আনসারদের সরিয়ে খুলেছে সচিবালয়ের গেট, বের হচ্ছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

ছবি: স্টার

সচিবালয়ের চারপাশে আনসার সদস্যদের আন্দোলনের মুখে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামসহ কয়েকজন উপদেষ্টা ও সচিব, অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী আটকা পড়েছিলেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে সচিবালয়ের এক ও তিন নম্বর গেট খোলার পর হেঁটে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী বের হওয়া শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।

সচিবালয়ে উপদেষ্টা, সচিব ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আটকে রাখার পরিপ্রেক্ষিতে রাত নয়টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম তার ফেসবুকে ছাত্রদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য পাদদেশে আসার আহ্বান জানান। 
তিনি ফেসবুকে লিখেন, 'সবাই রাজুতে আসেন। স্বৈরাচারীশক্তি আনসার হয়ে ফিরে আসতে চাচ্ছে। দাবি মানার পরও আমাদের সবাইকে সচিবালয়ে আটকে রাখা হয়েছে।'

সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার কথা দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন।

তিনি আরও জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয় সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহসহ কয়েকজন উপদেষ্টা, সচিব ও অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী আনসারদের আন্দোলনের কারণে বের হতে পারছিলেন না। এক পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের সামনে এলে আনসার সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। প্রায় ঘণ্টাখানেক ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া চলার পর সচিবালয়ের সামনে থেকে অবস্থান ছাড়েন আনসার সদস্যরা। এর পরপরই সচিবালয়ের গেট খুলে দেওয়া হয়।

রোববার দিনব্যাপী আনসার সদস্যদের আন্দোলনের মুখে সচিবালয়ের পাঁচটি গেটের সবকটি বেশিরভাগ সময় বন্ধ রাখতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

গেট খোলার পরপরই তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম সচিবালয়ের মূল গেটের সামনে হ্যান্ডমাইকে ছাত্র-জনতাকে মাঠে থাকার আহ্বান জানান। সেই সময় তার পাশে সেনা সদস্যরা ছিলেন। এক পর্যায়ে কয়েকজন সেনা সদস্য নাহিদ ইসলামকে কাঁধে তুলে ধরলে তিনি উপস্থিত সবার উদ্দেশে কথা বলেন।

নাহিদ তার বক্তব্যে বলেন, আনসার সদস্যদের কিছু দাবি তাৎক্ষণিকভাবে মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর কিছু দাবি এক সপ্তাহ সময় নিয়ে আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়। তারপরও কিছু সদস্য সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জিম্মি করে সচিবালয়ে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করতে চেয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, ছাত্রদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। তারা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত এই সরকারকে রক্ষা করতে সদা প্রস্তুত আছে। যখন সারাদেশের মানুষ বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের জন্য কাজ করছে, তখন তারা সচিবালয়কে জিম্মি করে নিজেদের দাবি আদায় করতে চেয়েছে। আমরা মনে করছি, এটা কোনো বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ ছিল।

'অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে রক্ষা করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতা, সেনাবাহিনীসহ সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আছে। সবাই শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান রাখুন, আমাদের ভয় নেই। যারা ছাত্র ভাইদের ওপর হামলা করেছে, তাদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হবে। আজকে রাতের মধ্যে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হবে। যারা এই ঘটনার পেছনে ষড়যন্ত্র করছে, তাদেরকেও বিচারের আওতায় আনা হবে', বলেন তিনি।

নাহিদ আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। একটি অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা দায়িত্বে এসেছি। আমাদেরকে সময় দিতে হবে। সচিবালয় ঘেরাও করে কোনো দাবি আদায় করা যাবে না। আমরা সবার যৌক্তিক দাবি শুনবো। কিন্তু কোনো অযৌক্তিক পন্থায় গোষ্ঠীগত কায়েমিস্বার্থ আদায় করতে এলে তা ছাত্র-জনতা প্রতিহত করবে।

রাত সোয়া নয়টার দিকে সচিবালয়ে আটকা থাকা দুইজন সচিব এবং অন্য একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে কথা হয় ডেইলি স্টারের।

সাত নম্বর ভবনের একটি মন্ত্রণালয়ের সচিব ডেইলি স্টারকে বলেন, বিকেল তিনটার দিকে আমার মন্ত্রণালয়ের নারীকর্মীদের হেঁটে বের হয়ে যেতে বলি। ওই সময় সচিবালয়ের পাঁচ নম্বর গেট দিয়ে অনেকে বের হতে পেরেছেন। তবে আমরা যারা ভেতরে আছি, তারা এখন (রাত সাড়ে নয়টায়) আর বের হতে পারছি না।

রাত সাড়ে ১১টার দিকে আবার যোগাযোগ করলে এই সচিব জানান, রাত পৌনে ১১টার দিকে তিনি হেঁটে সচিবালয় থেকে বের হয়ে অন্যজনের গাড়িতে বাসায় গেছেন। তবে যারা নিজের গাড়ি নিয়ে বের হতে চাচ্ছেন, তাদেরকে আরও সময় অপেক্ষা করতে হবে। সম্ভবত রাত ১২টার আগে তারা বের হতে পারবেন না।

আরেক কর্মকর্তা জানান, অফিস সময় শেষে বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে শুনলাম প্রেসক্লাবের পাশের গেট দিয়ে বের হওয়া যাবে। ভাবলাম গাড়ি রেখে হেঁটে চলে যাব। কিন্তু অফিস থেকে নেমে শুনলাম ওই গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাই রাত পর্যন্ত আটকা থাকতে হচ্ছে। গাড়ি নিয়ে সচিবালয় থেকে কখন বের হতে পারব, বুঝতে পারছি না।

Comments

The Daily Star  | English

Govt to expedite hiring of 40,000 for public sector

The government has decided to expedite the recruitment of 6,000 doctors, 30,000 assistant primary teachers, and 3,500 nurses to urgently address the rising number of vacancies in key public sector positions.

8h ago