‘প্রধানমন্ত্রী উত্থাপন করেছেন অভিযোগ হিসেবে, সেগুলোর জবাব বহুবার দিয়েছি, এখানে ডায়ালগের কী আছে?’

আদালত থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

'যেসব বিষয় তিনি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) উত্থাপন করেছেন অভিযোগ হিসেবে, সেগুলোর জবাব আমরা বহুবার দিয়েছি—একবার না' এবং এ নিয়ে নতুন করে ডায়ালগের কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, 'আজকে ভালো লাগলো যে খাঁচার ভেতরে ছিলাম না। এখানে খাঁচার ব্যবস্থা নেই। এই খাঁচার ব্যাপারে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি বারেবারে—এটা যাতে বাংলাদেশের আদালত থেকে একেবারে চিরস্থায়ীভাবে উচ্ছেদ হয়ে যায়।'

শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের করা মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের জামিনের মেয়াদ আগামী ১৪ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

আদালতের রায় ঘোষণার পর বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তাকে প্রশ্ন করা হয়—প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে তার সঙ্গে বসার কথা বলেছিলেন, এ ব্যাপারে আগ্রহ আছে কি না? উত্তরে ড. ইউনূস বলেন, 'আমি এটা শুনলাম এবং তালিকা করলাম যে কী কী বলেছেন তিনি। তালিকাতে সবকটাই হলো আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ। আমি টাকা পাচার করেছি, বিদেশে বহু প্রতিষ্ঠান করেছি, ট্যাক্স ফাঁকি দেই ইত্যাদি। এগুলো হলো তদন্তের বিষয়, বিতর্কে বিষয় নয়। এটা আইন-আদালতের বিষয়, বিচার বিভাগের বিষয়। এখানে বিতর্কের কী আছে বা ডায়ালগের কী আছে—আমি তো কিছু পেলাম না! কাজেই আমার মনে হয়, এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।'

'আর যেসব বিষয় তিনি উত্থাপন করেছেন অভিযোগ হিসেবে, সেগুলোর জবাব আমরা বহুবার দিয়েছি—একবার না। আপনাদের হয়তো স্মরণ আছে, ২০১২ সালে আমরা এগুলো বলতে বলতে এত বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিলাম, শেষে গ্রামীণ ব্যাংকের ২৯টি প্রশ্ন ও তার জবাব বলে একটা তালিকা করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন আকারে ছাপিয়ে দিয়েছিলাম। ওটা পড়লে ওগুলোর জবাব ওখানেই পেয়ে যাবেন। এটা নতুন করে আর জবাব খুঁজতে হবে না,' বলেন তিনি।

ড. ইউনূস আরও বলেন, 'আমার ট্যাক্সের ব্যাপারে কোনোদিন সরকারের পক্ষ থেকে, এনবিআরের (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) পক্ষ থেকে আমার জন্য কোনো মামলা করাই হয়নি। কাজেই ট্যাক্স ফাঁকির বিষয়টি আসলো কোত্থেকে এটা বুঝতে পারছি না। কাজেই এগুলো হলো তদন্তের বিষয়। আবারও আলোচনা করতে চান, করুক।'

তিনি বলেন, 'আমার একটা জিনিস ভালো লেগেছে তার কথায়, তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ এনেছেন। যেসব অভিযোগ এনেছেন, এগুলো গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে আইন-আদালতে ঘোরাঘুরি করে একটা জিনিস শিখেছি যে, প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যখন অভিযোগ করা হয়, তখন চেয়ারম্যান এবং বোর্ড সদস্য সবাইকে অভিযোগ করা হয়। গ্রামীণ ব্যাংকের যারা চেয়ারম্যান ছিলেন, যারা বোর্ড সদস্য ছিলেন, তারাও অভিযুক্ত হবেন। কাজেই তাদেরকে নিয়ে আসতে হবে।'

ড. ইউনূস বলেন, 'গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন প্রথমে ইকবাল মাহমুদ সাহেব, প্রফেসর ইকবাল মাহমুদ অত্যন্ত সম্মানী ব্যক্তি। তার পরে প্রফেসর কায়সার হোসেন, প্রফেসর রেহমান সোবহান, ড. আকবর আলি খান, তবারক হোসেন; তারা সবাই অভিযুক্ত হবেন। কাজেই আমার খুব ভালো লাগবে তাদের সঙ্গে আসা। আমি তখন ম্যানেজিং ডাইরেক্টর—দুই নম্বরে আমি, তারা সব এক নম্বরে এবং খাঁচা যদি ততদিন টিকে থাকে আমরা সবাই মিলে খাঁচার ভেতরে থাকব। এটা আমার কাছে খুব ভালো লাগবে।'

'তার মানে আলোচনার কিছু নেই'—গণমাধ্যমকর্মীরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, 'কী আছে? গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। কাজেই গ্রামীণ ব্যাংকের বোর্ডকে নিয়ে আসতে হবে। আমি তো চেয়ারম্যানের নাম বললাম। প্রতিটি বোর্ডে দুজন উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা থাকেন, তাদেরকেও আনতে হবে। যখন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে, পুরো বোর্ড আমাদের নিয়ে এসেছে। কাজেই চেয়ারম্যান এক নম্বরে থাকবে, আমি দুই নম্বরে থাকব প্রথমবারের মতো; খুব ভালো লাগবে আমার কাছে। তাদের সঙ্গে থাকলে আমাদের খুব আনন্দ হবে যে, তাদের সঙ্গী হিসেবে পেয়ে আমরা খুব কৃতার্থ হলাম।'

 

Comments

The Daily Star  | English
Kudos for consensus in some vital areas

Kudos for consensus in some vital areas

If our political culture is to change, the functioning of our political parties must change dramatically.

1h ago