ভেজালমুক্ত খাদ্য তৈরি ও সরবরাহের অঙ্গীকার মানিকগঞ্জ শহরের ব্যবসায়ীদের

মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘পবিত্র রমজানে রোজাদারদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিরাপদ ইফতার প্রস্তুত বিষয়ক প্রশিক্ষণ’ কর্মশালায় তারা এই অঙ্গীকার করেন।
ছবি: স্টার

ভেজালমুক্ত খাদ্য তৈরি ও সরবরাহের অঙ্গীকার করেছেন মানিকগঞ্জ জেলা শহরের বিভিন্ন ধরনের খাবার প্রস্তুত ও সরবারহকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীরা।

মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত 'পবিত্র রমজানে রোজাদারদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিরাপদ ইফতার প্রস্তুত বিষয়ক প্রশিক্ষণ' কর্মশালায় তারা এই অঙ্গীকার করেন।

কর্মশালার শুরুতে ভেজাল খাদ্যের ক্ষতিকর দিক ও দোষী ব্যক্তিদের ‍বিরুদ্ধে আইনের শাস্তি সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা নুর-ই-আলম সোহাগ।

তিনি বলেন, 'পোড়া ভোজ্য তেল বারবার ব্যবহার করা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্নক ক্ষতিকর। বারবার বলার পরেও ব্যবসায়ীরা হোটেলগুলোতে এই কাজ করে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি করছেন। পোড়া তেল দিয়ে বায়োডিজেল তৈরি হচ্ছে। অস্ট্রিয়া ও নেদারল্যান্ডের প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান 'মুনজির' ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লিটার প্রতি ৬০ টাকা দিয়ে এই পোড়া তেল কিনে নিচ্ছেন। তাদের প্রতিনিধি দোকান থেকে টাকা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। অথচ একশ্রেণীর ব্যবসায়ীরা তাদের পোড়া তেল বিক্রি না করে তা বারবার রান্নার কাজে ব্যবহৃত জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি করছেন।' 

'হোটেল ব্যবসায়ীরা অল্পদাম দিয়ে বাজার থেকে নিম্নমানের সস কিনে তা ভোক্তাদের খাওয়াচ্ছেন। জিলেপিতে ক্ষতিকর হাইড্রোস দিচ্ছেন যা ক্যানসারের অন্যতম কারণ। বিভিন্ন ধরণের খাবার প্রস্তুত করার সময়ে কাপড়ের রংসহ নানা ধরনের ক্ষতিকর জিনিস দিচ্ছেন। হোটেলের সামনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখছেন। অথচ রান্নাঘরের ভেতরে অস্বাস্থ্যকর অবস্থা। ফ্রিজের ভেতরে মাছ, মাংস, সবজি, ফলমূলমহ নানা ধরনের জিনিসপত্র একই চেম্বারে রাখছেন, যা অত্যন্ত ক্ষতিকর। তরমুজ ব্যবসায়ীরা ইনজেকশন পুশ করে তরমুজের ভেতরের রং লাল করছেন। এটাও ক্ষতিকর,' বলেন তিনি। 

তিনি আরও বলেন, 'মাছ ও মাংস থেকে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হয়। কিন্তু মাছ ও অন্যান্য মাংসের দাম বেশি হওয়ায় অধিকাংশ মানুষ ফার্মের মুরগি খাচ্ছেন। এই ফার্মের মুরগির খাদ্যে ভারী ধাতু থাকে যা অত্যন্ত ক্ষতিকর। এই ভারী ধাতু মুরগীর গিলা, কলিজা, হাড় ও পায়ে জমা হয়। একারণে ফার্মের মুরগির মাংস ছাড়া এসব গিলা, কলিজা, হাড় ও পা খাওয়া খুবই ক্ষতিকর। তবে, দেশি মুরগির সব অংশই খাওয়া যায়। কেননা, দেশি মুরগিকে খাদ্য কিনে খাওয়াতে হয় না।' 

