‘দুর্নীতিবাজ-অপরাধী শাসকগোষ্ঠী কার্টুন ভয় পায়’
বোমার নাম 'কোটা সংস্কার আন্দোলন', তার ওপর মসনদ পেতে বসে আছেন শেখ হাসিনা। হাতের কাঁচি দিয়ে বোমার সলতের মাথা কেটে ফেলে দিলেন আর ভাবলেন 'সলভড'। কিন্তু আগুনটা নিভু নিভু করেও জ্বলছিল। এই কার্টুনটি ২০১৮ সালের মে মাসে এঁকেছিলেন মেহেদী হক।
ধিকিধিকি জ্বলতে থাকা ওই আগুন যে একদিন বিস্ফোরণ ঘটাবে, তার ইঙ্গিত ছিল ওই কার্টুনে। ছয় বছরের মাথায় এ বছরের জুলাই-আগস্টে যখন ওই বোমাটি বিস্ফোরিত হলো, তখন রক্তের দাগ হাতে নিয়ে মসনদ ছেড়ে পালাতে হলো 'ফ্যাসিস্ট' হাসিনাকে।
এভাবেই সময়কে ধারণ করে সময়ের কথা বলে যায় কার্টুন। আর সমকালীন রাজনৈতিক ঘটনা, অসঙ্গতিকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখায় রাজনৈতিক কার্টুন। সরকার বা শাসকগোষ্ঠীর কোনো কর্মকাণ্ড বা তাদের সমালোচনা করে কার্টুন আঁকার একটা ঝুঁকি ছিল কিছুদিন আগেও।
কিন্তু জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সরকার যতই ভয় চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে, জনতা তা জয় করে ততই হয়ে উঠেছে অদম্য। বসে ছিলেন না কার্টুনিস্টরাও। সরকারের হত্যা, নিপীড়ন, গুলি, ধরে নিয়ে যাওয়ার সব দৃশ্য এঁকে ছড়িয়ে দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। আর এসব কার্টুন যেন ছিল আন্দোলনের বারুদ!
ছাত্র-জনতার এ আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে প্রফেশনাল কার্টুনিস্ট—সবাই এঁকেছেন। আন্দোলনের ২০ দিনে জন্ম হয়েছে অন্তত ৫০০ কার্টুনের। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাখো মানুষ এসব কার্টুন শেয়ার করেছেন, এ যেন কার্টুনের আন্দোলন!
কার্টুনের নানাবিধ দিক, বিশেষ করে জুলাই আন্দোলনকেন্দ্রিক কার্টুন নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন কার্টুনিস্ট মেহেদী হক, মাহাতাব রশীদ ও নাতাশা জাহান।
কার্টুন কেন গুরুত্বপূর্ণ কিংবা কার্টুনের শক্তিটা আসলে কোথায়, এ নিয়ে তাদের ভাষ্য, কার্টুন নিজেই একটি ভাষা। নান্দনিকতার পাশাপাশি গণমানুষের সঙ্গে সরাসরি-সহজ যোগাযোগ স্থাপনে এর ভূমিকা ব্যাপক। হাজারো শব্দ লিখেও যা বোঝানো কঠিন কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে বোঝানো যায় না, একটা কার্টুন এঁকেই সহজেই সেই কাজটা করা যায়। যেকোনো বিষয়ে মানুষের সঙ্গে সহজে সংযোগ স্থাপনে কার্টুন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কার্টুনের ইতিহাস সম্পর্কে আলোকপাত করে মেহেদী হক বলেন, কার্টুন আমাদের এখানে হঠাৎ করেই আসেনি। ভারতবর্ষে কয়েকশ বছর ধরে কার্টুনের চর্চা হচ্ছে। ঐতিহাসিকভাবে আমাদের বিভিন্ন আন্দোলনের সময়—ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আন্দোলনে বা সংকটকালে কার্টুন