ঈদে চাহিদার শীর্ষে সিলেটি শাসনী-জারা

‘এ বছর লেবুর জোগান বেশি থাকায় দাম কিছুটা কম।’
ঈদ উপলক্ষে বিক্রি বেড়েছে বলে জানান বিক্রেতারা। ছবি: স্টার

মুসলমানদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের প্রাক্কালে ক্রেতাদের চাহিদার ঢেউ কেবলমাত্র পোশাকের বাজারে জাগে না, বরং জাগে মাংসের দোকানেও।

ঈদের দিনের রসনা বিলাসে সিলেটিদের পছন্দের তালিকায় থাকে আখনি কিংবা পোলাওয়ের সঙ্গে মাংসের নানা পদ। আর মুখরোচক এসব খাবারের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ থাকে লেবু।

তবে যেকোনো ধরনের লেবু হলেই চলবে না। সিলেটিদের পছন্দ এই অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী শাসনী ও জারা লেবু।

বড়, ডিম্বাকার, সুগন্ধি ও সুস্বাদু সাইট্রাস জাতীয় ফল জারা লেবু মূলত একটি সাইট্রন, যা কয়েক শতাব্দী ধরে সিলেট অঞ্চলের মানুষের রসনা বিলাসের অন্যতম একটি উপকরণ।

আর জারা লেবুর তুলনায় আকৃতিতে ছোট এলাচিগন্ধী শাসনীর চাহিদাও ব্যাপক। জারা ও শাসনী দুইটি লেবুর খোসা মূলত খাবারের অনুষঙ্গ সালাদ হিসেবে খাওয়া হয়।

জারা ও শাসনী লেবুর চাহিদা যেমন ব্যাপক, তেমনি দামও বেশি। সিলেট নগরীতে বড় আকৃতির জারা লেবুর দাম হাজার টাকাও ছাড়িয়ে যায় কখনো কখনো। তবে এ বছর লেবুর জোগান বেশি থাকায় দাম কিছুটা কম।

মঙ্গলবার সিলেট নগরীর লালবাজার ঘুরে জানা যায়, মাঝারি আকৃতির জারা লেবু প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। আর মাঝারি আকৃতির শাসনীর দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।

লালবাজারের খুচরা লেবু বিক্রেতা তারেক আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, সম্প্রতি বৃষ্টি হওয়ায় আর চাহিদার তুলনায় যোগান বেশি হওয়ায় লেবুর দাম ঈদপূর্ব বাজার বিবেচনায় অনেকটা কম।

আরেক লেবু বিক্রেতা জায়েদ আহমেদ বলেন, 'স্বাভাবিক সময়ে দৈনিক পাঁচ থেকে আট হাজার টাকার লেবু বিক্রি হলেও ঈদের বাজারে লেবু বিক্রি বেড়েছে কয়েকগুণ। ঈদ উপলক্ষে যত বেশি প্রবাসীরা দেশে আসেন, ততই বিক্রি বাড়ে। কারণ প্রবাসীদের কাছে জারা ও শাসনী লেবুর বিশেষ কদর রয়েছে।'

সিলেট অঞ্চলে লেবুর ব্যাপক চাহিদা যেমন রয়েছে, তেমনি এ অঞ্চলের বিস্তীর্ণ জায়গায় লেবুর চাষাবাদও বাড়ছে দিনদিন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সিলেট জেলায় এক হাজার ৩৯০ হেক্টর এবং মৌলভীবাজার জেলায় এক হাজার ৭০০ হেক্টরেরও বেশি জমিতে লেবু চাষ হয় এবং দুই জেলা মিলিয়ে বাৎসরিক উৎপাদন প্রায় ৪০ হাজার টন।

সিলেটের লেবু কেবলমাত্র স্থানীয় বাজারেই বিক্রি হয় না, বরং ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বাঙালি, বিশেষ করে সিলেটি অধ্যুষিত দেশগুলোতে ব্যাপকভাবে রপ্তানি হয়।

এ অঞ্চলের লেবুর সুপ্রাচীন ইতিহাস ও কদরের কারণে ১৯৬০ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) অধীনে সিলেটে প্রতিষ্ঠা হয় 'সাইট্রাস গবেষণা কেন্দ্র'।

দীর্ঘ গবেষণায় এ গবেষণাকেন্দ্র উদ্ভাবন করেছে ২১টি লেবুর জাত, যার মধ্যে একটি জারা, একটি সাতকরা, তিনটি কমলা, দুইটি মাল্টা, ছয়টি বাতাবি লেবু, একটি মিষ্টি লেবু, একটি কাগজী লেবু ও ছয়টি সাধারণ লেবুর জাত রয়েছে।

Comments