ঢাকার বস্তির দখলদার যায়, দখলদার আসে

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঢাকার কয়েকটি বস্তি ও ফুটপাতের দখল নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে নতুন কয়েকটি গ্রুপ।
কড়াইল বস্তি। স্টার ফাইল ছবি

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঢাকার কয়েকটি বস্তি ও ফুটপাতের দখল নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে নতুন কয়েকটি গ্রুপ।

নতুন দখলদার এই গ্রুপগুলো নিজেদের বিএনপি-সংশ্লিষ্ট হিসেবে পরিচয় দেয়। আওয়ামী লীগের যেসব জায়গা নিয়ন্ত্রণ করতেন সেসব জায়গার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য তারা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। এর মধ্যে আছে বেশ কিছু বস্তি, দোকানপাট, আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন ক্লাব ও অফিস।

তবে বিএনপি ও সরকারের হুঁশিয়ারির পর কিছু জায়গা থেকে দখলদাররা পিছু হটেছে।

অনেক জায়গাতেই চাঁদাবাজদের প্রতিরোধে শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীকে সক্রিয় হতে দেখা গেছে।

বস্তির নিয়ন্ত্রণ রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, এখান থেকেই অর্থের বিনিময়ে মিছিল ও সমাবেশে লোক ভাড়া করে আনা হয়।

আওয়ামী লীগের একটি সিন্ডিকেট বস্তিতে অবৈধ গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করেছে। বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীও এই সিন্ডিকেটে জড়িত।

আওয়ামী লীগের লোকজনের নিয়ন্ত্রণে ছিল এমন পাঁচটি বস্তি ঘুরে দেখেছে দ্য ডেইলি স্টার। এসব বস্তির ঘর ও দোকানপাটের দখল নিতে নতুন গ্রুপগুলো তৎপর।

ঢাকার বনানীতে অবস্থিত দেশের সবচেয়ে বড় বস্তি কড়াইলে গিয়ে দেখা যায়, বস্তির কয়েকশ ঘর ও দোকানপাট এর মধ্যেই নতুন দখলদারেরা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে, যা এর আগে আওয়ামী লীগপন্থীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। স্থানীয়রা জনায়, তারা বস্তির কিছু ঘর ও দোকানপাট ভাঙচুর করে লুটপাট চালিয়েছে।

পেশায় পাইকারি ব্যবসায়ী কড়াইল বস্তির বৌবাজার ইউনিট আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, বস্তিতে তার একটি দোকান আছে।

'শুনেছি আমার দোকানের তালা ভাঙার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু পারেনি। চাঁদাবাজদের ঠেকাতে আমি রাজনীতিতে এসেছিলাম। এখন ভয় পাচ্ছি যেকোনো সময় আমার দোকান লুট হয়ে যাবে', আত্মগোপনে থেকে এসব কথা বলছিলেন তিনি।

বৌবাজার ইউনিট আওয়ামী লীগের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, বিএনপি সমর্থকরা তাকে বস্তি ছাড়ার হুমকি দিচ্ছে। সরকার পতনের পর থেকে তিনিও আত্মগোপনে আছেন।

তিনি বলেন, 'কিছুদিন আগেই ১৬ লাখ টাকা ধার নিয়ে বস্তিতে ১০টি ঘর তুলেছি আমি। প্রায় ১০ বছর হলো আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। এর পরও ওরা আমাকে সপরিবারে বস্তি থেকে চলে যেতে হুমকি দিচ্ছে।'

বস্তির এক বাসিন্দা জানান বস্তিতে যেসব ঘর, দোকান ও অফিস আওয়ামী লীগের লোকজনের নিয়ন্ত্রণে ছিল, সেগুলোই নতুন গ্রুপগুলো দখলে নিচ্ছে। এখন পর্যন্ত সাধারণ মানুষের কোনো ঘর তারা দখলের চেষ্টা করেনি।

মহাখালীর সাততলা বস্তিতে গিয়ে দেখা যায় সেখানেও আওয়ামী লীগের লোকজনের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাগুলো দখলে নিচ্ছে বিএনপির সমর্থকরা।

সাততলা ইউনিট যুবদলের সভাপতি হিসেবে পরিচয় দেওয়া মো. মোমিন এবং বনানী থানা যুবদলের সদস্য সাদ্দাম হোসেনকে বস্তিতে আওয়ামী লীগের অফিসের ভেতর দেখা যায়।

সাদ্দাম বলেন, এই বস্তিতেই তার জন্ম। আওয়ামী লীগের লোকজন ২০১৪ সালে বস্তি থেকে বের করে দেয় তাকে।

তিনি বলেন, ১০ বছর পর বস্তিতে আইসা দেখলাম আমার তো ঘরই নাই। তাই এই অফিসেই আমি থাকি।

মোমিন বলেন, বস্তি থেকে তারা আওয়ামী লীগের লোকজনকে বের করে দিয়েছেন। তার দাবি, সাততলা বস্তি ইউনিট আওয়ামী লীগের বিল্লাল চৌধুরীর নিয়ন্ত্রণ করা ঘরগুলোর ভাড়াটিয়াদের আর ভাড়া দিতে হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

(সংক্ষেপিত, বিস্তারিত পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে)

Comments