হয়েছে। এমনকি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, কামরুল হাসান, কাইয়ুম চৌধুরী 'চৌকা' ছদ্মনামে, 'তিতু' ছদ্মনামে কালাম মাহমুদ কার্টুন এঁকেছেন। কাজী আবুল কালাম ব্রিটিশ আমল থেকে কার্টুন আঁকতেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় সে সময়কার পত্র-পত্রিকায় কার্টুন হয়েছে। সে সময় ব্রিটিশরাই কার্টুনের এই মডার্ন ফর্মকে পরিচিত করে তুলেছিল। অনেক আগে আমাদের এখানে হতো পটচিত্র। ব্যঙ্গাত্মক পটচিত্রকে বলা হতো মাশকারি (মশকরা থেকে)। গান গেয়ে গেয়ে গ্রাম-বাংলায় এই পটচিত্র প্রদর্শিত হতো।
'এরই ধারাবাহিকতায় এখন আমরা দেখি আমাদের কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী সবাই কার্টুনের সঙ্গে কানেক্টেড। ইন্টারনেট এর একটা বড় কারণ। এবারের জুলাই অভ্যুত্থানে আমরা অসংখ্য কার্টুন দেখেছি। ক্ষোভ-বিদ্রোহ যাই বলি, সেটাকে প্রকাশ করার জন্য কিশোর-তরুণরা কার্টুনকে বেছে নিয়েছে। যারাই স্কেচ বা কেরিক্যাচার করতে পছন্দ করে, তারাও কিছু এঁকেছে। আমাদের ইতিহাসে হয়তো এত অল্প সময়ে এত রাজনৈতিক কার্টুন হয়নি কখনো। সারা বছরেও এত কার্টুন হয় না।'
রাজনৈতিক কার্টুন নিয়ে মেহেদী হকের ভাষ্য, কার্টুন আসলে কারও পক্ষে হয় না। কার্টুন সবসময় বিরুদ্ধমত। প্রচুর প্রোপাগান্ডা কার্টুন, কমিকস করার চেষ্টা হয়েছে বিগত সরকারসহ বিভিন্ন সময়ে। সেগুলো কিন্তু সাধারণ মানুষ ফিরেও দেখেনি। কিন্তু বিরুদ্ধমতের কার্টুন মানুষ বুকে আগলে রাখে, ইতিহাসের পাতায় থেকে যায়। স্বৈরাচারী এরশাদকে নিয়ে যে পরিমাণ কার্টুন এঁকেছেন শিশির ভট্টাচার্য, তিনি যদি কারও পক্ষে আঁকতেন, সেটা যে ফ্লপ হতো, তা তিনি জানতেন। এখন যা যা হচ্ছে—অরাজকতা, অগোছালো, শিশু একাডেমি পুড়িয়ে দেওয়া—এসব কিছু নিয়েও কিন্তু কথা হচ্ছে, সামনের দিনগুলোতে কার্টুনেও এগুলো চলে আসবে।
এদিকে কেউই রাজনীতির বাইরে নয় বলে মনে করেন তরুণ কার্টুনিস্ট মাহাতাব রশীদ। তার ভাষ্য, 'পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি থেকে যেহেতু আমরা তাড়িত হই, সেগুলো যেহেতু আমাকে ইনফ্লুয়েন্স করে, তাই কার্টুন এঁকে আমি তার জবাব দেই।'
একই ভাষ্য আরেক তরুণ কার্টুনিস্ট নাতাশা জাহানেরও। বলেন, আমাদের দেশের যে প্রেক্ষাপট, এখানে রাজনৈতিক কার্টুন খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটা প্রতিবাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভাষা। এই ভাবনাটা ভেতরে ছিল। আর জুলাই আন্দোলন ঘিরে নিজের ভেতরের সেই ভাবনাটা বহুগুণে বেড়ে গেছে।
দেশে এক সময় নির্বিঘ্নে রাজনৈতিক কার্টুন আঁকা হতো। ধীরে ধীরে সেই সংস্কৃতি কমে যায়। গত ১৫ বছরের শাসনামলে যা তলানিতে গিয়ে ঠেকে। তবে এর মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে কেউ কেউ এঁকে গেছেন। সবশেষ আন্দোলনে আবারও কিছুটা ফিরেছে রাজনৈতিক কার্টুনের প্রচলন।
