আন্দোলন দমনে বাংলাদেশে প্রাণঘাতী অস্ত্রের বেআইনি ব্যবহার হয়েছে: অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল

নাগরিকের প্রতিবাদের অধিকারকে শ্রদ্ধা, আন্দোলনকারীদের ওপর সহিংস দমন-পীড়ন বন্ধ করতে এবং অবিলম্বে যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর সব বিধিনিষেধ তুলে নিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। 

বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনার বিশ্লেষণ করে বৃহস্পতিবার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক এই মানবাধিকার সংস্থা। 

প্রতিবেদনে সংস্থাটির সিনিয়র ডিরেক্টর দেপোরসে মুচেনা বলেছেন, 'সরকারকে অবিলম্বে গুলি করার নির্দেশ প্রত্যাহার করতে হবে, সারাদেশে ইন্টারনেট সেবা পুরোপুরি চালু করতে হবে এবং বিক্ষোভ দমনে সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীর ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।' 

'সরকারকে অবশ্যই নিশ্চয়তা দিতে হবে যে ভবিষ্যতে আর দেখামাত্র গুলির নির্দেশ এবং আন্দোলন দমনে ইন্টারনেট বন্ধ করা হবে না,' বলেন তিনি। 

তিনি আরও বলেন, 'এই আন্দোলন এবং ভবিষ্যতের যে কোনো ভিন্নমত দমন করতে এসব ব্যবস্থা ইচ্ছা করে নেওয়া হয়েছে।' 

বাংলাদেশ সরকার এবং র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মানবাধিকার বিষয়ক অতীত রেকর্ড ভয়াবহ উল্লেখ করে প্রতিবেদনে তিনি বলেন, 'বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে র‍্যাবও মোতায়েন করা হয়েছে। এ অবস্থায় ইন্টারনেট ও সক্রিয় আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের অভাবে এবং যাতায়াতে বিধিনিষেধের কারণে আন্দোলনকারীদের অধিকার সুরক্ষিত হওয়ার নিশ্চয়তা খুব কম।'  

গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের বরাতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, গত ১৬ জুলাই আন্দোলন মারাত্মক আকার ধারণ করে এবং এরপর থেকে অন্তত ২০০ জন নিহত হয়েছেন, কয়েক হাজার আহত হয়েছেন ও কমপক্ষে ২ হাজার ৫০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া অন্তত ৬১ হাজার জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।

তথ্য প্রমাণ বিশ্লেষণ করে মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে, আন্দোলন দমনে সেনা মোতায়েন, কারফিউ জারি এবং গুলি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ইন্টারনেট বন্ধ থাকার ছয়দিনে দেশের তথ্য প্রকাশ সীমিত হয়ে যাওয়ায় মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। 

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ক্রাইসিস এভিডেন্স ল্যাব বিক্ষোভ দমনের সময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার 'প্রাণঘাতী অস্ত্রের বেআইনি ব্যবহারের' তিনটি ঘটনার ভিডিও যাচাই করেছে। 

সিনিয়র ডিরেক্টর মুচেনা বলেন, 'যেসব ভিডিও ও ফটোগ্রাফিক প্রমাণ আসছে তা ভয়াবহ।'  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত গত ২০ জুলাইয়ের একটি ভিডিও ক্লিপের উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে, যেখানে দেখা যায় একজন অফিসার অ্যাসল্ট রাইফেল থেকে গুলি চালাচ্ছেন। 

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সাত সেকেন্ডের ওই ভিডিওটি যাচাই করে দেখেছে যে, গুলির ওই ঘটনা ঢাকার রামপুরার ডিআইটি রোডে একটি ব্যাংকের সামনের। 

সেসময় বাংলাদেশ পুলিশ এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের কয়েকজন কর্মকর্তাকে একটি সাঁজোয়া যানের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, 'এক অফিসার একটি চাইনিজ ৫৬-১ অ্যাসল্ট রাইফেল লক্ষ্যবস্তুর দিকে তাক করে দুই রাউন্ড গুলি চালান।' 

'এমন আগ্নেয়াস্ত্র সমাবেশ নিয়ন্ত্রণের জন্য উপযুক্ত হাতিয়ার নয়। শুধু মৃত্যুর সম্ভাবনা আছে বা গুরুতর আহত হওয়ার হুমকি থাকলে সময় এমন আগ্নেয়াস্ত্র প্রয়োজন হয়,' যোগ করা হয় এতে। 

সিনিয়র ডিরেক্টর মুচেনা বলেন, 'জরুরিভিত্তিতে নিরাপত্তা বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সব ঘটনা স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করতে হবে এবং দায়ীদের অবশ্যই পূর্ণ জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।'

 

Comments

The Daily Star  | English
Prof Yunus in Time magazine's 100 list 2025

Time’s List: Yunus among 100 most influential people

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus has been named among TIME magazine’s 100 Most Influential People of 2025.

4h ago