রমজানে যানজট কমাতে নগরবাসীকে যে অনুরোধ ডিএমপির

‘ঢাকা মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ১৮টি সংস্থা জড়িত। ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ তার মধ্যে একটি সংস্থা। এই সংস্থাগুলোর মধ্যে পারস্পারিক বোঝাপড়া ও সমন্বয় ভালো থাকলে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।’
রমজানে যানজট কমাতে নগরবাসীকে যে অনুরোধ ডিএমপির
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ট্রাফিক বিভাগ) অতিরিক্ত কমিশনার মুনিবুর রহমান | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

রমজান মাসে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে অফিস ছুটির পরপরই বাসায় ফেরার পরিকল্পনা নিতে নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ট্রাফিক) অতিরিক্ত কমিশনার মুনিবুর রহমান এ আহ্বান জানান।

এ সময় তিনি রমজান মাসে যানজট নিয়ে ট্রাফিক বিভাগের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।

মুনিবুর বলেন, 'দুপুর সাড়ে ৩টায় অফিস ছুটি হওয়ার কথা থাকলেও আমরা দেখেছি, বিকেল ৫টার আগে থেকে ইফতারের আগে পর্যন্ত অধিকাংশ যানবাহন তড়িঘড়ি করে গন্তব্যস্থলে ফেরার উদ্দেশে রওনা দেয়। এতে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারসেকশনে শেষ মুহূর্তে অযাচিত ট্রাফিক কন্ডিশন তৈরি হচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'ঢাকার যেখানে চার রাস্তা বা তিন রাস্তা ইন্টারসেকশন আছে; যে কোনো একটি লেন যদি আমরা চালু করি, সে ক্ষেত্রে অন্য তিনটি লেন আমাদের বন্ধ রাখতে হয়। কাজেই সেটা কিছুটা সময় সাপেক্ষ বিষয়। যেহেতু ইফতারের আগে সবাইকে ফিরতে হয়, প্রিয়জনদের সঙ্গে ইফতার করতে সবাই উদগ্রীব থাকেন, ফলে টাইম ম্যানেজমেন্ট চ্যালেঞ্জিং বটে।

'তাই অফিস ছুটির সময়—সাড়ে ৩টা থেকে বা এর কাছাকাছি সময় থেকে নগরবাসী যেন বাসায় ফেরার পরিকল্পনা নেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রুটগুলোতে সড়কের পাশে, ইমারত স্থাপনা সংলগ্ন স্থানে অযাচিতভাবে যানবাহনের পার্কিং পরিলক্ষিত হয়, যা সড়কের প্রশস্ততা কমিয়ে দেয় এবং যানবাহনের গতি বাধাগ্রস্ত করে। রমজানের প্রথম থেকে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ এই বিষয়টি নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে,' জানান তিনি।

অযাচিত পার্কিং রোধে নগরবাসীর সহযোগিতা চাওয়ার পাশাপাশি তিনি সড়কের টার্নিং পয়েন্টে না দাঁড়িয়ে নির্দিষ্ট বাস স্টপেজে গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষা করতে যাত্রীদের প্রতি আহ্বান জানান।

এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, পরিবহন সংশ্লিষ্টদের যত্রতত্র যাত্রী তোলা ও নামানো থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

মুনিবুর আরও বলেন, 'যাত্রী না থাকলেও অনেক সময় গণপরিবহন দীর্ঘ সময় একটি স্টপেজে অবস্থান করে। চালকদের এ ক্ষেত্রে যত্নশীল হতে অনুরোধ করা হচ্ছে। ঢাকা মহানগর এলাকায় হেভি ভেহিকাল চলার একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা আছে। সেটি না মানায় অনেক সময় যানজটের সৃষ্টি হয়। ডিএমপি এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে থাকবে। বিশেষ করে বেড়িবাঁধ ও সেকশন বেড়িবাঁধ এলাকায় (মিরপুর থেকে সোয়ারীঘাট পর্যন্ত) দিনের বেলায় ট্রাক ও লরি চলার প্রয়াস চালায়। মালামাল লোড-আনলোড করে থাকে।'