দুর্নীতিবাজ বা অপরাধী শাসকগোষ্ঠী কার্টুনকে ভয় পায় বলে মনে করেন মেহেদী হক। 'একটা ছোট মেসেজসহ কার্টুন কোটি লোকের কাছে নিমিষেই বার্তা পৌঁছে দেয়। হাজার কোটি টাকা পাচার, দুর্নীতি বা শাসকগোষ্ঠীর বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ে করা কার্টুন খুব সহজেই কোনো ধরনের মেটাফোর ছাড়াই কোটি মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করে। মানুষও তা বুঝতে পারে খুব সহজে, যেটা হয়তো বোঝাতে পাঁচ হাজার শব্দের নিবন্ধ লিখতে হবে। আবার কার্টুনে তাদের একটা অবয়ব-অভিব্যক্তি চলে আসে', বলেন তিনি।
বিগত সময়ে নিজেদের মধ্যে একটা সেলফ-সেন্সরশিপ তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে মাহাতাব রশীদ বলেন, 'আমি গত প্রায় ৮-৯ বছর ধরে নিয়মিত কার্টুন আঁকি। পত্রিকায় রাজনৈতিক কার্টুন আঁকার বিষয়টা খুব একটা উৎসাহিত করা হয়নি এ সময়ে। সরাসরি রাষ্ট্রপ্রধান বা মন্ত্রীদের দিকে আঙুল তুলে কার্টুন করা যায়নি। প্রকৃতপক্ষে এটা ছিল অনেকটা মনের ভয়। ভয়ের সংস্কৃতির কারণেই এটা তৈরি হয়েছিল।'
'কিন্তু এবারের জুলাই অভ্যুত্থানের সময় এসে আমরা সেই ভয়টা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আঁকতে পেরেছি। শুরুটা হয়েছে প্রথমে অনলাইনে। যারা কার্টুন আঁকে, সব ভয় দূরে রেখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে দিয়েছে। এটা হয়েছে কারণ একজন যখন জানতে পারে যে শুধু সে না, আরও লাখো মানুষ একটা সরকার বা সরকারপ্রধানের বিরোধিতা করছে, তখন মোরাল জায়গাটা শক্তিশালী হয়ে যায়, ভয়টা কেটে যায়। উদাহরণ হিসেবে বলি, আগে যখন আঁকতাম সরকারপ্রধান বা মন্ত্রী-এমপিদের সরাসরি চেহারা আঁকিনি, প্রতীকীভাবে এঁকেছি। যেমন হয়তো হাত বা চুড়ি বা আঁচল এঁকেছি। কিন্তু যখন রাস্তায় পুলিশের গুলিতে ছাত্রদের মৃত্যু হচ্ছে, তখন আর ওই প্রতীকী কার্টুন আঁকার মধ্যে থাকিনি, সরাসরি শেখ হাসিনার চেহারা এঁকে ফেলেছি। এটা এবারের অভ্যুত্থানে আমার আঁকা-আঁকিতে পরিবর্তন এনে দিয়েছে। বুঝতে পেরেছি যে ভয় পেয়ে আর লাভ নেই। মানুষ যখন মরছে, তখন নিজেকে সেলফ-সেন্সরশিপে আটকে রাখার কোনো মানে হয় না।'
নাতাশা জাহান বলেন, এক সময় পত্রিকায় শেখ হাসিনা-খালেদা জিয়ারও কার্টুন হয়েছে। কিন্তু পরে এসে সেটা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। এরপর সবাই প্রতীকীভাবে এঁকেছে। জুলাইতে এসে আমরা সরাসরি শেখ হাসিনার চেহারা আঁকলাম। শুরুতে আমরাও অ্যাবস্ট্রাক্ট এঁকেছি। কিন্তু পরে যখন নির্বিচারে হত্যা শুরু হলো, তখন তো আমরা সরাসরি তার চেহারা আঁকতে লাগলাম।
