সিএনজি-অটোরিকশার পরিত্যক্ত গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে বিপাকে বিআরটিএ

ব্যবহৃত ও পুরনো সিএনজি সিলিন্ডার। ফাইল ছবি: সংগৃহীত
ব্যবহৃত ও পুরনো সিএনজি সিলিন্ডার। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম নগরীতে মেয়াদোত্তীর্ণ প্রায় ১৩ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশার স্ক্র্যাপ গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিস।

দফায় দফায় নিলামে তোলা হলেও নানা অনিয়মের অভিযোগে এগুলো বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। ফলে ২০১৮ সাল থেকে জমা হওয়া এসব সিলিন্ডার এখন পড়ে আছে চট্টগ্রাম বিআরটিএর বালুছড়া কার্যালয়ে।

অভিযোগ উঠেছে, অসাধু সিন্ডিকেটের কারণে প্রায় কোটি টাকা মূল্যের স্ক্র্যাপগুলো টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করা যাচ্ছে না। কয়েক দফা দরপত্র দিয়েও কাজ হয়নি। সর্বশেষ ২০২১ সালে সর্বোচ্চ দরদাতা 'ইউসুফ এন্টারপ্রাইজ' মাত্র ৩৩ লাখ টাকায় স্ক্র্যাপগুলো কিনেছিল। পরবর্তীতে সেটিও বাতিল করা হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আবারও সিলিন্ডারগুলো ধ্বংসের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিআরটিএ অফিস থেকে ঢাকায় সদর দপ্তরে এই ব্যাপারটি নিষ্পত্তি করতে চিঠি দিয়েছেন বিভাগীয় পরিচালক মো. মাসুদ আলম।

বিতর্ক এড়াতে এবার চিঠিতে একটি কমিটি গঠন এবং তার সুপারিশের ভিত্তিতে কাজ করার অনুমতি চাওয়া হয়েছে, তবে এখনো চিঠির জবাব আসেনি।

সূত্রমতে, মেয়াদোত্তীর্ণ সিএনজি-অটোরিকশার ১১ হাজার ৮২৯টি স্ক্র্যাপ গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির জন্য ২০২১ সালের ২৪ আগস্ট 'ভোরের সময়' নামে একটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দরপত্র আহ্বান করেন বিআরটিএ চট্টগ্রাম সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) এমডি শাহ আলম। এছাড়া, ২০১৮ সাল থেকে জমা হওয়া আরও কিছু সিলিন্ডার রয়েছে।

আগ্রহীদের কাছে ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর বিআরটিএ অফিস থেকে ৫০০ টাকা অফেরতযোগ্য মূল্যে দরপত্র শিডিউল ক্রয় এবং পরের দিন ৮ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টায় টেন্ডার বাক্স খোলার কথা বলা হয়।

তখন মাত্র ছয়টি দরপত্র জমা পড়েছিল। সেই সময় অংশ নেওয়া মেসার্স ইসলামিয়া এন্টারপ্রাইজ প্রতি গ্যাস সিলিন্ডারের দর ধরেছিল ১৮৫ টাকা, জেএস করপোরেশন ১৬১ টাকা, মেসার্স সিরাজ ট্রেডিং ১৩০ টাকা, এলাহী এন্টারপ্রাইজ ২৭৫ টাকা, ইউসুফ এন্টারপ্রাইজ ২৮০ টাকা এবং শতরূপা এন্টারপ্রাইজ ২৬১ টাকা। এদের মধ্যে ইউসুফ এন্টারপ্রাইজকে সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত করা হয়।

তবে নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে তা বাতিল করে দেয় বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ ছিল, সিন্ডিকেট করে কম মূল্য দেখিয়ে সেগুলো হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছে।

বিআরটিএ সূত্র জানিয়েছে, ২০০১ সাল থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে ১৩ হাজার করে মোট ২৬ হাজার সিএনজি-অটোরিকশার নিবন্ধন দেওয়া হয়। সেসব গাড়ির রাস্তায় চলাচলের নির্ধারিত মেয়াদ ছিল ১৫ বছর। আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে যাওয়ায় মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে চট্টগ্রামে ১৩ হাজার সিএনজি স্ক্র্যাপ করে নতুন করে প্রতিস্থাপন করা হয়। ২০০০, ২০০১, ২০০৩ ও ২০০৪ মডেলের ১১ হাজার ৮২৯টি অটোরিকশার স্ক্র্যাপ হিসেবে ধ্বংস করা হয়েছে। এসব অটোরিকশার মালিকদের নতুন কেনা গাড়ির নিবন্ধন দিচ্ছে বিআরটিএ।

বিআরটিএ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাতিল হওয়া প্রতিটি গ্যাস সিলিন্ডারের ওজন প্রায় ১৭ থেকে ১৮ কেজি। দরপত্রের নিয়ম অনুযায়ী, যে প্রতিষ্ঠান কিনবে, তাকে সিলিন্ডারগুলো কেটে তিন ভাগ করে নিতে হবে—যাতে পরবর্তীতে এগুলো বাইরে বিক্রি সম্ভব না হয়।

বিআরটিএ সূত্র জানায়, আগের টেন্ডার প্রক্রিয়া ব্যর্থ হওয়ায় ২০২৩ সালের ৩ মে আবারও নতুন করে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বিআরটিএ সহকারী পরিচালক রায়হানা আক্তার উর্থী। তিনি সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলেও অজানা কারণে তা থেমে যায়।

গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে আগের দরপত্রে ত্রুটির ব্যাপারে জানতে এবং কী কারণে ২০২৩ সালের টেন্ডার প্রক্রিয়া বন্ধ হয়েছিল তা জানতে বিআরটিএ সহকারী পরিচালক রায়হানা আক্তার উর্থীকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও পাওয়া যায়নি।

বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিসের পরিচালক (ইঞ্জি.) মো. মাসুদ আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি নতুন এসেছি অফিসে। আগে যারা ছিলেন, তারা বিস্তারিত বলতে পারবেন।'

তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।

বিআরটিএ সদর দপ্তরে চিঠি পাঠানোর তথ্য নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক সৈয়দ আইনুল হুদা চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমিও এসেছি বেশ কিছু দিন আগে। ২০১৮ সাল থেকেই সিলিন্ডারগুলো জমতে শুরু করে। সেগুলো এখন আমাদের জন্য বিশাল বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।'

'আমরা বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে ঢাকায় একটি কমিটি গঠন করে দেওয়ার কথা বলেছি। সেখান থেকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নিয়ে কমিটি গঠন করে দিলে তাদের নির্দেশনা মতোই কাজ হবে,' বলেন তিনি।

আইনুল আরও বলেন, 'এগুলো জমে থাকায় আমাদের স্থান সংকুচিত হয়ে গেছে, এমনিতেই আমাদের স্থান সংকট, নানা ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। শিগগির যাতে এর নিষ্পত্তি হয়, আমরা সেই চেষ্টা করছি।'

Comments

The Daily Star  | English
Prof Yunus in Time magazine's 100 list 2025

Prof Yunus named among Time’s 100 Most Influential People of 2025

A tribute article on Prof Yunus was written by Hillary Clinton for the magazine

51m ago