

জিম্মি হওয়া ক্রুরা হলেন-ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ, চিফ অফিসার মোহাম্মদ আতিকুল্লাহ খান, দ্বিতীয় কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী, তৃতীয় কর্মকর্তা মো. তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট মো. সাব্বির হোসেন, প্রধান প্রকৌশলী এএসএম সাইদুজ্জামান, দ্বিতীয় প্রকৌশলী মো. তৌফিকুল ইসলাম, তৃতীয় প্রকৌশলী মো. রোকন উদ্দিন, চতুর্থ প্রকৌশলী তানভীর আহমদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহিম খলিল উল্লাহ, এবি মো. আনোয়ারুল হক, এবি মো. আসিফুর রহমান, এবি সাজ্জাদ হোসেন, ওএস জয় মাহমুদ, ওএস মো. নাজমুল হক, ওএস আইনুল হক, অয়েলার মোহাম্মদ শামসউদ্দিন, মো. আলী হোসেন, ফায়ারম্যান মোশারফ হোসেন শাকিল, চিফ কুক মো. শফিকুল ইসলাম, জিএস মো. নূর উদ্দিন ও ফিটার মো. সালেহ আহমেদ। তাদের মধ্যে ১১ জন চট্টগ্রামের বলে জানা গেছে।

যোগাযোগ করা হলে এসআর শিপিং লাইনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ক্যাপ্টেন মেহরুল করিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঘটনাটি সোমালিয়ান উপকূলের প্রায় ৫০০ নটিক্যাল মাইল দূরে ঘটেছে। প্রথমে জাহাজের ক্যাপ্টেন আমাদের জলদস্যুদের আক্রমণের কথা জানান। আমরা তাকে যেকোনো মূল্যে তাদের ঠেকানোর নির্দেশ দেই। ১৫ মিনিট পর ক্যাপ্টেন একটি ইমেইল পাঠান, যেখানে  তিনি জানান যে জলদস্যুরা জাহাজের দখল নিয়েছে।'

জাহাজটি ৫৮ হাজার মেট্রিক টন কয়লা বহন করছিল বলে জানান তিনি।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ক্যাপ্টেন আনাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জিম্মি এক ক্রুর কাছ থেকে একটি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ পেয়েছি। মেসেজে বলা হয়েছে যে, জলদস্যুরা জাহাজটির দখল নিয়েছে এবং তাদের (ক্রুদের) কেবিনের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছে। জলদস্যুদের কাছে ভারী অস্ত্র ও গোলাবারুদ রয়েছে।'

'ক্রুরা আমাদের কাছে সাহায্য চেয়েছে। আমরা সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি,' বলেন তিনি।

কেএসআরএম গ্রুপের মোট ২৩টি জাহাজ আছে, যেগুলো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রুটে চলাচল করছে। গোল্ডেন হক নামে পরিচিত এমভি আবদুল্লাহ গত বছর কেএসআরএম গ্রুপের মালিকানায় আসে।

উল্লেখ্য, এসআর শিপিংয়ের এমভি জাহান মনি নামের জাহাজ ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর ভারতের উপকূলে আরব সাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল।

ওই জাহাজের ২৫ ক্রু এবং প্রধান কর্মকর্তার স্ত্রী জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হন। প্রায় ১০০ দিন জিম্মি থাকার পর তাদের উদ্ধার করা হয়।

Comments