ডিসি সম্মেলন-২০২৫

জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতা আরও কমানোর প্রস্তাব ডিসিদের

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল তেজগাঁয়ে তার কার্যালয়ে তিন দিনব্যাপী ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধন শেষে সম্মেলনে অংশ নেওয়া কয়েকজনের সঙ্গে ছবি তোলেন। ছবি: পিআইডি

বিদ্যমান ব্যবস্থায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের চেয়ে ডিসি-ইউএনওরা বেশি ক্ষমতা ও সুবিধা ভোগ করেন। এরপরও স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতা কমিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের ক্ষমতা আরও বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন তিন জেলার ডিসি।

গতকাল রোববার তিন দিনব্যাপী 'ডিসি সম্মেলন-২০২৫' ঢাকায় শুরু হয়েছে। এতে ৬৪ জেলার ডিসি এবং আট বিভাগের বিভাগীয় কমিশনারের ৩৫৪টি প্রস্তাব আলোচনার জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে। সম্মেলন শেষে হবে আগামীকাল মঙ্গলবার।

শরীয়তপুরের ডিসি উপজেলা পর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরের নিয়োগ কমিটিতে ইউএনওকে সভাপতি করার প্রস্তাব করেছেন, যেখানে উপজেলা চেয়ারম্যান সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

রাঙ্গামাটি ও পিরোজপুরের ডিসি উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব ইউনএনওকে দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী এ কমিটির প্রধান হন উপজেলা চেয়ারম্যান।

এক নজরে ডিসিদের ৫ দাবি

•        ডিসি-ইউএনওসহ মাঠ প্রশাসনে রেশন

•        মোবাইল ও ইন্টারনেট খরচ

•        ইউএনওর বাসভবনে বাবুর্চি পদ

•        সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফি নির্ধারণ

•        ইজিবাইকের জন্য নীতিমালা

ফরিদপুরের ডিসি উপজেলা পরিষদের কর্মচারীদের নিয়োগ ও বদলি ডিসিদের অধীন করার প্রস্তাব করেছেন।

বর্তমানে এ সংক্রান্ত কর্মচারীদের নিয়োগ কমিটির প্রধান ইউএনও, নিয়োগপত্র ইস্যু করেন উপজেলা চেয়ারম্যান।

এ ছাড়াও ডিসিরা জেলা এবং উপজেলা পর্যায়সহ সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন। এর মধ্যে ইউএনওর বাসভবনে বাবুর্চি পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করেছেন রাজশাহী ও যশোরের ডিসি। উল্লেখ্য, উপজেলা চেয়ারম্যানদের জন্য বাবুর্চির কোনো পদ নেই।

জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ, গৃহঋণ বাড়ানো, চিকিৎসা ভাতা পাঁচ হাজার টাকা এবং সরকারি কর্মচারীদের সন্তানদের শিক্ষা সহায়ক ভাতা ৫০০ টাকার থেকে বাড়িয়ে দুই হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছেন ময়মনসিংহের ডিসি।

অন্যদিকে মাঠ প্রশাসনে কর্মরত কর্মচারীদের জন্য মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ভাতা চালুর প্রস্তাব করেছেন গোপালগঞ্জের ডিসি।

সার্কিট হাউজ এবং ডিসি কার্যালয়কে 'কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন' (কেপিআই) অন্তর্ভুক্তকরণের প্রস্তাব করেছেন মাদারীপুরের ডিসি। উল্লেখ্য, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অনেক জেলার ডিসি অফিসে আন্দোলনরত জনতা হামলা চালিয়েছিল।

পার্বত্য তিনটি জেলায় কর্মরত কর্মচারীদের পাহাড়ি ভাতা আরও বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটির ডিসিরা।

এডিসিদের বদলি ও পদায়ন বিভাগীয় কমিশনারের অধীনে দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন বান্দরবানের ডিসি, যা বর্তমানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের হাতে রয়েছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফি

এক শিক্ষাবর্ষে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোন কোন খাতে কত টাকা ফি আদায় করতে পারবে এবং আদায় করা ফি কীভাবে ব্যয় হবে সে সম্পর্কে নীতিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব করেছেন পাবনার ডিসি মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম।

এতে করে 'শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে' উল্লেখ করে পাবনার ডিসি তার প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তিতে বলেছেন, শিক্ষাখাতে যথেচ্ছ ফি আদায় বন্ধ হবে, সকল প্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট হারে ফি আদায় নিশ্চিত হবে। এছাড়া আদায়কৃত টাকা নীতিমালা অনুযায়ী ব্যয়ের বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি হবে, এতে সামগ্রিকভাবে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ উপকৃত হবে।

মাগুরার ডিসি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বদলির প্রস্তাব করেছেন। এতে করে শিক্ষকদের মধ্যে পেশাদারত্ব ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে তৈরি সমস্যা সমাধান সম্ভব হবে বলে তিনি যুক্তি হিসেবে তুলে ধরেন।

এছাড়া সাতক্ষীরা, ময়মনসিংহ, মানিকগঞ্জ, পাবনা ও রাঙ্গামাটির ডিসিরা মাদ্রাসাকেন্দ্রিক শিক্ষা উন্নয়ন সংক্রান্ত একাধিক প্রস্তাব করেছেন।

মাঠ প্রশাসনে রেশন সুবিধা

মাঠ প্রশাসনের সকল পর্যায়ের কর্মচারীদের জন্য রেশন চালু করার প্রস্তাব করেছেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারসহ গোপালগঞ্জ ও জয়পুরহাটের ডিসি। এই প্রস্তাবের পেছনে যুক্তি হিসেবে তারা বলেছেন, প্রশাসনের কর্মচারীরা বিভিন্ন বাহিনীর মতো দুর্যোগকালে সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করেন। তারা আরও বলেছে দুর্নীতি দমন কমিশন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বেসামরিক কর্মচারীরা রেশন সুবিধা পান। কিন্তু মাঠ প্রশাসনের কর্মচারীরা পান না।

অন্যদিকে জয়পুরহাটের ডিসি জেলা প্রশাসনের কর্মচারীদের জন্য ঝুঁকি ভাতা বরাদ্দ এবং সাতক্ষীরা ডিসি অতিরিক্ত দায়িত্বের ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন।

জনসম্পৃক্ত প্রস্তাব

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার জন্য নীতিমালা প্রণয়ন, রেলের পোষ্যকোটা বাতিল করা, সব জেলায় পর্যাপ্ত জনবলসহ আইএমইডি এবং দুদক কার্যালয় প্রতিষ্ঠা ছাড়াও মোবাইল কোর্টের অধীনে কার্যক্রমের ব্যাপ্তি বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন কয়েকটি জেলার ডিসি।

Comments

The Daily Star  | English
Kudos for consensus in some vital areas

Kudos for consensus in some vital areas

If our political culture is to change, the functioning of our political parties must change dramatically.

3h ago