কর্ম সংকটে লালমনিরহাট-কুড়িগ্রামের কৃষি শ্রমিক

কর্ম সংকটের কারণে কৃষি শ্রমিকরা অলস সময় পার করছেন। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার
কর্ম সংকটের কারণে কৃষি শ্রমিকরা অলস সময় পার করছেন। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে কর্মহীন রয়েছেন লালমনিরহাট সদর উপজেলার ধরলা নদীপাড়ের বনগ্রাম এলাকার কৃষি শ্রমিক আফছার উদ্দিন (৬০)।

মাঠে কাজ না থাকায় তার সময় কাটছে অলস ভাবে। সামান্য কিছু জমানো টাকা দিয়ে কোনরকমে সংসার চালাচ্ছেন তিনি।

আফছার উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, চৈত্র মাস আসলে কৃষি শ্রমিকদের কর্ম সংকটে পড়তে হয়। এসময় ক্ষেতে তেমন কাজ থাকে না। কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত অধিকাংশ শ্রমিককে অলস সময় কাটাতে হয়।

তার গ্রামে প্রায় ১৫০ জন কৃষি শ্রমিক রয়েছেন বলে জানান আফছার। তাদের মধ্যে ২৫-৩০ জন এদিকসেদিক কাজ করে সামান্য উপার্জন করছেন। বৈশাখ মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এই পরিস্থিতি চলতে থাকবে বলে তিনি জানান। 

'চৈত্র মাসে কর্ম সংকট থাকায় আমাদেরকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে সংসার চালাতে হয়', যোগ করেন তিনি।

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গমারী উপজেলার দুধকুমার নদের পাড়ে চর সোনাহাটের কৃষি শ্রমিক সেকেন্দার আলী (৫৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, এখন ক্ষেতে ধান ও ভূট্টার চাষ হচ্ছে। সেখানে কৃষি শ্রমিকের কাজ করার তেমন সুযোগ নেই। 

বৈশাখ মাসের প্রথম সপ্তাহে ক্ষেত থেকে ধান ও ভুট্টা কাটা শুরু হলে কৃষি শ্রমিকরা আবারও কাজের সুযোগ পেতে পারেন। 

প্রতি বছরই চৈত্র মাস তাদের জন্য কষ্ট বয়ে আনে উল্লেখ করে সেকান্দার আলী বলেন, 'আগাম মজুরি নিয়ে আমাদেরকে সংসার চালাতে হচ্ছে'।

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার তিস্তা নদীপাড়ের চর গোবর্ধান গ্রামের কৃষি শ্রমিক আঁখের আলী (৫০) ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি গত বছরের চৈত্র মাসে সরকারের ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পের অধীনে মাটি কাটার কাজ করেছিলেন।

সে সময় প্রতিদিন কাজ করে ৪০০ টাকা মজুরি পেয়েছিলেন। কিন্তু এ বছর এ ধরনের কোনো প্রকল্পের বিষয়ে সাড়াশব্দ নেই। যার ফলে তারা চড়া সুদে ঋণ নিয়ে সংসার চালাতে বাধ্য হচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন আঁখের আলী। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে প্রায় তিন লাখ কৃষি শ্রমিক রয়েছেন। তাদের মধ্যে অধিকাংশ শ্রমিক ভূমিহীন। প্রতি বছরই চৈত্র মাসে কৃষি শ্রমিকদের কর্ম সংকটে পড়তে হয়।

তবে চৈত্র মাসের শেষের দিকে কৃষি মাঠে কাজের সৃষ্টি হয়।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস (ডিআরআরও) সূত্র জানায়,  গত বছর কর্মসৃজন প্রকল্পের অধীনে চৈত্র মাসে কুড়িগ্রামে অতিদরিত্র পরিবারের ২৭ হাজার ৩০০ জন ও লালমনিরহাটে আট হাজার ৩৬৮ জন কর্মসংস্থান পেয়েছিলেন।

এ প্রকল্পের জন্য কুড়িগ্রামে ও লালমনিরহাটে যথাক্রমে ৪৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ও ১৩ কোটি ৩৮ লাখ ৮৮ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল।

প্রত্যেক শ্রমিক ৪০ দিন করে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। দৈনিক মজুরির হার ছিল ৪০০ টাকা।

কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (ডিআরআরও) আব্দুল মতিন ডেইলি স্টারকে বলেন, ' (এই বছর) অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন প্রকল্পের বরাদ্দ এখনো পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।'

'এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ পাওয়া গেলে তা কৃষি শ্রমিকদের উপকারে আসবে', যোগ করেন তিনি। 

Comments

The Daily Star  | English

Exports stuck in EU, US orbit

For years, policymakers and businesses have talked about diversifying the country’s export basket and destinations. Yet little has changed. Despite generous government incentives, shipments rely heavily on a few products and markets.

1h ago