আমি ১ কোটি গরিব মানুষকে একটা ব্যাংকের মালিক বানিয়েছি: ড. ইউনূস
এক কোটি গরিব মানুষকে একটি ব্যাংকের মালিক বানিয়েছেন মন্তব্য করে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমাকে দেখলে কি মনে হয়, আমি জোচ্চুরি করার জন্য এই ব্যবসায় নেমেছি?
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এ জামিন শুনানি শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
ড. ইউনূস বলেন, 'আজকে দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে এখানে উপস্থিত হয়েছি। দুর্নীতি দমন কমিশন আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে দুর্নীতির। আমি জালিয়াতি করেছি, অর্থ আত্মসাৎ করেছি, অর্থ পাচার করেছি—এ রকম বহু ভয়াবহ শব্দ আমার অপরাধ হিসেবে বলা হয়েছে।'
গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আপনারা আমাকে বহুদিন থেকে চিনছেন, এ অপরাধগুলো আমার গায়ে লাগানোর মতো অপরাধ কি না আপনারাই বিবেচনা করবেন। আগে যে রকম আপনারা বিবেচনা করেছেন।
আমাকে বলা হয়েছে, আমি সুদখোর, বহুবার বলা হয়েছে। আপনারা সেটা গ্রহণ করেন নাই। কারণ গ্রামীণ ব্যাংকের মালিক আমি না। সুদ যদি গ্রহণ করে থাকে, সেই গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকেরাই গ্রহণ করেছে।'
তিনি বলেন, 'গ্রামীণ ব্যাংক থেকে আমাকে যখন বের করে দেওয়া হয়, তখন গ্রামীণ ব্যাংকের ৯৭ শতাংশ মালিকানা আমাদের সদস্যদের কাছে ছিল। সুদ যদি গ্রহণ করে থাকেন, তারাই গ্রহণ করেছেন। আমি একজন কর্মচারী মাত্র, সেটা আপনারা জানতেন। আমি গ্রামীণ ব্যাংকের মালিক ছিলাম না কখনো। কাজেই আপনারা (গণমাধ্যম) সেটা গ্রহণ করেননি কখনো।
'আমাকে বলা হয়েছে, আমি গরিবের রক্তচোষা। সেটাও আপনারা গ্রহণ করেননি। রক্ত চুষতে হলে যেটা করতে হয়, সে রকম কাজ আমি করি নাই—আপনারা দেখেছেন। আমি এক কোটি গরিব মানুষকে একটা ব্যাংকের মালিক বানিয়েছি। তাদেরকে মালিকানা দিয়েছি, আর কেউ তো দেয় নাই এ পর্যন্ত। এটা তো সত্যি ঘটনা। এখনো আছে তারা মালিক। বলা হয়েছে, আমি পদ্মা সেতু বানচাল করে দিয়েছি, বিশ্ব ব্যাংকের টাকা বন্ধ করে দিয়েছি; আমাকে পদ্মা নদীতে চুবানো দরকার—বহুবার বলা হয়েছে। বড় বড় অনুষ্ঠানে বলা হয়েছে। আপনারা সেটা গ্রহণ করেন নাই,' যোগ করেন তিনি।
ড. ইউনূস বলেন, 'আজকে যে অভিযোগ এনেছে, সেগুলো একই নিয়মের, একই কাহিনীর অন্তর্ভুক্ত। কাজেই আপনাদের বিবেচনার ওপর আমি ছেড়ে দিলাম। আজকে যে অভিযোগ, জোচ্চুরি, অর্থ আত্মসাৎ, অর্থ পাচার—এগুলো সত্য কি না? নাকি সুদখোরের মতো কথা বার্তা, সেটা আপনাদের বিচারের জন্য ছেড়ে দিলাম। আমি আপনাদের বিবেচনায় বিশ্বাসী, সেভাবেই আমি আপনাদের কাছ থেকে আশা করব।'
এর আগে যেসব নোবেলজয়ীদের সাজা হয়েছে, (ফিলিপাইনের নোবেলজয়ী সাংবাদিক) মারিয়া রেসা, বেলারুশের আলেস (আলেস বিয়ালিয়াৎস্কি), যে দেশগুলোতে সাজা হয়েছে, সে দেশগুলোর আদালতগুলো সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। আপনি কি মনে করেন, এ দেশের আদালতও নিয়ন্ত্রিত হয়ে সে রকম একটা বিচারের দিকে যাচ্ছে?
গণমাধ্যমকর্মীদের এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, 'এটা আমার একার বক্তব্য নেওয়ার তো দরকার নাই! দেশের মানুষের কাছে যান, তারা বলবে আদালত কি নিয়ন্ত্রিত না নিজের ইচ্ছায় চলে। সেটা দেশের মানুষের কাছে আপনি পরিষ্কার জবাব পাবেন যে, কেন এ রকম হচ্ছে।'
কেন এ রকম হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'সেই প্রশ্নটা আপনাদের কাছে আমি করেছিলাম যে, কেন এ রকম হচ্ছে? এটার প্রতিকারটা কী? আমি কীভাবে বলবো, আমি তো খালি আদালত থেকে আদালতে যাচ্ছি, আমাকে বলা হচ্ছে আমি জোচ্চোর, আমি জালিয়াত, আমি অর্থ আত্মসাৎকারী ইত্যাদি ইত্যাদি। তথ্য সব আপনাদের কাছে আছে, আপনারা বিচার করে বলেন, আমাকে দেখলে কি মনে হয়, আমি জোচ্চুরি করার জন্য এই ব্যবসায় নেমেছি?'
Comments