ঈদের দিনেও চুলা জ্বলেনি তাদের বাড়িতে, বাসি পান্তা-খিচুড়িতেই ভরসা

গত মার্চ থেকে নদীতে জাল ফেলার নিষেধাজ্ঞা থাকায় বিপাকে পড়তে হয়েছে মাছ শিকার করে বেঁচে থাকা এই মানুষদের। তাই এই সংকটময় সময়ে ঈদ আসলেও আনন্দ নেই।
ঈদের দিনও সন্তানদের নিয়ে নিরানন্দে দিন কাটছে কুলসুমের। ছবি: মনির উদ্দিন অনিক

ভোলা জেলার সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের মেঘনা তীরে শত শত জেলে নৌকা নোঙর করে আছে। দূর থেকে উচ্চ শব্দে গান বাজছে। কাছে গিয়ে দেখা গেল ছোট ছেলে ছোট ছেলেমেয়েরা নতুন জামা পড়ে আনন্দে মেতেছে। কেউ কেউ লটারি খেলছে। চারদিকে উৎসবের আবহ। দূর থেকে দেখলে মনে হয় এখানে যেন আনন্দের কমতি নেই।

জেলেপাড়ার শিশুদের ঈদ আনন্দ। ছবি: মনির উদ্দিন অনিক

কিন্তু বয়োজ্যেষ্ঠদের দিকে তাকালে বোঝা যায় এই ঈদ আনন্দের ছিটেফোঁটাও নেই তাদের মধ্যে। এমনকি অনেকের বাড়িতে চুলা পর্যন্ত জ্বলেনি, আগের দিনের পান্তা-খিচুড়ি খেয়েই ঈদ কাটাচ্ছেন তারা।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে এ চিত্র দেখা যায়।

হারুন সরদারের নৌকায় দাওয়াত খেতে এসেছেন পাশের নৌকার জেলেরা। ছবি: মনির উদ্দিন অনিক

গত মার্চ থেকে নদীতে জাল ফেলার নিষেধাজ্ঞা থাকায় বিপাকে পড়তে হয়েছে মাছ শিকার করে বেঁচে থাকা এই মানুষদের। তাই এই সংকটময় সময়ে ঈদ আসলেও আনন্দ নেই।

জেলে-বৌ কুলসুম বেগম বলেন, 'পাঁচ ছেলেমেয়ে কষ্টে আছি। ছেলেমেয়েদের নতুন জামা দিতে পারিনি। মাংস-ভাত খাওয়ার কোনো আয়োজন নেই। আগের দিনের রান্না করা ডিম-খিচুরি দিয়েই ঈদ পার করছি।'

নিজেরা নতুন কাপড় কিনতে না পারলেও সন্তানদের নতুন কাপড় দিয়েছেন সানজান বিবি ও শাহে আলম দম্পতি। তবে ঈদে সন্তানদের বাসি ভাত ছাড়া ভালো কিছু খাওয়াতে পারেননি তারা। ছবি: মনির উদ্দিন অনিক

আরেক জেলে-বৌ ভাদুরী বেগম বলেন, 'ছেলেমেয়েদের জন্য কোনোমতে ঈদের জামা দিয়েছি। নিজেদের জন্য কিছু কিনতে পারিনি। দুই বছর আগের কেনা শাড়িতেই ঈদ।'

জানতে চাইলে বরিশাল বিভাগীয় জেলে সমিতির নেতা ইসরাইল পন্ডিত বলেন, 'এবারে উপকূলীয় এলাকায় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় জেলেদের নিরানন্দে ঈদ কাটছে। ঈদ উপহার হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে জেলেদেরকে ন্যূনতম সহায়তা দেওয়া উচিত ছিল।'

পুরোনো শাড়িতেই ঈদ উদযাপন তাদের। ছবি: মনির উদ্দিন অনিক

বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অফিসের উপ-পরিচালক নৃপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, '৪ লাখ ২৫ হাজার নিবন্ধিত জেলেদের মধ্যে ২ লাখ ৩০ হাজার জেলেকে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞায় প্রতি মাসে ৪০ তেজি করে চাল সহায়তা দেওয়া হয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Will there be any respite from inflation?

To many, especially salaried and fixed-income individuals, this means they will have no option but to find ways to cut expenditures to bear increased electricity bills.

5h ago