দুদককে অকার্যকর করার চেষ্টা করা হচ্ছে কি না, প্রশ্ন টিআইবির

কক্সবাজারে ভূমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে দুর্নীতির মামলার আসামি আমিন আল পারভেজকে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পরিচালক হিসেবে পদায়নের সরকারি উদ্যোগে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি প্রশ্ন তুলে বলেছে, সরকারের ভেতর থেকেই দুর্নীতির সুরক্ষা ও দুদককে অকার্যকর করার চেষ্টা করা হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্ন মোটেই অযৌক্তিক নয়।
গণমাধ্যম সূত্রের বরাত দিয়ে টিআইবি বলেছে, ২০২০ সালে কক্সবাজারে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ভবন নির্মাণ ও ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্পে ২২ কোটি ২১ লাখ ২৮ হাজার ৮৩৬ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আমিন আল পারভেজের বিরুদ্ধে মামলা হয়।
তিনি তখন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। দুদকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমিন আল পারভেজ প্রতারণা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে নিজেকে এবং অন্যদের অবৈধভাবে লাভবান করেছেন।
এমন একজন কর্মকর্তাকে দুদকে পরিচালক পদে নিয়োগ দিতে সরকারের প্রচেষ্টাকে পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, কোন মানদণ্ডে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে প্রেষণে দুদকেই নিয়োগ দেওয়া হলো? সেটিও এমন একটি সময়ে, যখন দুদক সংস্কার কমিশন সুস্পষ্ট সুপারিশ করেছে যে, দুদকের অভ্যন্তরে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চিহ্নিত করে বিভাগীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে চাকরি থেকে বহিষ্কার করে ফৌজদারি বিচারে সোপর্দ করতে হবে।'
'এই সুপারিশের পুরোপুরি বিপরীতে গিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত একজন কর্মকর্তাকে নিয়োগের ঘটনা আসলে কী বার্তা দেয়? উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এমন মনে হওয়া অমূলক নয় যে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দুদককে শক্তিশালী করার বদলে সরকারের ভেতর থেকেই দুদককে অকার্যকর করার চেষ্টা করা হচ্ছে! এবং বাস্তবে দুর্নীতির সুরক্ষা দেওয়ার জন্য প্রশাসনে ষড়যন্ত্র বিদ্যমান। দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত একজন কর্মকর্তাকে দুদকে পদায়নে সরকারের উদ্যোগ একেবারেই অগ্রহণযোগ্য ও একইসঙ্গে গভীর উদ্বেগজনক,' বলেন তিনি।
দুদকে পরিচালক হিসেবে আমিন আল পারভেজের নিয়োগ বাতিল হয়েছে উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'অভিযুক্ত কর্মকর্তার নিয়োগ বাতিলে দুদকের এ সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাতে চাই। তবে আমরা আশা করব, দুদক এই ঘটনাকে একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে গ্রহণ করবে এবং ভবিষ্যতে নিয়োগ ও পদায়ন, বিশেষ করে প্রেষণে নিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্ক থেকে যে কোনো প্রকার প্রভাব থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে নিরবচ্ছিন্ন সাফল্য দেখাতে পারবে। একইসঙ্গে সরকার, বিশেষ করে আমলাতন্ত্র এ ধরনের অপপ্রয়াসের মাধ্যমে দুদক সংস্কারকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করা থেকে বিরত থাকবে।'
তিনি আরও বলেন, 'মনে রাখতে হবে, অন্তবর্তী সরকারের দায়িত্ব ভবিষ্যতের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করা, দুর্নীতির সুরক্ষা দিয়ে বা দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্তদের পুরস্কৃত করে নিজেকে বিব্রত করা নয়। তাহলে কর্তৃত্ববাদী মেয়াদের চৌরতন্ত্রের সঙ্গে পার্থক্য থাকলো কোথায়?'
Comments