বিতর্কিত নির্বাচন: প্রশাসনের শতাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার

আওয়ামী লীগের টানা দেড় দশকের শাসনামলে বিতর্কিত নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারী সাবেক ডিসি, বিভাগীয় কমিশনারসহ ১১০ থেকে ১২০ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যাদের বেশির ভাগই যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত ও সচিব হিসেবে কর্মরত আছেন।
গতকালের ৩৩ জনসহ এরই মধ্যে ৪৫ জন সাবেক ডিসিকে ওএসডি করা হয়েছে, যারা বর্তমানে যুগ্মসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
কয়েকজন সাবেক ডিসির তালিকা দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে, এই সংখ্য ৫০ এর মতো হতে পারে। পরবর্তী ধাপে ২৭ থেকে ৩০ জনের মতো কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হতে পারে, এর মধ্যে চার থেকে ছয় জন সচিব এবং ২৩ জন অতিরিক্ত সচিবের নাম থাকতে পারে।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের অন্তত তিন জন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য জানতে পেরেছে। যারা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে কর্মরত আছেন।
এদিকে গতকাল রাত ৯টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া স্ট্যাটাসে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইঁয়া বলেছেন, '২০১৮ সালের নির্বাচনে রাতের ভোট করা সকল ডিসিদের ওএসডি/বাধ্যমূলক অবসরে পাঠানো হবে। ইতিমধ্যে ৩৩ জনকে ওএসডি করা হয়েছে।'
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী ডিসিদের মধ্যে ১২ জনকে আগেই বিভিন্ন সময়ে ওএসডি করা হয়েছে। তাই গতকালের ৩৩ জনসহ বর্তমানে ৪৫ জন ওএসডি হয়েছেন।
পরবর্তী ধাপে কী সিদ্ধান্ত আসতে যাচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সব কর্মকর্তা সমান দোষী নন, যারা সবচেয়ে বেশি বির্তকিত কাজ করেছেন তাদের মধ্যে যাদের চাকরির বয়স ২৫ বছরের বেশি হয়েছে তাদেরকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।'
'যারা বড় ধরনের বিতর্কিত কাজ করেছেন, কিন্তু চাকরির বয়স ২৫ হয়নি তাদের সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় মামলা করা হবে। যারা তুলনামূলক কম বিতর্কিত কাজে যুক্ত ছিলেন তাদের ওএসডি করে যাছাই-বাছাই করা হবে, কেউ যদি নিজে থেকে দোষ স্বীকার করে নিজেকে শোধরানোর সুযোগ চায় সরকার সেটা বিবেচনা করতে পারে,' এমনটাই ধারণা দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সূত্র।
ওপর আরেক সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপতির অনুমোদন মিললে আজ বৃহস্পতিবার আরও বেশ কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার প্রজ্ঞাপন হতে পারে। এই ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক অবসরে যাদের পাঠানো হবে তাদের তালিকার প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করতে পারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এসব পদক্ষেপের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আওয়ামী লীগ আমলে যেসব কর্মকর্তা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন তাদের সবার বিরুদ্ধে পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেওযা হবে।'
গতকাল ওএসডি হওয়া ৩৩ জন যুগ্মসচিব হলেন- আবুল ফজল মীর, মঈনউল ইসলাম, মো. ওয়াহিদুজ্জামান, এ কে এম মামুনুর রশিদ, এস এম আব্দুল কাদের, ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম, মোহাম্মদ দাউদুল ইসলাম, মো. মাজেদুর রহমান খান, এ জেড এম নূরুল হক, এস এম অজিয়র রহমান, মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক, গোপাল চন্দ্র দাস, মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী, ড. সাবিনা ইয়াসমিন, ড. মো. আতাউল গনি, আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন, এম কাজী এমদাদুল ইসলাম, এস এম মোস্তফা কামাল, কাজী আবু তাহের, মো. মিজানুর রহমান, মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, আনার কলি মাহবুব, সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন, মাহমুদুল কবীর মুরাদ, অঞ্জন চন্দ্র পাল, মোছ. সুলতানা পারভীন, মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, মো. শহিদুল ইসলাম, মোহাম্মদ হেলাল হোসেন, মো. আলী আকবর, কবীর মাহমুদ, মো. মাহমুদুল আলম, হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন।
Comments