ডেইলি স্টার-প্রথম আলোর সামনে বিক্ষোভ: ৩৪ নাগরিকের উদ্বেগ

ছবি: প্রথম আলোর সৌজন্যে

দ্য ডেইলি স্টার ও দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার ঢাকা ও চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ এবং প্রথম আলোর রাজশাহী ও বগুড়া কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন ৩৪ জন নাগরিক।

একইসঙ্গে তারা গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ও সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সুরক্ষায় সরকারসহ সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

এই সংক্রান্ত বিবৃতিতে তারা বলেন, 'একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর এ রকম ধৃষ্টতাপূর্ণ সহিংস আক্রমণ ও সন্ত্রাসী তৎপরতা শুধু দুটি স্বনামধন্য দৈনিকের ওপর নয়, সমগ্র সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ এবং সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকার সবার আছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত কোনো খবর বা প্রতিবেদনের বিষয়ে অভিযোগ থাকলে সেটির জন্য যথাযথ, আইনানুগ কিংবা গঠনমূলক প্রক্রিয়া অবলম্বন না করে পত্রিকা বন্ধ করার জন্য বিক্ষোভ ও হামলার বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।'

'বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের একাংশের অভিযোগ হলো, ''ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের জঙ্গি বানানোর কারিগর হিসেবে কাজ করে।" এটি একটি গুরুতর অভিযোগ এবং কীসের ভিত্তিতে তারা এই অভিযোগ করছেন সেটি বোধগম্য নয়। কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ ছাড়া এই ধরনের ঢালাও অভিযোগ, উসকানি এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদ্বেষ ছড়ানোর পেছনে কোনো স্বার্থান্বেষী মহলের দুরুভীসন্ধি রয়েছে কি না তা যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে খতিয়ে দেখা জরুরি,' উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।

এতে আরও বলা হয়, 'এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, যে দুটি পত্রিকাকে লক্ষ্য করে উসকানি ও বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে, সেই দুটি পত্রিকা সদ্যপতিত স্বৈরাচার সরকারের আমলেও নানাভাবে মামলা ও হয়রানিসহ শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়ে কালো তালিকাভুক্ত হয়েছিল। পত্রিকা দুটির সম্পাদক দ্বয়ের বিরুদ্ধে বিগত সরকারের দলীয় কর্মীরা কয়েক ডজন হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করেছিলেন। স্বৈরশাসন অবসানের পর সমাবেশ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সুযোগকে অপব্যবহার করে সাম্প্রদায়িক উসকানি ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরির মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল ও অকার্যকর করার উদ্দেশ্যের অংশ হিসেবে এ দুটি পত্রিকার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও হামলার ঘটনাগুলো ঘটছে বলে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।'

'এ ছাড়া, নতুন করে একটি ভয়ের সংস্কৃতি সৃষ্টির অপচেষ্টাও দৃশ্যমান। কাজেই সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান বিষয়টিকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে তদন্তের মাধ্যমে উসকানিদাতা ও তাদের ইন্ধনদাতাদের দ্রুত শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। গণমাধ্যম কার্যালয়ে ভাঙচুরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার যে অঙ্গীকার তথ্য উপদেষ্টা ব্যক্ত করেছেন, সেটিকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে এই ঘটনাগুলোর উসকানিদাতা ও ইন্ধনদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।'

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ, মানবাধিকার কর্মী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না, সুব্রত চৌধুরী ও তবারক হোসেন, ব্লাস্টের অনারারি নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, জোবায়দা নাসরিন, ড. খাইরুল ইসলাম চৌধুরী, লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সের ভিটিং প্রফেসর ড. স্বপন আদনান, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, আলোকচিত্রী ড. শহিদুল আলম, লেখক ও গবেষক রেহনুমা আহমেদ, বেলার ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী তাসলিমা ইসলাম, বিএনডব্লিউএলএর নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী, ল্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. সাদাফ নুর, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্যের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনিন্দ্র কুমার নাথ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মিনহাজুল হক চৌধুরী, ব্যারিস্টার আশরাফ আলী, ব্যারিস্টার শুভ্র চক্রবর্তী, ব্যারিস্টার শাহাদাত আলম, কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী, সাংবাদিক সায়দিয়া গুলরুখ, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ফারহা তানজিম তিতিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী, সাংবাদিক মাহবুব হাসান, মানবাধিকারকর্মী দীপায়ন খীসা, আদিবাসী অধিকারকর্মী হানা শামস আহমেদ।

Comments

The Daily Star  | English

22 out of 35 parties want caretaker govt system

As per proposals sent to constitution reform commission

8h ago