রাজনৈতিক কার্টুন আঁকাটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কার্টুন আঁকলে শিল্পীর জন্য হয়রানিসহ জেল-জরিমানার ভয়ও থাকে। বিশেষ করে যখন 'স্বৈরাচার' মানসিকতার কোনো সরকার ক্ষমতায় থাকে।
জুলাইয়ে যারা কার্টুন এঁকেছেন, ভবিষ্যতে কী হবে, সেটা না ভেবে দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে কাজ করেছেন উল্লেখ করে মেহেদী বলেন, আমার ক্ষেত্রে সরাসরি কেউ এসে কখনো বলেনি যে আপনি আঁকতে পারবেন না। কিন্তু উকিল নোটিশ এসেছে অনেকবার। সত্যি বলতে কার্টুন এঁকেছি বলে আমাকে ধরে নিয়ে যাবে, এটা আমি মনে করি না। বিগত সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করেছিল, সেটাও পত্রিকার কার্টুনকে আটকাতে পারে না। তবে, যেহেতু আমি জানি না কোনটা আঁকলে কী হবে, সেজন্য অজানা চাপটাই বেশি অনুভব করেছি। পাকিস্তান আমলে তোফাজ্জল নামে একজন কার্টুনিস্ট ছিলেন, তাকে হুলিয়া মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে। কাজী আবুল কাশেমের পেছনে লেগেছিল সে সময়ের শাসকগোষ্ঠী। চারুকলার শিক্ষক এক কার্টুনিস্টের বিরুদ্ধে দেশের ৬৪ জেলায় মামলা হয়েছিল।
৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক কার্টুন কালচারে একটা উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে বলে মনে করেন মাহাতাব। 'পত্রিকায় আমার আঁকা শেখ হাসিনা বা সরকারপ্রধানের ছবি প্রথম ছাপা হয়েছে ৬ আগস্ট। এরপর থেকে প্রতিদিনই কমবেশি আঁকছি। পত্রিকার জন্য আঁকছি। কার্টুন এক্সিবিশন হচ্ছে, সামাজিক মাধ্যমে সবাই শেয়ার করছে।'
জুলাই আন্দোলনে কার্টুন এঁকে কিছুদিন পালিয়েও বেড়াতে হয়েছে নাতাশাকে। 'আমার বাসায় সাদা পোশাকে পুলিশ এসেছে তথ্য নিতে। এরপর থেকে অন্য বাসায় থাকতে হয়েছে আমাকে। সেখান থেকেই বসেই কার্টুন এঁকেছি, আন্দোলনে গিয়েছি। ঝুঁকি থাকলেও আমরা এঁকে গেছি দেশের জন্য, ন্যায়ের জন্য। তখন ভেবেছিলাম, আমার আঁকা কার্টুনের মাধ্যমে একটা প্রভাব সৃষ্টি করে মারা গেলেও কোনো আফসোস থাকবে না। কোনো কিছু না এঁকে কিংবা হাবিজাবি এঁকে মারা যাওয়ার চেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ কিছু এঁকে মারা যাওয়াটা বেটার। সেটা তো অনেক গর্বের।'
'আমি বরং খুশিই হয়েছি যে আমি কার্টুন আঁকায় আমার তথ্য নিতে আসছে। তার মানে আমি একটা প্রভাব ফেলতে পেরেছি। তখন তো মনে হয়েছে আরও আঁকতে হবে। আমার আঁকা কার্টুন যদি ওদের গায়ে না লাগত, তাহলে তো আমার খোঁজ করত না। আমার সহশিল্পীদের অনেককেই একই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে', যোগ করেন তিনি।
