দেশের গণমাধ্যমে ভুয়া খবরের সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুণ

২০২৩ সালে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে মোট ৪৪টি ঘটনায় ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার হতে দেখা গেছে।

গত কয়েক বছরের তুলনায় গত বছর দেশের গণমাধ্যমগুলোতে ভুয়া খবর বেশি প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশে ফেসবুকের ফ্যাক্ট চেক পার্টনার বুম বাংলাদেশ গত বছর দেশের গণমাধ্যমে ৪৪টি ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর খবর চিহ্নিত করেছে। এর আগের বছর বুম বাংলাদেশ ১৬টি ভুয়া খবর চিহ্নিত করেছিল।

বুম বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, আগের বছরগুলোর তুলনায় ২০২৩ সালে গণমাধ্যমে ভুয়া খবর প্রকাশের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেশি ছিল। ফেসবুকে শেয়ার হওয়া ভুয়া খবর চিহ্নিত করে গণমাধ্যমগুলোর রেটিং করেছে তারা।

বুম বাংলাদেশ ২০২০ সালে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমগুলো থেকে ফেসবুকে শেয়ার হওয়া ভুয়া খবর চিহ্নিত করার কাজ শুরু করে। ওই বছর মোট ২৩টি ভুয়া খবর চিহ্নিত করে প্রতিষ্ঠানটি। এর পর ২০২১ সালে ১১টি এবং ২০২২ সালে ১৬টি ভুয়া খবর চিহ্নিত করেছে। এসব ভুয়া খবরকে খণ্ডন করে বুম বাংলাদেশ প্রতিবেদন তৈরি করেছে এবং গণমাধ্যমগুলোর সংশ্লিষ্ট ফেসবুক পোস্টকে রেট করেছে। তাই এই পরিসংখ্যানে বাংলাদেশে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভুয়া খবরের সম্পূর্ণ চিত্র আসে না।

গতকাল বুম বাংলাদেশ এক প্রতিবেদনে জানায়, গেল বছরে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই জেনারেটেড কন্টেন্ট (টেক্সট, ছবি ও ভিডিও) যেমন মানুষের মাঝে সাড়া জাগিয়েছে তেমনি ভুয়া খবর প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও নতুন নতুন শঙ্কা তৈরি করেছে। ভুল তথ্যের প্রবাহের ধারায় ভুয়া মিডিয়া ফটোকার্ড বা নিউজ কার্ড এবং এর এডিটেড ভার্সন নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এ বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হলেও মূলত ২০২৩ সালই ছিল নির্বাচনের বছর। ফলে নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিষয়েও নানা ভুল তথ্য প্রচারিত হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। এছাড়া বিভিন্ন দিবস, উৎসব, ঘটনা আর নতুন প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে তৈরি বিভিন্ন ভুয়া বা বিভ্রান্তিকর তথ্যের প্রবাহ দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

যেভাবে ছড়িয়েছে ভুয়া খবর

২০২৩ সালে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে মোট ৪৪টি ঘটনায় ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার হতে দেখা গেছে। এই ৪৪টি ঘটনার মধ্যে কোনো ঘটনায় একটি গণমাধ্যমে ভুয়া খবরটি প্রচারিত হয়েছে, আবার কোনো কোনো ঘটনায় একটি ভুয়া খবর একাধিক গণমাধ্যমে জায়গা করে নিয়েছে। এমনও দেখা গেছে, তথ্য যাচাই না করে অন্যের খবর কপি করে প্রকাশের কারণে কোনো কোনো ঘটনায় ১৫ এর অধিক গণমাধ্যম একই ভুয়া খবরের ফাঁদে পা দিয়েছে। বুম বাংলাদেশ পর্যবেক্ষণ করে দেখেছে, অধিকাংশ ভুয়া খবরই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক খবরকে যাচাই না করে ভিন্ন দেশের স্থানীয়, অখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য নয় এমন গণমাধ্যম থেকে অসতর্কভাবে সংবাদ নেওয়ার ফলে। এছাড়া আন্তর্জাতিক সংবাদের ক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী দেশের গণমাধ্যমকে অনুসরণ করা, যাচাই না করে তাদের বরাতে সংবাদ প্রকাশ করাও অন্যতম কারণ।

ভুয়া খবর প্রচারে শীর্ষে যেসব গণমাধ্যম

আগের তিন বছরের ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালেও ভুয়া খবর প্রচারে টানা চতুর্থবারের মতো শীর্ষে রয়েছে বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম 'সময় টিভি'। গেল বছরে গণমাধ্যমটি এককভাবে সর্বোচ্চ নয়টি ভুয়া খবর প্রচার করে ফেসবুকে বুম বাংলাদেশের রেটিংয়ের শিকার হয়েছে। এছাড়াও সাতটি ভুয়া খবর প্রচার করে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আরেক বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম 'আরটিভি' এবং ছয়টি ভুয়া খবর প্রকাশ করে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলানিউজ২৪। এছাড়া, পাঁচটি করে ভুয়া খবর প্রচার করেছে ঢাকা পোস্ট, আজকের পত্রিকা, সমকাল, আমাদের সময় ও দৈনিক ইত্তেফাক। চারটি করে ভুয়া খবর প্রচার করেছে চ্যানেল ২৪, কালের কণ্ঠ, যুগান্তর, বাংলা ট্রিবিউন ও প্রথম আলো। তিনটি করে ভুয়া খবর প্রচার করেছে ডিবিসি নিউজ, বিডিনিউজ২৪, জাগোনিউজ২৪, জুম বাংলা, ডেইলি বাংলাদেশ, যমুনা টিভি, রাইজিং বিডি, একাত্তর টিভি ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন। দুইটি করে ভুয়া খবর প্রচার করেছে চ্যানেল আই, নাগরিক টিভি, ইনকিলাব, নয়া দিগন্ত, মানবকণ্ঠ, কালবেলা, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, নিউজ ২৪, মানবজমিন, বাংলা ভিশন, সংবাদ প্রকাশ, সারাবাংলা ডট নেট ও বাংলাদেশ জার্নাল। একটি করে ভুয়া খবর প্রচার করেছে বৈশাখী টিভি, দৈনিক আমাদের সময়, সাম্প্রতিক দেশকাল, ঢাকা মেইল, দেশ টিভি, নিউ ন্যাশন, দেশ রূপান্তর, বাংলাদেশ টুডে, ভোরের কাগজ, সময়ের আলো, নিউজবাংলা, দৈনিক বাংলা, যায়যায়দিন, দৈনিক সংগ্রাম, ভোরের ডাক, প্রতিদিনের বাংলাদেশ, এনটিভি, নয়া শতাব্দী, বায়ান্ন টিভি ও বিবিএস বাংলা।

Comments

The Daily Star  | English

Don’t stop till the dream comes true

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus yesterday urged key organisers of the student-led mass uprising to continue their efforts to make students’ and the people’s dream of a new Bangladesh come true.

2h ago