ভোটের অধিকারের ব্যাপারে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: জেনেভায় আসিফ নজরুল

অন্তর্বর্তী সরকার ভোটের অধিকারের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।
বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে জেনেভায় প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে বুধবার তিনি এ কথা বলেন।
গত জুলাই-আগস্ট বিক্ষোভের সঙ্গে সম্পর্কিত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের ওপর জাতিসংঘের মানবাধিকার তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদন জেনেভায় উপস্থাপনা করা হয়।
এ সময় সেখানে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্কের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিরা বেশ কিছু প্রশ্ন ও মতামত ব্যক্ত করেন। এর মধ্যে সম্প্রতি সংখ্যালঘু ইস্যু ও পার্বত্য চট্টগ্রামে নির্বাচন ইস্যুতে করা প্রশ্নের উত্তর দেন ড. আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কিছু রাজনৈতিক সহিসংতার ঘটনা ঘটেছে আওয়ামী লীগ রিজিমের নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে। যারা বহু বছর ধরে মানুষকে নির্যাতন ও হত্যা করেছে। তবে এসব হামলার ঘটনা অধিকাংশই ঘটেছে মুসলিমদের ওপর। সামান্য কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে। এটিকে সংখ্যালুঘুদের ওপর হামলা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। আওয়ামী রিজিমের সময় মানুষকে নির্যাতন ও হত্যার সঙ্গে জড়িতদের ওপর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ এসব ঘটনা। আমরা সেটার নিন্দা জানাই।
তিনি বলেন, এটি সংখ্যালঘু ইস্যু ব্র্যান্ড করা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমাদের কাছে পরিসংখ্যান আছে, এ সম্পর্কে আমাদের কাছে ফ্যাক্ট চেকড তথ্য আছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে নির্বাচন প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষের ভোটের অধিকারের ব্যাপারে আমাদের সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেটা পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল হোক বা যেকোনো স্থানই হোক। আমরা এরই মধ্যে একটি কমিশন গঠন করেছি, যারা স্থানীয় সরকার ইস্যু নিয়ে কাজ করছে।
এদিন বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টার পর প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক এক শিক্ষার্থী স্নাতকের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারে প্রথম শ্রেণির চাকরিতে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়েছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব তাকে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেন।
১৮ নভেম্বর, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতেখারুল আলম মাসুদ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এই নিয়োগ দেওয়া হয়। ছয় মাসের জন্য তাকে আইসিটি সেন্টারের সহকারী প্রোগ্রামার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
নিয়োগপত্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের প্রকাশিত ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৮ নভেম্বর প্রশাসন মোমেন খন্দকার অপি নামের এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়। তবে সে সময় তার স্নাতক (সম্মান) চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়নি।
মোমেন খন্দকার ছিলেন ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী। নিয়োগ পাওয়ার প্রায় এক মাস পর, ১২ ডিসেম্বর তার চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়, যেখানে তিনি ৩.২০ সিজিপিএ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
অফিস আদেশে বলা হয়েছে, "মোমেন খন্দকারকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারে সহকারী প্রোগ্রামার হিসেবে ছয় (০৬) মাসের জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হলো, যার বেতন স্কেল ২২,০০০-৫৩,০৬০ টাকা। এই নিয়োগ কার্যকর হবে যোগদানের তারিখ থেকে।"
এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতেখারুল আলম মাসুদ বলেন, "আমি তখন রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্বে ছিলাম না। তবে সম্প্রতি আমি জানতে পেরেছি যে এই পদে নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়েছে।"
মোমেন খন্দকার গণমাধ্যমকে বলেন, "আমার স্নাতক পরীক্ষার পর আমি নভেম্বর মাসে নিয়োগ পাই এবং তখনই যোগদান করি। অফিসিয়াল ফলাফল প্রকাশ হতে দেরি হয়েছে। তবে আমি অনানুষ্ঠানিক কিছু নথি জমা দিয়েছিলাম।"
তবে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. রোকনুজ্জামান বলেন, "আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। আমার বিভাগের অনেক শিক্ষার্থী স্নাতক শেষ হওয়ার আগেই চাকরি পায়। আমি সরকারি চাকরির নিয়ম সম্পর্কে অবগত নই, তাই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।"
নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, "আমি এই বিষয়ে মাত্র জানতে পেরেছি। তাকে 'অ্যাপিয়ার্ড' হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল কি না, তা দেখতে হবে।"
একজন পরীক্ষার্থী চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের আগে প্রথম শ্রেণির চাকরিতে যোগ দিতে পারেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, "আমি এ ব্যাপারটি পুরোপুরি আইসিটি সেন্টারের পরিচালকের ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। আমি রেজিস্ট্রার ও আইসিটি সেন্টারের পরিচালকের সঙ্গে আলোচনা করব এবং বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।"
আইসিটি সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, "সেসময় আমাদের খুব জরুরি ভিত্তিতে একজন প্রোগ্রামারের প্রয়োজন ছিল, যাতে ভর্তি পরীক্ষা সঠিকভাবে পরিচালিত হয়। আগের পরিচালক বদল হওয়ায় তার সহযোগীরাও আমাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী ছিলেন না। তাই আমি উপাচার্যের কাছে একজন প্রোগ্রামারের দাবি জানাই এবং সর্বোত্তম যোগ্যতাসম্পন্ন ও অভিজ্ঞ একজনকে পাই।"
এই নিয়োগের বৈধতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "তিনি 'অ্যাপিয়ার্ড' দেখিয়ে চাকরি পেয়েছেন। আমার জানা মতে, শুধু কর্মচারী নয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক শিক্ষকও 'অ্যাপিয়ার্ড' দেখিয়ে চাকরি পেয়েছেন।"
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, "রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব একাডেমিকভাবে অত্যন্ত দক্ষ। তাই তার অধীনে কোনো অনিয়ম হওয়ার সুযোগ নেই। তিনি একাডেমিক বিষয়ে আপস করার মানুষ নন। যদি কোনো অনিয়ম ঘটে থাকে, তাহলে আমি আশা করি তিনি অবশ্যই ব্যবস্থা নেবেন।"
Comments