মামলা জটিলতায় জরাজীর্ণ কুয়াকাটা মহাসড়ক, ১০ বছর পর সংস্কারের দরপত্র

ব্যবসা-বাণিজ্য ও স্থানীয়দের যাতায়াতের গুরুত্ব বিবেচনায় এ সড়কের ওই অংশ জরাজীর্ণ থাকায় অশেষ ভোগান্তি পোহাতে হয় পর্যটকসহ এ রুটের যাত্রীদের।
মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় সংস্কারের অভাবে পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের ১১ কিলোমিটার অংশ জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় সংস্কারের অভাবে পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের ১১ কিলোমিটার অংশ জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন পর্যটকসহ স্থানীয়রা। ঝুঁকি নিয়ে চলছে দূরপাল্লাসহ অভ্যন্তরীণ রুটের শত শত গাড়ি।

তবে, প্রায় ১০ বছর পর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সড়কটি সংস্কারের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে।

পটুয়াখালী সড়ক ও জনপদ (সওজ) অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী এক মাসের মধ্যেই প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এ সড়কটি সংস্কার কাজের জন্য ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া সম্ভব হবে।

এক ঠিকাদারের করা মামলার কারণে ২০১৪ সালের পর ওই মহাসড়কের কলাপাড়া উপজেলার পাখিমারা বাজার থেকে আলিপুর ব্রিজ পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার অংশ সংস্কার করা যায়নি।

পটুয়াখালী সওজ সূত্রে জানা গেছে, পটুয়াখালী সড়ক বিভাগ ২০১১ সালে পটুয়াখালী কুয়াকাটা সড়কের পাখিমারা থেকে আলিপুর পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের কাজ হাতে নেয়। খুলনার রূপসা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড ছিল ঠিকাদার। ব্যয় ধরা হয় ২০ কোটি টাকা।

ঠিকাদার সড়ক সংস্কারের পর চূড়ান্ত বিল দাবি করে সড়ক বিভাগের কাছে। কিন্তু, সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে সড়ক বিভাগ ঠিকাদারকে ১২ কোটি টাকা পরিশোধের পর বাকি ৮ কোটি টাকা আটকে রাখে।

শিডিউলের শর্ত অনুযায়ী, সওজ পুনরায় সড়কটি সংস্কারের জন্য বলা হলে ঠিকাদার অস্বীকৃতি জানায়। এ নিয়ে সওজ পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং কমিটি সরেজমিনে তদন্ত করে সড়কের কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগের সত্যতা পায়। পরে ঠিকাদারের চূড়ান্ত বিল পরিশোধে আপত্তি জানায় তদন্ত কমিটি।

এ অবস্থায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রূপসা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের পরিচালক রাশেদুর রহমান ২০১৪ সালে হাইকোর্টে পিটিশন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সড়কটিতে সংস্কার কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে হাইকোর্ট ওই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলে সড়কের ওই অংশ সংস্কারে বাধা কেটে যায়। সংস্কারের জন্য সওজ দরপত্র আহ্বান করে।

পটুয়াখালী জেলা শহর থেকে ৭২ কিলোমিটার আর রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের তীরে কুয়াকাটা সৈকতে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা নৈসর্গিক দৃশ্য উপভোগ করতে আসেন। ব্যবসা-বাণিজ্য ও স্থানীয়দের যাতায়াতের গুরুত্ব বিবেচনায় এ সড়কের ওই অংশ জরাজীর্ণ থাকায় অশেষ ভোগান্তি পোহাতে হয় পর্যটকসহ এ রুটের যাত্রীদের।

এ প্রসঙ্গে পটুয়াখালী জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন মৃধা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পটুয়াখালী-কুয়াকাটা সড়কের পাখিমারা থেকে আলিপুর পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার সড়ক দীর্ঘ ১০ বছর ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে। এতে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হয় এবং পর্যটকসহ যাত্রীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সড়ক বিভাগ এবার সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ায় যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘব হবে আশা করি।'

পটুয়াখালী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এ এম আতিকুল্লাহ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটি গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক। এর সংস্কার জরুরি হলেও আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে আমরা এতদিন ওই ১১ কিলোমিটার অংশ সংস্কার করতে পারিনি। গত বছর আদালতের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হওয়ায় আমরা প্রায় ১৮ কোটি টাকার প্রাক্কলন তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের পর দরপত্র আহ্বান করি। বর্তমানে দরপত্র মূল্যায়নের কাজ চলছে। আশা করছি আগামী এক মাসের মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে যোগ্য ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দিতে পারব।'

'আশা করছি চলতি বছরের নভেম্বর মাসের মধ্যেই সংস্কার কাজ সম্পন্ন হবে এবং সড়কের ওই অংশের সংস্কার কাজ শেষ হলে কুয়াকাটা থেকে ঢাকা পর্যন্ত প্রায় ৩০০ কিলোমিটার সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল নির্বিঘ্ন হবে,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Secondary schools to reopen Saturday, primary on Sunday

Academic activities at all secondary-level educational institutions will resume on Saturday, the Ministry of Education said today

3h ago