ঢাবি ছাত্রী নিপীড়নের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের ৪ দাবি

নারীর প্রতি সহিংসতার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ রোববার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষে অধ্যাপক গীতিআরা নাসরিনের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শিক্ষক নেটওয়ার্কের আয়োজনে ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, নর্থ সাউথ, আইইউবি, চট্টগ্রাম ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ ঢাবির অপরাজেয় বাংলার সমাবেশে নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নিপীড়নের প্রতিবাদে ৪ দফা দাবি উপস্থাপন করেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক জানায়, গত ৫ মার্চ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মচারী পোশাক বিষয়ে নসিহতের ছুতায় নৈতিক পুলিশগিরি ও যৌন নিপীড়ন করেন। এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর অভিযোগ করা হলে, অপরাধীকে ডেকে পাঠানো হলে তিনি প্রক্টর অফিসে তার কৃতকর্ম স্বীকার করেন।'

পরে ভুক্তভোগী নারীর শাহবাগ থানায় মামলা করলে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে শাহবাগ থানায় নেওয়া হয়।

'এই খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে একটি উগ্র সংগঠন মব তৈরি করে মধ্যরাত থেকে থানায় অবস্থান নেয়।  তাদের মূল্য উদ্দেশ্য ছিল ওই  চিহ্নিত অপরাধীকে ছাড়িয়ে আনা।' তারা থানায় ভেতরে আটক ব্যক্তির লাইভ ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করে যা সুস্পষ্ট বার্তা দেয় যে অপরাধী কৃতকর্মের জন্য বিন্দু পরিমাণে অনুশোচনা বোধ করে নাই এবং সেই ভিডিও বার্তায় তার মামলার বাদীর বিরুদ্ধে বাচিক নিপীড়ন আরও জঘন্য রূপে প্রতীয়মান হয়। এ ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানোর দায় শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং সব সংশ্লিষ্ট মহলের এবং সুষ্পষ্ট যৌন নিপীড়ন।'

শিক্ষক নেটওয়ার্ক জানায়, 'প্রবল মানসিক চাপ উপেক্ষা না করতে পেরে অবশেষে বাদী তার মামলা না চালানোর সিদ্ধান্ত নেন। এরপর  কয়েক ঘণ্টার কম সময়ে ওই ব্যক্তি জামিন পেয়ে যান। শুধু তাই নয় বিজয়ের বেশে তাকে ফুল দিয়ে বরণ করা হয়৷'

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক জানায়, 'এই ঘটনাটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার আরেকটি উদাহরণ হয়ে থাকবে। সে‌ইসঙ্গে সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করবে। একটি স্পর্শকাতর অভিযোগ আসার সঙ্গে সঙ্গে কেন মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হলো তা বোধগম্য না। অভিযুক্ত ব্যক্তি যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিরত তাই এ বিশ্ববিদ্যালয় যৌন নির্যাতন দমন সেলে বিষয়টি তদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া যেত। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় বিধি অনুযায়ী শাস্তির প্রক্রিয়ায় যাওয়া যেত যে প্রক্রিয়ার একটি স্বাভাবিক অংশ হচ্ছে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা। সে পথে না গিয়ে তড়িঘড়ি করে এই ধরনের মামলা, গ্রেপ্তার, চাকরি থেকে ছাঁটাই এগুলো অনেকের কাছেই অতিপ্রতিক্রিয়া মনে হয়েছে এবং যা এই প্রতিক্রিয়াশীল চক্রকে উসকে দিতে  প্রণোদনা হিসেবে  হিসেবে কাজ করেছে বলে আমরা মনে করি।'

৪ দাবি

প্রথমত থানা থেকে ভুক্তভোগীর ব্যক্তিগত তথ্য সোশাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়া ও অভিযুক্তের পুনরায় ভিকটিম নারীর সম্পর্কে অশালীন যৌন নিপীড়নমূলক বক্তব্য প্রচারে বাধা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলার দায়ে বিচার দাবি।

দ্বিতীয়ত, একদফা লাঞ্ছনার শিকার এই নারী শিক্ষার্থী যাদের দ্বারা অধিকতর বুলিং আর সাইবার আক্রমণের শিকার হলেন, ধর্ষণ-হত্যার হুমকি পেলেন তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

তৃতীয়ত, এই মব তৈরি করে নারী অমর্যাদাকে বীরত্ব বলে প্রতিষ্ঠিতকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিচার দাবি এবং চতুর্থত, যৌন নির্যাতন এবং নৈতিক পুলিশিংয়ের দায়ে অপরাধী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় তদন্ত করে তাকে বরখাস্ত করার দাবি জানানো হয়।

পরে ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ৯ দফা দাবি উত্থাপন করেন শিক্ষার্থী নওরীন সুলতানা তমা। এছাড়াও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা, কাজী মারুফুল ইসলাম, ফাহমিদুল হক, তাসনীম সিরাজ মাহবুবসহ অন্যান্যরা। সভাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন অধ্যাপক গীতিআরা নাসরীন।      

Comments