তিনি ভেজাল খাদ্য তৈরি ও সরবরাহ পরিহার করার অনুরোধ জানান এবং তা অমান্য করলে আইন প্রয়োগের হুঁশিয়ারি দেন। 

এরপর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক শাহীনা পারভীন ব্যবসায়ীদের বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, 'দিনশেষে আমরা সবাই ভোক্তা। আপনি ভেজাল জিনিস তৈরি করে বিক্রি করছেন, আমরা কিনছি। আবার অন্য একজন অন্যকিছুতে ভেজাল দিচ্ছে, সেটা আপনিসহ অন্যরা কিনছে। এতে করে আমি, আপনি-সকলেই প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছি এবং ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। এরচেয়ে ভালো, আসুন আমরা আজ থেকে অঙ্গীকার করি, আমরা ভেজাল খাদ্য তৈরি ও সরবরাহ বন্ধ করে সকলকে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার তৈরি করে সরবরাহ করি।' 
এরপর একে একে কর্মশালায় উপস্থিত বিভিন্ন ধরণের খাবার প্রস্তুত ও সরবারহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।
মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী এম এ জামাদ কাজল বলেন, 'আমরা অতীতে অল্পদামী সস কিনে তা ভোক্তাদের খাইয়েছি। কিন্তু আজ থেকে কথা দিলাম- আমি আর ভবিষ্যতে অল্পদামী সস কিনে কাউকে খাওয়াব না। যারা এই ভেজাল ব্যবসা করে তাকে ধরিয়ে দিতে সহযোগিতা করব।'

হোটেল ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম বলেন, 'নিজ ভালো, দুনিয়া ভালো। আমরা কথা দিলাম-আজ থেকে ভেজাল ব্যবসা করবো না, কাউকে করতে দেবোও না।'

বেউথা এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী নুরুল হক নুরু বলেন, 'কিছু লোক দুই নম্বরি ব্যবসা করে অন্য ব্যবসায়ীদের সুনাম নষ্ট করছে। এব্যাপারে আমরা সোচ্চার থাকব যাতে কেউই ভেজাল ব্যবসা না করতে পারে।'

মুন্নু ক্যাফে এবং রেস্টুরেন্টের প্রতিনিধি ফিরোজ আহমেদ বলেন, 'আমাদের প্রতিষ্ঠানে পোড়া ভোজ্য তেল দ্বিতীয়বার ব্যবহার হয় না। আমরা একবার ব্যবহারের পর ওই পোড়া তেল ফেলে দেই। কেউ যদি কিনতে চায়, আমরা বিক্রি করতে রাজি আছি।' 

মানিকগঞ্জ শহরের মিষ্টি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান মিন্টু বলেন, 'আজ আমরা ভোজাল খাদ্যের ভয়ানক ক্ষতিকর বিষয়টি সম্পর্কে বিশদভাবে অবগত হলাম।  আমরা সাবধান হলাম এবং ভেজালবিরোধী অভিযানে সামিল হলাম।'

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. তরিকুল ইসমলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় আরও বক্তব্য রাখেন মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলাম ছরোয়ার ছানু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস, কনজ্যুমার্স অ্যাসোয়িশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এবিএম সামছুন্নবী তুলিপসহ বিভিন্ন ধরণের ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, অতীতে তারা অনেক ভুল করেছেন। কিন্তু ভবিষ্যতে তারা এসব ভুল করবেন না। ভোক্তাদেরও নিরাপদ খাদ্য খাওয়াতে প্রাণপণ চেষ্টা করবেন। একইসাথে ভেজালমুক্ত খাবার তৈরি ও সরবরাহের ক্ষেত্রে প্রশাসনকে সহযোগিতা করবেন বলেও কথা দিয়েছেন।

জেলা প্রশাসন ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ জেলা কার্যালয় যৌথভাবে এই প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে।

Comments

The Daily Star  | English

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

8h ago