নির্ভরতার প্রতীক হয়ে উঠছে ৯৯৯

পাঁচ বছরের শিশুকে তার প্রতিবেশী ধর্ষণ করেছে বুঝতে পেরে গত ৩ মার্চ দুপুরে জাতীয় জরুরি হেল্পলাইন ৯৯৯ নম্বরে কল করেন বাগেরহাটের ব্রাহ্মণকাঠি এলাকার এক মা।

উপ-পরিদর্শক মেহেদী হাসান মামুন কলটি রিসিভ করেন এবং তথ্য জেনে নিয়ে স্থানীয় পুলিশকে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।

খুব অল্প সময়ের মধ্যেই স্থানীয় পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে ৪০ বছর বয়সী লাবু শেখকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে।

২০১৭ সারের ১২ ডিসেম্বর চালু হওয়ার পর থেকে হেল্পলাইনটি দুর্ঘটনা, বাল্যবিবাহ, অগ্নিকাণ্ড, পাচার ও সহিংসতার ক্ষেত্রে জরুরি সহায়তার জন্য সারা দেশে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এমনকি কোনো কিছু হারিয়ে গেলে বা বন্যপ্রাণী উদ্ধারের মতো বিষয়ে সাহায্যের জন্য কল আসে ৯৯৯ নম্বরে।

গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই জরুরি নম্বরে আসা কলের মাধ্যমে ২৭ হাজার ৪০৯টি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে।

হেল্পলাইনের তথ্য অনুসারে, গত ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ১৭ লাখ ৫২ হাজার ৮২৬টি জরুরি কল পেয়েছে ৯৯৯। এসব কলে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্সের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।

২০১৮ সালে ৯৯৯ এ কল এসেছে মাত্র ৪৯ হাজার ৭১৯টি।

তবে, এক বছরের মধ্যে এই কলের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ১১৩টিতে। ২০২০ সারে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৩১ হাজার ২০৫টিতে।

এরপর থেকে প্রতি বছর কলের সংখ্যা বাড়ছে।

এ বছরের প্রথম তিন মাসে ৯৯৯ হেল্পলাইনে ইতোমধ্যে ১ লাখ ৮২ হাজার ২২৬টি কল এসেছে।

গত ২৪ মার্চ পটুয়াখালী থেকে হেল্পলাইনে কল করে লোকালয়ে আটকে পরা একটি মেছোবাঘ উদ্ধারের জন্য অনুরোধ জানানো হয়। যারা কল করেছেন তারা অনুরোধ জানান যেন খুব দ্রুত মেছোবাঘটিকে উদ্ধার করা হয়, নয়তো অন্য কেউ প্রাণীটির ক্ষতি করতে পারে।

খবর পেয়ে স্থানীয় পুলিশ সেখানে গিয়ে মেছোবাঘটি উদ্ধার করে বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করে।

গত ২৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব রেলওয়ে স্টেশন থেকে ধূমকেতু এক্সপ্রেসে ঢাকা যাওয়ার সময় সৌদিপ্রবাসী মমিন শেখ (৪৫) তার পাসপোর্ট ও টিকিটসহ ব্যাগ হারিয়ে ফেলেন।

খবরটি ৯৯৯ এ পৌঁছালে রেলওয়ে পুলিশ কন্ট্রোল রুম ও টাঙ্গাইল রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে জানানো হয়। হাজেরা বেগম (৪০) নামে এক নারী ব্যাগটি খুঁজে পেয়ে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ সেটি পৌঁছে দেয় মমিনের কাছে।

৯৯৯ হেল্পলাইনের মুখপাত্র ইন্সপেক্টর আনোয়ার সাত্তার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মানুষ এখন ৯৯৯ এর ওপর আস্থা রাখছে। ফলে, আমরা আগের চেয়ে অনেক বেশি কল পাচ্ছি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গভীর রাতে উচ্চ শব্দ নিয়ে অভিযোগ জানাতে তেমন কেউই থানায় যেত না। কিন্তু এই টোল ফ্রি নম্বরে কল করে যে কেউ খুব সহজেই এমন বিষয়েও অভিযোগ জানাতে পারেন।'

তিনি বলেন, 'আমাদের একটি প্রতিক্রিয়া তদন্ত বিভাগও রয়েছে। আমাদের সেবায় সন্তুষ্ট না হলে সেখানে অভিযোগ জানাতে পারবেন।'

এ পর্যন্ত প্রতিক্রিয়া বিভাগে ৪০ লাখ ৫৯ হাজার ৬০৪টি কল পেয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'অভিযোগের ভিত্তির ওপর নির্ভর করে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেই।'

যে ৬ ধরনের সহযোগিতা বেশি চাওয়া হয়

হেল্পলাইন থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, ছয় ধরনের সহযোগিতা চাওয়ার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। সেগুলো হলো—শব্দ দূষণ, অগ্নিকাণ্ড, চিকিৎসা, শারীরিক নির্যাতন বা মারামারি, নারীর প্রতি সহিংসতা এবং দুর্ঘটনা।

মানোন্নয়ন ও কলেবর বৃদ্ধি

বর্তমানে ৯৯৯ হেল্পলাইনে ১০০টি ওয়ার্কস্টেশন রয়েছে এবং একবারে ১২০টি কল রিসিভ করতে পারে।

পুলিশের জাতীয় জরুরি হেল্পলাইনের প্রধান অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা ইতোমধ্যেই পূর্বাচলে আরও ১০০টি ওয়ার্কস্টেশন স্থাপনের অনুমোদন পেয়েছি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এর জন্য বরাদ্দ পেয়েছি।'

তিনি বলেন, 'আমরা আগামী অর্থবছরের মধ্যে এটা সম্পূর্ণ প্রস্তুত করতে পারব বলে আশা করছি। এটা প্রস্তুত হয়ে গেলে আমরা আরও বেশি মানুষকে সেবা দিতে পারব।'

মানোন্নয়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে ২৯৪টি থানায় আলাদা নম্বর রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এর মাধ্যমে আমরা খুব দ্রুত স্থানীয় থানায় তথ্য পৌঁছাতে পারি। আমরা ধীরে ধীরে দেশের ৬০০টি থানায় ফোন লাইন স্থাপন করব।'

তবারক উল্লাহ আরও বলেন, সরকার সম্প্রতি ৫৪৯ জনবল নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের আলাদা ইউনিট হিসেবে ৯৯৯ এর অনুমোদন দিয়েছে।

তিনি বলেন, 'জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে হেল্পলাইনটিকে পৃথক ইউনিট হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে। আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য অপেক্ষায় আছি। এই অনুমোদন পেয়ে গেলে আমাদের প্রধান হিসেবে একজন উপ-মহাপরিদর্শকসহ আলাদা বাহিনী, স্থান ও প্রশাসন থাকবে।'

তিনি আরও বলেন, 'পৃথক ইউনিট হওয়ার পর স্বল্পতম সময়ের মধ্যে আপডেটেড সফটওয়্যারসহ হেল্পলাইনটি আরও দক্ষতার সঙ্গে সবাইকে সেবা দিতে পারবে।'

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

5h ago