বাধা তো আসতেই পারে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কিছু গেলে তার ঝুঁকিও বেশি থাকবে। তবে এর মধ্যেই কাজ করে যেতে হয়, সচেতনরা কাজ করে যান। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আমরা নানা মাধ্যমের পাশাপাশি কার্টুন শিল্পের ক্ষেত্রে যেটা দেখেছি। কিন্তু এই আন্দোলনের মাধ্যমে যেই নতুন এক বাংলাদেশ আমরা পেলাম, সেখানো হয়তো আর এমন কোনো শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতায় আসবে না, যারা আরোপিত পন্থায় কাজ করবে, হস্তক্ষেপ করবে স্বাধীনতায়। সব শ্রেণি-পেশার মতো একজন শিল্পীও তার মতো করে কাজ করবে। সেক্ষেত্রে শতভাগ স্বাধীনতা তার থাকবে। ক্ষমতা যাতে কোনোভাবেই তার ওপর প্রভাব না ফেলতে পারে।
'আমি যদি আঁকা বন্ধ করে দেই, তাহলে হয়তো অনেকের কাছে নেগেটিভ মেসেজ যেতে পারে—এমন ভাবনা আমাকে সবসময় আঁকতে উৎসাহিত করেছে। যারা আমার আঁকাআঁকির সঙ্গে কানেকশন ফিল করেছেন, তাদের অনেকে আঁকতে শুরু করেছেন। রাজনৈতিক কার্টুন কাউকে বলে-কয়ে আঁকানো যায় না। এটা শিল্পীর ভেতরের তাড়না থেকে আসতে হয়। যার আসে তিনি যদি সংগীতের লোক হন তাহলে গানে গানে বলবেন, যিনি আঁকতে পারেন, তিনি এঁকে প্রকাশ করবেন। এটা এই আন্দোলনের সময় আমরা দেখেছি। গোলাগুলি হয়েছে মানুষ মারা গেছে, সঙ্গে সঙ্গে কেউ এটা নিয়ে কার্টুন এঁকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে দিয়েছে', বলেন মেহেদী।
সবসময়ই কার্টুন হওয়া উচিত উল্লেখ করে মাহাতাব বলেন, 'এই আন্দোলন সবার কণ্ঠই সরব করেছে। আন্দোলন চলাকালে অনেক নতুন কার্টুনিস্ট পেয়েছি আমরা। অনেকে আগে রাজনৈতিক কার্টুন আঁকতেন না, এবার এঁকেছেন। ইলাস্ট্রেশন করতেন, অ্যানিমেশন করতেন—তারাও কার্টুন এঁকেছেন। আশা করি অনেকেই ধরে রাখবেন। কার্টুন সবসময়ই হওয়া উচিত, প্রতিদিন দৈনন্দিন বিষয়াদি নিয়ে কার্টুন হওয়া উচিত। আন্দোলনের সময়, বিক্ষুব্ধতার সময় তো হবেই, ওয়াসার পানি কেন নোংরা, এত মামলা হচ্ছে চারিদিকে যেন হোলসেল বা পাইকারি দরে মামলা হচ্ছে—সব নিয়ে কার্টুন হতে হবে। সরকারে যেই থাকুক, সেটা যদি আমার পছন্দের নেতৃত্বও হয়ে থাকে, তাদের সমালোচনাও যেন করা যায়।'
একজন শিল্পীকে সত্যের পক্ষে কাজ করতে হবে বলে মনে করেন নাতাশা। 'কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ, সেটা তো বোঝা যায়। শিল্পীকে সত্যের পক্ষে থাকতে হবে। সত্যকে সত্য, মিথ্যাকে মিথ্যা বলতে হবে। আমার আগ্রহের জায়গা ছিল কমিকস, বিভিন্ন ক্যারেক্টার আঁকা। কিন্তু আন্দোলনের সময় আমিও পলিটিক্যাল কার্টুন আঁকায় মনোনিবেশ করি। আসলে এই তাড়নাটা ভেতর থেকে আসতে হবে। এটা জোর করে তৈরি করা যায় না। তবে, শিল্পীর তো স্বাধীনতা আছে। তার ইচ্ছে না হলে তিনি আঁকবেন না। কিন্তু সময়ে প্রতিফলন তার কাজে থাকলে সময়ও তাকে মনে রাখবে। মানে সংকটের সময় তাকে তার জায়গা থেকে প্রতিবাদটা করতে হবে। গণমানুষের অধিকারের পক্ষে থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। সরকার বা ক্ষমতার পক্ষে থাকাটা নয়', যোগ করেন তিনি।
Comments