তিনি বলেন, 'গত ১৯ মার্চ মৌসুমি বৃষ্টিপাতের কারণে সড়কের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় ও খানাখন্দ তৈরি হয়, যা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় একটি জটিল পরিস্থিতি তৈরি করেছিল; বিশেষ করে ইফতারের আগে পিক আওয়ারে। বিষয়টিতে নজর দেওয়ার জন্য ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং এ ব্যাপারে যেন তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় সে জন্য চিঠি দিয়েছে।

'বিভিন্ন সময় সড়কের ছোট-বড় সংস্কার কাজ চলছে, জনসাধারণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে এসব সড়ক সাময়িকভাবে চলাচলের উপযোগী করে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করা হচ্ছে। ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে,' যোগ করেন তিনি।

রমজান মাসকে কেন্দ্র করে সড়ক দখল করে যেন কেউ ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে না পারে সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ রমজানের শুরু থেকেই ড্রাইভ অব্যাহত রেখেছে এবং রমজান মাসজুড়ে অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

মুনিবুর বলেন, 'ঢাকা মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ১৮টি সংস্থা জড়িত। ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ তার মধ্যে একটি সংস্থা। এই সংস্থাগুলোর মধ্যে পারস্পারিক বোঝাপড়া ও সমন্বয় ভালো থাকলে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।'

যত্রতত্র যাত্রী তোলা ও নামানো বন্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না জানতে চাইলে মুনিবুর গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, 'আমরা বাস মালিক ও চালকদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলি। পিক আওয়ারে গাড়িগুলো রিলিজ করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। সে ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রতিটি পয়েন্টে ট্রাফিক সদস্য থাকে না। অনেক সময় তাদের অ্যাটেনশন শিফট করে যায়—সে সময় বাসগুলো বিভিন্ন গ্যাপে হয়তো ডিসিপ্লিনের বাইরে চলে আসে। আমরা চেষ্টা করি বাসগুলো নজরদারির মধ্যে রেখে যতটা শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা যায়।'

প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের কারণে অনেক সময় বাসগুলো রাস্তা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে এ ব্যাপারে কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এই ধরনের বিষয় নজরে এলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'আজকে ১০ রোজা, কিছু কিছু মার্কেটে মানুষ যাওয়া শুরু করেছে। আমরা এখন পর্যন্ত তাদের শৃঙ্খলার মধ্যে আনার চেষ্টা করেছি। ভবিষ্যতে যদি ওভার ফ্লো হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে গাড়ি পার্কিং ও মুভমেন্টের ব্যাপারে কথা হয়েছে। আগামী ২০ দিন আমরা শৃঙ্খলার সঙ্গে গাড়ি চলাচল যতটা নির্বিঘ্ন করা যায়; কেনাকাটা ঠিক রেখে, পার্কিং ও যান চলাচল সমুন্নত রেখে একটা ভালো ব্যবস্থা ঢাকাবাসীকে উপহার দিতে পারব।'

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'সব অফিস সাড়ে ৩টায় ছুটি হয় না। প্রাইভেট অফিসগুলো সাড়ে ৪টা-৫টায় ছুটি হয়। একই সময়ে যদি সব গাড়ি রাস্তায় নেমে যায়, সেটা সাড়ে ৩টা বা ৫টায় নামলে অযাচিত ট্রাফিক জ্যাম তৈরি হবে। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে যদি গাড়িগুলো রাস্তায় নামে তাহলে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ভালো থাকবে।'

সড়কের পাশে ট্রাফিক সিগনালের ব্যাপারে জানতে চাইলে মুনিবুর বলেন, 'গত বছরের মাঝামাঝিতে ঢাকা মহানগরের ১১০টি ইন্টারসেকশনের ট্রাফিক সিগনাল লাইট আছে, তার মধ্যে একটি গুলশান-২ নম্বরে একটি পাইলট প্রজেক্ট নেওয়া হয়েছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) মাধ্যমে ওখানে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা চলছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে চারটি সংস্থাকে নিয়ে অটোমেশনের কার্যক্রম চলমান আছে। শিগগির এটি পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে চালু হবে বলে আমরা আশাবাদী।'

Comments