বরগুনার ৭৯৮ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের ১৬৯টি ঝুঁকিপূর্ণ
বরগুনা জেলার ৭৯৮ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৬৯টি বিদ্যালয় ভবন জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
স্কুলের ভবনের পিলারে বড় বড় ফাটল ধরেছে। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে।
ঝুঁকি আর আতঙ্কের মধ্যেই এসব ভবনে চলছে পাঠদান কার্যক্রম।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সদর উপজেলার ২২৭টির মধ্যে ৪১টি, আমতলীতে ১৫২টির মধ্যে ৩১টি, বেতাগীতে ১২৯টির মধ্যে ২৪টি, বামনায় ৬২টির মধ্যে ১৯টি, পাথরঘাটায় ১৪৯টির মধ্যে ৩৩টি, তালতলীতে ৭৯টির মধ্যে ২১টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকি নিয়ে এসব বিদ্যালয়ে পাঠদান করানো হয় বলে জানান সংশ্লিষ্ট উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অর্থায়নে ১৯৯৪-২০০২ সালের মধ্যে এসব স্কুল ভবন নির্মাণ করা হয়। এসব ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে রড বেরিয়ে গেছে এবং বৃষ্টি হলে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। স্কুল ভবনের কক্ষের ভেতরের দেয়ালে ফাটল ধরেছে এবং দরজা ও জানালা ভেঙে গেছে।
সদর উপজেলার গৌরিচন্না হাইস্কুল সংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাইনুল হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রায় দুই বছর আগে স্কুল ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। বিকল্প কোনো ভবন না থাকায় বাধ্য হয়েই পরিত্যক্ত ভবনে পাঠদান করতে হচ্ছে। নতুন ভবনের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার আবেদন করেছি। কিন্তু কাজ হচ্ছে না।'
এ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানায়, বিদ্যালয়ের ক্লাসরুমের অনেক জায়গায় ফাটল আছে। আতঙ্কের মধ্যে তাদের ক্লাস করতে হয়।
একই উপজেলার উত্তর পাতাকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুনা লায়লা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিষখালী নদীর ভাঙনকবলিত বেড়িবাঁধের পাশেই আমাদের বিদ্যালয়। ভাঙা-চোরা একটি বিদ্যালয় ভবন ছিল যেটি গত বছর নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন কোনো রকমে টিনের চালা দিয়ে বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে।'
তিন আরও বলেন, 'ভালো ভবন না থাকায় শিক্ষার্থীরাও স্কুলে আসতে চায় না। স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ও বিশুদ্ধ খাবারের পানিরও ব্যবস্থা নেই এ বিদ্যালয়ে। নতুন একটি ভবনের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছি।'
ক্রোক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি তিন বছর আগে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও, এ ভবনটি নিলামে বিক্রি করা হয়। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল আলীম বলেন, 'দোতলা বিদ্যালয় ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণার পর ভেঙে ফেলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত নতুন ভবন নির্মাণ হয়নি। ছোট টিনের ঘরে পাঠদান করতে হয়।'
যোগাযোগ করা হলে পরিত্যক্ত বিদ্যালয় ভবন কমিটির সদস্য ও বরগুনা সদর উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের কাছে নিলামে বিক্রির জন্য কিছু বিদ্যালয়ের তালিকা পাঠিয়েছে। আমরা সেগুলো নিলাম করে, নতুন ভবনের প্রাক্কলন করে মন্ত্রণালয় পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পেলেই নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।'
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম সরোয়ার টুকু ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এসব বিদ্যালয়গুলো পর্যায়ক্রমে সাইক্লোন শেল্টারের আওতায় আনা হবে। ত্রাণ ও দুর্যোগ ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করে এ সমস্যা সমাধান করা হবে।'
Comments