স্থায়ী জামিন না পাওয়ার পর যা বললেন ড. ইউনূসের আইনজীবী

‘এতে আমরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আইনের বরখেলাপ করা হয়েছে।’
ঢাকার শ্রম আপীল ট্রাইব্যুনাল আদালত প্রাঙ্গণে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুনসহ অন্যান্যরা। ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

শ্রম আইন লঙ্ঘন মামলায় শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের তিন শীর্ষ কর্মকর্তা স্থায়ী জামিন না পাওয়ায় 'আইনের বরখেলাপ হয়েছে' বলে মন্তব্য করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন।

আজ মঙ্গলবার ঢাকার শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল আদালত প্রাঙ্গণে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই মন্তব্য করেন।

আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আজকে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আমাদের ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ বাকি তিনজনের উপস্থিতির নির্ধারিত তারিখ ছিল। আমরা উপস্থিত হয়েছি। কারণ আমরা যে আপিল করেছি শ্রম আদালতের আইনের বিরুদ্ধে, আদেশের বিরুদ্ধে, বিচারের বিরুদ্ধে, সেই আপিল গত ২৮ জানুয়ারি গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের জামিন দিয়েছিল মাত্র ৩ মার্চ পর্যন্ত। তারপরে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত জামিন দিয়েছিল। কিন্তু নিয়ম হচ্ছে আপিল অ্যাডমিশন হলে জামিন স্থায়ী হয়, মামলা নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত হয়।

তিনি বলেন, একটি উদাহরণ দিচ্ছি—এসএ পরিবহনের মালিক সালাউদ্দিন সাহেবকে এই তৃতীয় শ্রম আদালত ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন ৩০৩ এর ঙ এবং ৩০৭ অনুযায়ী। তাকে এই আপিল আদালত তার আপিল গ্রহণ করে ছয় মাসের জামিন দিয়েছিলেন। আর ড. ইউনূসকে জামিন দিয়েছেন এক মাসের জন্য। এটা এত বড় অন্যায়, বৈষম্য। সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশের প্রতিটি নাগরিক আইনের চোখে সমান এবং কখনো বৈষম্য করা যাবে না।

'ওই মামলায় তাকে (সালাউদ্দিন) দিয়েছেন ছয় মাসের জামিন। আর ড. ইউনূসকে দিয়েছেন এক মাসের জামিন। প্রতি মাসে মাসে তাকে এখানে হাজির করা হচ্ছে। এখানে আছেন মোহাম্মদ শাহজাহান, তিনি নোবেলজয়ী গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। করোনার সময় তিনি স্ট্রোক করে স্থায়ীভাবে প্যারালাইজড হয়ে গেছেন। তাকে পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্সে করে এনে হাজিরা দেওয়া হচ্ছে। নূরজাহানও গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। আশরাফুল গ্রামীণ টেলিকমের নির্বাহী পরিচালক। তারা আজকে সমাজের কাছে নিকৃষ্ট ব্যক্তি।'

আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, 'আপিল হলে নির্দিষ্ট আপিল শুনানি পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করা হয়। আজকেও আমরা আবেদন করেছি। সরকার এর বিরোধিতা করেছে। কেন বিরোধিতা করেছে, তা আমরা জানি না। অথচ আপনারা জানেন, ইসলামী ব্যাংকের একজন ১১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে গেছে। অনেকে বলে হাজার হাজার কোটি টাকা। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে দুদক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে। আজকে চার মাস হয়ে গেল, তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা হচ্ছে না।'

'আপনারা জানেন, আমরা সামাজিক মাধ্যমে জানতে পারছি, পুলিশের সাবেক আইজি, র‌্যাবের সাবেক প্রধান, যার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তার হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ, হাজার হাজার কোটি টাকা নগদ, যার বেতন সারাজীবনে হচ্ছে পৌনে দুই কোটি টাকা। এর কোনো তদন্ত হচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো তদন্ত হচ্ছে না। সরকারের কতগুলো মিডিয়া, যারা সবসময় ড. ইউনূসকে নিয়ে রিসার্চ করে, একাত্তর, ডিবিসি এবং সময়—তারা পর্যন্ত কোনো তদন্ত করছে না। এই যে অবস্থা হচ্ছে, এই অবস্থার মধ্যে দেখা যাচ্ছে ড. ইউনূসের সামাজিক ব্যবসাকে, সারা বিশ্বে তার গ্রহণযোগ্যতাকে ম্লান করে দেওয়ার জন্য একটি চক্রান্ত করা হচ্ছে।'

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ড. ইউনূসকে আজ সারা পৃথিবী দাওয়াত দিচ্ছে। বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে কোর্টে জানাতে হবে। আজকে জাতিসংঘের মহাসচিব তাকে ডাকছেন, আপনি আসেন। আজকে জাতিসংঘের এই দুর্যোগ মুহূর্তে আপনি উপদেষ্টা আমার। অন্যতম উপদেষ্টা, সাতজনের একজন। তিনি যেতে পারছেন না।

স্থায়ী জামিন না দেওয়ার বিষয়ে আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, এতে আমরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আইনের বরখেলাপ করা হয়েছে। এই বরখেলাপ সস্পূর্ণভাবে ড. ইউনূসকে টার্গেট করে এবং তার সঙ্গে যারা, তাদেরকে টার্গেট করে সরকারের নির্দেশে করা হয়েছে বলে আমরা মনে করি।'

Comments

The Daily Star  | English
Pro-Palestinian protests on US campuses

Has the war in Gaza exposed limitations of free speech in US?

Protests have rocked US university campuses over the last week as pro-Palestinian students have encamped on the grounds of Columbia, Yale, and New York University, among other prestigious educational institutions, urging universities to divest from the state of Israel amid the ongoing genocide.

1h ago